বোলপুর, 1 অগস্ট: এবার 'ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ' শান্তিনিকেতনের বাফার জোনে স্বয়ং বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত কর্মসচিবের বাড়ি রয়েছে বলে অভিযোগ উঠল । এই মর্মে বোলপুরের 70 জন ব্যবসায়ী বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যর কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ৷ আরও গুরুত্বর অভিযোগ, ভারপ্রাপ্ত কর্মসচিব তথা সম্পত্তি আধিকারিক অশোক মাহাতর বাড়িতে বিশ্বভারতীর জমি ঢুকে আছে ৷ যা নিয়ে চরম বিতর্ক তৈরি হয়েছে ৷
প্রসঙ্গত, সদ্য ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ বাফার জোনে কবিগুরুর মূর্তি বসানো নিয়ে অভিযোগ উঠেছিল ৷ সেই রেশ ধরেই এই ধরনের একাধিক অভিযোগ সামনে আসছে ৷ যদিও, এ প্রসঙ্গে বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অরবিন্দ মণ্ডল বলেন, "বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি ৷ পরবর্তীতে আমাদের জনসংযোগ আধিকারিক যা বলার বলবেন ।"
2023 সালের 17 সেপ্টেম্বর ইউনেস্কো গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতনকে 'ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ' তকমা দিয়েছে ৷ এটি বিশ্বের একমাত্র চলমান বিশ্ববিদ্যালয় যা বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত । তাই হেরিটেজ তকমা ধরে রাখতে একাধিক পদক্ষেপ বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে যে করতেই হবে তা বলাইবাহুল্য ।
সদ্য ইউনেস্কোর সদস্যরা বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষর সঙ্গে যৌথভাবে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের সীমানা চিহ্নিতকরণের কাজ শুরু করেছে ৷
উপাচার্যের কাছে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের (নিজস্ব চিত্র) সেই সময় অভিযোগ ওঠে, শান্তিনিকেতনের কবিগুরু হস্তশিল্প মার্কেটে একটি প্রায় 15 ফুটের রবীন্দ্রমূর্তি বসাচ্ছিল বোলপুর পৌরসভা । যা ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের বাফার জোনের মাত্র 100 মিটারের মধ্যে ৷ বিশ্বভারতীর আপত্তির পরেই বন্ধ হয়ে যায় রাজ্যের ক্ষুদ্র-মাঝারি ও কুটির শিল্পমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহর মূর্তি উন্মোচনের অনুষ্ঠান ।
তবে এই ঘটনার পর উঠে আসে বাফার জোনে নির্মাণের একাধিক অভিযোগ । শান্তিনিকেতনের ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ বাফার জোনের মধ্যে বাড়ি খোদ বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত কর্মসচিব তথা সম্পত্তি আধিকারিক অশোক মাহাতর ৷ তাঁর বাড়িতে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি ঢুকে রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে ৷ এই মর্মে বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অরবিন্দ মণ্ডলকে লিখিত অভিযোগ করেছেন কবিগুরু হস্তশিল্প মার্কেটের প্রায় 70 জন ব্যবসায়ী ৷
জমির দাগ ও খতিয়ান নম্বর তুলে ধরে বিষয়টির তদন্তের আর্জি জানানো হয়েছে ৷ পাশাপাশি, বিশ্ববিদ্যালয় লাগোয়া একটি বেসরকারি বহুতল আবাসন নির্মাণের ক্ষেত্রে নো অবজেকশন (NOC) দেওয়া হয়েছে বিশ্বভারতীর তরফে । অভিযোগ, তাতেও নাকি স্বাক্ষর আছে এই ভারপ্রাপ্ত কর্মসচিব অশোক মাহাতর ৷ কীভাবে বাফার জোনে বহুতল নির্মাণের ক্ষেত্রে ছাড়পত্র দেওয়া হল, তা নিয়েও তদন্তের আর্জি জানিয়েছেন শান্তিনিকেতনের ব্যবসায়ীরা ৷
ব্যবসায়ীদের মধ্যে আমিনূল হুদা বলেন, "ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ শান্তিনিকেতনের বাফার জোনে বিশ্বভারতীর রেজিস্ট্রার অশোক মাহাতর বাড়ি ৷ এই অন্যায়ের তদন্ত চেয়েছি । শুধু তাই নয়, তাঁর বাড়িতে বিশ্বভারতীর জমি ঢুকে আছে ৷ সেটারও তদন্ত চাই ৷ তিনি অমর্ত্য সেনকে জমি কব্জাকারী বলেছিলেন, এখন তিনি নিজেই বিশ্বভারতীর জমি কব্জা করে বসে আছেন ।"
উল্লেখ্য, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন তাঁর 'প্রতীচী' বাড়িতে বিশ্বভারতীর জমি দখল করে রেখেছেন বলে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ অভিযোগ তুলেছিল ৷ সেই অভিযোগের একাধিক নোটিশে কখনও বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত কর্মসচিব হিসাবে বা কখনও সম্পত্তি আধিকারিক হিসাবে স্বাক্ষর ছিল এই অশোক মাহাতর ৷ তাই এবার তাঁর বাড়িতেই বিশ্বভারতীর জমি ঢুকে থাকায় চরম বিতর্ক হয়েছে ৷ যদিও, পরবর্তীতে সিউড়ি জেলা আদালত তার রায়ে জানিয়ে দেয়, অমর্ত্য সেন বিশ্বভারতীর কোনও জমি দখল করে রাখেননি ৷