চুঁচুড়া, 2 সেপ্টেম্বর: তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে অনাস্থা প্রস্তাব জমা পড়ল হুগলি-চুঁচুড়া পুরসভায় ৷ ওই পুরসভার ক্ষমতায় রয়েছে তৃণমূল ৷ অথচ পুরসভার 19 জন তৃণমূল কাউন্সিলর অনাস্থা প্রস্তাব দিয়েছেন চেয়ারম্যান অমিত রায়ের বিরুদ্ধে ৷
যদিও অনাস্থার পক্ষে কাউন্সিলররা কেউই কিছু মুখ খোলেননি । হুগলি-চুঁচুড়া পুরসভার চেয়ারম্যান অমিত রায়ের দাবি, পুরসভায় আস্থা নেই বলে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে । এই অনাস্থার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন তৃণমূলের এক কাউন্সিলর ঝন্টু বিশ্বাস । তিনি সরাসরি চুঁচুড়ার বিধায়ক অসিত মজুমদারের দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছেন । এই বিষয়ে অবশ্য বিধায়ক কিছু বলতে চাননি ।
পুর শ্রমিকদের বেতন সময়ে না দেওয়া, শহরের বেহাল রাস্তা, নাগরিক পরিষেবা দিতে না পারার অভিযোগ তুলেই হুগলি-চুঁচুড়া পুরসভার 19 জন কাউন্সিলর চুঁচুড়ার মহকুমাশাসক স্মিতা সান্যাল শুক্লার কাছে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেন ৷ অনাস্থা নিয়ে আসা কাউন্সিলরদের মধ্যে রয়েছেন, তৃণমূলের প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা 29 নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর গৌরিকান্ত মুখোপাধ্যায়-সহ বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর ৷ তিনি অবশ্য এই নিয়ে কিছু বলতে চাননি ৷
এই নিয়ে চেয়ারম্যান অমিত রায় বলেন, ‘‘আমার কাছে চিঠি দিয়েছে আস্থা নেই বলে । আড়াই বছর ধরেই ওরা এরকম করছে । পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে প্রথম গিয়েছিল ৷ পার্থ চট্টোপাধ্যায় এখন জেলখানায় । আমাদের ভোটাভুটি করে চেয়ারম্যান নির্বাচন হয়নি । মুখ্যমন্ত্রী এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নির্বাচন করে দিয়েছিলেন । তাঁরা যদি বলেন আমি সরে যাব। এদের কথায় যাব না ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘এরা নিজেরাও জানে যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন কীভাবে লোক ঢুকিয়েছে পুরসভায় । কাজ না করে পয়সা নিয়েছে । আমরা কাউকেই বলিনি যে ছড়িয়ে দেব । একজনকে সিফ্ট চেঞ্জ করা হয়েছে ৷ তিনি সকালে দোকানদারি করেন, আবার পুরসভায় কাজ করেন । আসলে প্রত্যেকেই আলাদা আলাদা করে চেয়ারম্যান করার টোপ দিয়েছে আমাদের এখানকার এক নেতা । তাঁর নিজের বিধানসভায় সাড়ে আট হাজার ভোটে হেরেছেন । এসব করে কিছু হবে না, দলকে জানাক ।’’
হুগলি চুঁচুড়া শহরের তৃণমূল সভাপতি সঞ্জীব মিত্র বলেন, ‘‘পুরসভা পরিচালনা নিয়ে নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ হচ্ছে । যার নেতৃত্বে বা অঙ্গুলিহেলনে হয়ে থাকুক, এটা নিন্দনীয় । বিষয়টি রাজ্যস্তরে পাঠাব ।’’
উল্লেখ্য, 2022 সালে হুগলি চুঁচুড়া পুরসভায় ভোট হয়৷ 30টি আসনের মধ্যে একটিতে সিপিএম ও 29টিতে তৃণমূল কংগ্রেস জয়ী হয় ৷ পুরভোটের পর তৃণমূল নেতৃত্ব চুঁচুড়ার বিধায়ক অসিত মজুমদারের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত প্রাক্তন চেয়ারম্যান গৌরীকান্ত মুখোপাধ্যায়কে সরিয়ে অমিত রায়কে দায়িত্ব দেয় ।
অভিযোগ, এরপরই দ্বন্দ্ব প্রকট হয়। অমিত রায়কে চেয়ারম্যান করায় চুঁচুড়া পৌরসভার তৃণমূল কাউন্সিলরদের একাংশ মেনে নিতে পারেননি । তৃণমূলের পুরবোর্ডের মধ্যে মতান্তর লেগেই থাকে।প্রকাশ্যে আসে চেয়ারম্যান অমিত রায় ও বিধায়ক অসিত মজুমদারের দ্বন্দ্ব ।
সেটাই তীব্র আকার ধারণ করল এই অনাস্থা প্রস্তাবের জেরে ৷ এই নিয়ে বিজেপি তৃণমূলকে কটাক্ষ করেছে ৷ বিজেপি হুগলি সাধারণ সম্পাদক সুরেশ সাউ বলেন, ‘‘এটা সম্পূর্ণ তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল । বিধায়কের সঙ্গে চেয়ারম্যানের যে বনিবনা নেই, এর আগেও আমরা দেখেছি একাধিক কাউন্সিলরও এই নিয়ে বলেছে । এক পক্ষ আরেক পক্ষর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনছে । কারও পকেটে হয়তো কাটমানি কম যাচ্ছে, তার জন্য এই প্রস্তাব যাচ্ছে ।’’