কলকাতা, 17 ডিসেম্বর: প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ অন্যান্য পাঁচ জনের জামিনের আবেদনের শুনানিতে তাঁরা কতটা প্রভাবশালী ফের সেই তত্ত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করল সিবিআই ৷ এই পরিস্থিতিতে তাঁদের জামিন দিলে সাক্ষীদের প্রভাবিত করার পাশাপাশি তথ্য প্রমাণ নষ্ট হতে পারে বলে আশঙ্কা কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার ৷
মঙ্গলবার সিবিআই আদালতে জানায়, পার্থ-সহ 5 জনের জামিন মঞ্জুর করলে নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত গতিপথ হারাবে ৷ এদিন মামলার শুনানি শেষ হয়েছে ৷ তবে রায় ঘোষণা স্থগিত রেখেছে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর সিঙ্গল বেঞ্চ ৷
সিবিআই-এর তরফে আইনজীবী ধীরজ ত্রিবেদী আদালতে বলেন, "2022 সালের সেপ্টেম্বরে সিবিআই রাজ্যের কাছে অনুমতি চেয়েছিল, যাতে নিয়োগ দুর্নীতিতে নিম্ন আদালতে চার্জ ফ্রেম করে তাঁদের বিরুদ্ধে বিচারপর্ব শুরু করা যায় ৷ কিন্তু মুখ্যসচিব সেই অনুমতি দেননি ৷ রাজ্য দিনের পর দিন এই ব্যাপারে চুপ থেকেছে ৷ বারবার বলা হচ্ছে, তাঁরা প্রত্যেকে দু'আড়াই বছর জেল খেটেছেন ৷ ফলে তাঁদের জেলে থাকাটা তদন্তের নামে স্বাভাবিক ন্যায়ের পরিপন্থী হচ্ছে ৷ রাজ্য যদি অনুমতি দিত, তাহলে এই প্রশ্নই উঠত না ৷"
আইনজীবী ধীরজের আরও দাবি, অভিযুক্তদের জামিন দিলে তথ্য-প্রমাণ লোপাট হতে পারে ৷ তাঁরা সাক্ষীদের ভয় দেখাতে পারেন ৷ শান্তিপ্রসাদ সিনহা এবং অশোক সাহা'রা কোন কোন স্কুলে প্রার্থীরা চাকরি করবেন, সেটা তালিকা তৈরি করে স্থির করতেন ৷ ওই তালিকায় যাঁরা টাকা দিয়েছেন, তাঁরাই নিয়োগ পেয়েছেন ৷ ওএমআর শিট বিকৃত করে ওই লিস্ট তৈরি হয়েছে ৷ ওএমআর শিট টেম্পার করে ও নথি নষ্ট করার মাধ্যমে প্রথম অপরাধ হয় ৷ এখান থেকেই বোঝা যায় তারা ঠিক কতটা প্রভাবশালী।
তিনি জানান, মেধা তালিকায় সময়সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার পরে নিয়োগ করা হয়েছে ৷ এটি দ্বিতীয় অপরাধ। এই তালিকাটি শিক্ষামন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয় ৷ তদন্তে এমনটাই উঠে এসেছে ৷ এটা গভীর ষড়যন্ত্র ৷ সমস্ত ওএমআর শিট নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে ৷ নাইসা নামক সংস্থার যে কর্মচারীর থেকে হার্ডডিস্ক উদ্ধার হয়েছিল, তিনিও স্থায়ী কর্মী নন ৷ ফলে এই পরিস্থিতি সিবিআই-এর পক্ষে এমনিতেই তথ্য প্রমাণ জোগাড় করা খুবই কঠিন কাজ ৷ জামিন দিলে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে।
অন্যদিকে, এদিন আদালতে পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ অন্যদের আইনজীবীরা তাঁদের সওয়ালে সিবিআইয়ের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করেন ৷ পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আইনজীবী মিলন মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, "2019 সালে নলিনী চিদাম্বরমের মামলা এখনও পর্যন্ত শেষ করতে পারেনি সিবিআই ৷ তারা এখনও বলছে তদন্ত চলছে ৷ সুতরাং সিবিআই-এর তদন্ত নিয়ে সকলের প্রশ্ন রয়ছে ৷ পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে প্রায় আড়াই বছর ধরে জেলে রাখা হয়েছে ৷ এখনও কি তদন্ত চলছে ?" আইনজীবী শেখর বসু বলেন, "সিবিআই বলছে তদন্ত এখনও চলছে ৷ কিন্তু তদন্ত চলছে এমন কোনও নথি তারা দেখিয়েছে কি ? এদের অকারণ আটকে রাখা হয়েছে ।"
উল্লেখ্য বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি অপূর্ব সিনহা রায়ের ডিভিশন বেঞ্চ এই পাঁচ জনের জামিনের বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করায় মামলাটি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর বিষয় বেঞ্চে পাঠানো হয় ৷ সেই বেঞ্চে অভিযুক্ত পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুবীরেশ ভট্টাচার্য, শান্তি প্রসাদ সিনহা, অশোক কুমার সাহা, কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ের জামিনের আবেদনের শুনানি এদিন শেষ হল ৷ তবে আদালত রায় ঘোষণা স্থগিত রেখেছে ৷ গত সপ্তাহে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সুপ্রিম কোর্টে ইডির মামলায় শর্তসাপেক্ষে জামিন পেয়েছেন ৷