কলকাতা, 12 মার্চ:প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার আগেই বিয়ে হয়ে যাচ্ছে রাজ্যের বহু মেয়ের ৷ এই নিয়ে এবার উদ্বেগ প্রকাশ কলকাতা হাইকোর্ট । বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন ও বিচারপতি সুপ্রতীম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, পরিবারগুলি যাতে এই বিষয়ে উৎসাহ না-দেয়, সে ব্যাপারে সচেতনতা তৈরি করতে হবে ৷ একটি মামলার নির্দেশে কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়েছে, বিশেষত সমাজের আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মধ্যে এই রীতি (অ-প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় বিয়ে) এখনও চলছে ৷ যাতে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না বা এই বিষয়ে যথেষ্ট সচেতনতা সৃষ্টি করা যাচ্ছে না ।
অভিযোগ, মুর্শিদাবাদের ফালাকাটায় একটি 20 বছরের ছেলে জোর করে এক নাবালিকাকে বিয়ে করে বলে অভিযোগ । ঘটনায় গত বছর ডিসেম্বর মাসে ছেলেটির বিরুদ্ধে ফালাকাটা থানায় অভিযোগ দায়ের হয় । তারপরই গ্রেফতারের আশঙ্কায় কলকাতা হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন জানায় তার পরিবার । অন্যদিকে, মেয়েটি গোপন জবানবন্দি দিয়ে জানিয়েছে, তাকে জোর করে বিয়ে করতে বাধ্য করা হয়েছে । ডিভিশন বেঞ্চ এদিন সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছে ।
এদিনের মামলার শুনানিতে ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, 2006 সালে বাল্যবিবাহ বিরোধী আইন তৈরি হলেও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার সমীক্ষা থেকে জানা যাচ্ছে, রাজ্যে এখনও অ-প্রাপ্তবয়স্কদের বিবাহের ঘটনা ঘটছে । এক্ষেত্রে পরিবারের প্রাপ্ত বয়স্কদের উৎসাহেই এই ঘটনা ঘটছে । আইনত বাল্য বিবাহের উপর যে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা সম্পর্কে তারা ওয়াকিবহালই নয় ।
আদালত উদ্বেগ প্রকাশ করে উল্লেখ করেছে, একটি মেয়ে যে শারীরিক বা মানসিকভাবে এখনও কাজের জন্য প্রস্তত হয়ে ওঠেনি তাকে সেই কাজে বাধ্য করা হচ্ছে । মেয়েটি এখনও বাচ্চা জন্ম দেওয়ার মতো বয়সে এসে পৌঁছয়নি । সামাজিক ক্ষেত্রেও এর প্রভাব রয়েছে । শুধু মেয়েটির শারীরিক সমস্যা তৈরি হতে পারে এমন নয় । এর গভীর সামাজিক প্রভাবও রয়েছে । প্রাপ্ত-বয়স্কদের মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে । তার জন্য সচেতনতা প্রয়োজন । ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশের কপি রাজ্যের মহিলা ও শিশু দফতরকে পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছেন যাতে তারা এই বিষয়ে জনসচেতনতামূলক প্রচারের ব্যবস্থা করেন ।
আরও পড়ুন:
- রাজ্যের সংশোধনাগারের অবস্থা কতটা খারাপ, সরজমিনে দেখতে যেতে চান বিচারপতি
- গার্হস্থ্য হিংসার আইন মেনে মেয়েদের ভরণপোষণ দেওয়ার নির্দেশ আদালতের
- অচেনা মহিলাকে 'ডার্লিং' বললে তা ফৌজদারি অপরাধ, যৌন হেনস্থা: কলকাতা হাইকোর্ট