কলকাতা, 8 জুলাই: আশার সূর্যোদয়, আশার অস্ত একই সময়ে। আভা খাটুয়ার জীবনটাই এমন। সদ্য প্যারিস অলিম্পিক্সের ছাড়পত্র হাতে এসেছে বাঙালি অ্যাথলিটের। কিন্তু তাঁকে বাংলার অ্যাথলিট বলা যাচ্ছে না যেহেতু, তিনি বর্তমানে মহারাষ্ট্রের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন। মেদিনীপুরের কৃষক পরিবারের মেয়ে মহারাষ্ট্রের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন কেন? সেখানেও আছে এক বিতর্কিত কাহিনী।
সাফল্যের 'আভা' ছড়াতে প্যারিসে বাঙালি শটপাটার (ইটিভি ভারত) তবু প্যারিস অলিম্পিক্সে বাঙালির প্রতিনিধিত্ব এখন আভা খাটুয়ার হাতে। সদ্য অলিম্পিক্সের ছাড়পত্র হাতে এসেছে। স্বপ্নপূরণে চূড়ান্ত ধাপে এসে আভার গলায় বাধ্যবাধকতার শিকল। যা তিনি ইচ্ছে করলেও ছিঁড়ে ফেলতে পারছেন না। অলিম্পিক্সের ছাড়পত্র হাতে পেয়েও বাংলা ছাড়ার আক্ষেপ রয়েছে কি না, এই প্রশ্ন যেন আভা খাটুয়ার জমে থাকা ক্ষত ফের উস্কে দিল।
- "আক্ষেপ মানে কষ্ট জ্বালা যন্ত্রণা। কী বলব। কেন গিয়েছি তা নিয়ে কথা বলতে চাই না।" আক্ষেপের সুর নতুন অলিম্পিয়ানের গলায়।
- "আপনার (ইটিভি ভারতের প্রতিনিধি) আক্ষেপের কথা অজানা নয়," কথাটা যেন আরও উস্কে দিল আভার ক্ষত।
- "আমার কিছু করার নেই। পরিস্থিতি এমন তৈরি হয়েছিল যে আমাকে মহারাষ্ট্রে যেতে হয়েছে। আমি মন থেকে এখনও যেতে চাই না। আমি ওখানে বাধ্য হচ্ছি থাকতে," বলে ওঠেন আভা।
তিনটে বছর ট্র্যাকের বাইরে থাকতে হয়েছিল। বহু অনুরোধেও বাংলার কোনও ক্লাব এবং সংস্থা আভা খাটুয়াকে নূন্যতম প্র্যাকটিসের সুযোগ দেয়নি। এমনকী অ্যাথলেটিক্সে যে কয়টি ক্লাব কলকাতা ময়দানে বিখ্যাত বা বড় তারাও পাশে দাঁড়ায়নি।
- "আমি ওই তিনটে বছর মনে করতে চাই না। আমার চোট ছিল। আমাকে কেউ বাধ্য করেনি বাংলা ছাড়তে। কেউ কখনও মানাও করেননি," পুরনো বিতর্কিত অধ্যায়ের পাতাগুলো দ্রুত উলটে যেতে চাইলেন মেদিনীপুরের এই মেয়ে ৷
আভার জীবনে 'আশার সূর্যোদয় আশার অস্ত' একইসঙ্গে। একথা মিথ্যে নয়। চরম পারিবারিক বিপর্যয়ের মধ্যে আভা। পরিবারের পাশে দাঁড়াতে তড়িঘড়ি ছুটে এসেছেন। নিশ্চুপে...
- "ভীষণ। ভয়ঙ্কর বিপদ। উভয় সংকট আমার," বলে ওঠেন, বাঙালি তারকা শটপাটার।
আপাতত ধাপে ধাপে এগনোর পরিকল্পনা সাজিয়েছেন।
- বলছেন, "বাড়িটাকে সামলে এরপর আমি যাব। মানসিকভাবে আমি প্রস্তুত। আমাকে ভালো করতে হবে। পারিবারিক ব্যস্ততার জন্য শারীরিকভাবে সামান্য দুর্বলতা রয়েছে। তবে পরিবার বাবা-মা'র প্রতি কর্তব্য তো থাকে। আমার উঠে আসার পিছনে তাঁদের বড় অবদান। তাঁদের দেখা তো কর্তব্য।"
ইতিমধ্যে ফেডারেশনের তরফে ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পোল্যান্ড কিংবা ইংল্যান্ডে পাঠানোর একটা চেষ্টা চলছে। ভিসার সমস্যাও রয়েছে ৷ তবে তা দুই-চারদিনের মধ্যে মিটে যাওয়ার কথা। তারপর আভারা হয়তো যাবেন। 18.80 মিটার ছিল অলিম্পিকে যোগদানের ছাড়পত্র। কিন্তু আভার সেরা থ্রো 18.41 মিটার। এই থ্রো'র কারণে আভা এখন বিশ্বের 23 নম্বরে। ক্রমপর্যায়ের এই উত্থানেই প্যারিসের ছাড়পত্র এসেছে মেদিনীপুরের তরুণীর হাতে। প্রস্তুতি দ্রুতই শুরু করবেন। তবে সেরা ছন্দে ধাপে পৌঁছতে যান। যাতে প্যারিসে নিজের সেরাটা নিঙড়ে দিতে পারেন।
- আভা বলছেন, "আমি এখন 23 নম্বরে। ক্রমপর্যায়ে চলে এসেছি। পদক ভাবনার চাপের থেকে নিজের সেরা থ্রো'কে টপকে যাওয়াই লক্ষ্য। তবে 19 মিটার থ্রো-করার একটা লক্ষ্য অবশ্যই সামনে রাখছি।
অলিম্পিক্সের মতো বড় আসরে নামার আগে মানসিক চাপ সামলাতে অনেকেই মনোবিদের শরণাপন্ন হন। আভাও কি প্যারিস যাওয়ার আগে কোনও মনোবিদের শরণাপন্ন হবেন?
- "কত প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে, তা আপনিও (ইটিভি ভারতের প্রতিনিধি) জানেন ৷ জীবনের প্রতি মুহূর্তে শিক্ষাগুলোই আমাকে মানসিকভাবে শক্ত করে দিয়েছে। বড় আসরে ভালো কিছু করতে তা আমাকে অনুপ্রেরণা জোগায়। তাই মনোবিদ আমার দরকার হয় না," চোয়াল শক্ত করে সোজাসাপটা উত্তর আভার ৷
একসময় হেপ্টাথেলন করতেন। সেই সময় স্বপ্না বর্মনের সঙ্গে এক সঙ্গে উচ্চারিত হত আভা খাটুয়ার নাম। সেখান থেকে শটপাটার হয়ে অলিম্পিক যাত্রার যোগ্যতা অর্জন। কেন ইভেন্ট বদল?
- "হাইজাম্পটা কিছুতেই হল না যে। তাই শটপাটে চলে এসেছিলাম," অকপট মেদিনীপুরের কৃষক পরিবারের তরুণী।
বাবা দাদা চাষ-আবাদ করেন। রেহেন ক্রুজারকে আদর্শ করে সামনে এগনোর কথা বলেন। এছাড়া নিজেকেই নিজের কাছে আদর্শ মানেন আভা। সাই এবং অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া আভাকে আজকের আভা খাটুয়ায় পরিণত করার পিছনে রয়েছে। তাই ব্যক্তিগত স্পনসর না-থাকলেও দ্রারিদ্রের লক্ষণরেখা টপকে স্বপ্নপূরণের দৌড়ে অংশ নিতে পারতেন না আভা খাটুয়া। বর্তমানে কাস্টমসে চাকরি করেন। সেখান থেকেও সাহায্য পান। ব্যক্তিগত দুঃখ-কষ্ট অবিচারের কথা সরিয়ে বাঙালি আভা খাটুয়া প্যারিস যাচ্ছেন বাংলা নয়, মহারাষ্ট্র থেকে।