কলকাতা, 4 জুন: 'দুর্নীতি' হাতিয়ারে শান দিয়ে রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে লোকসভা নির্বাচনের লড়াইয়ে নেমেছিল বিজেপি ৷ দুর্নীতি ইস্যুতেই আদালতের একের পর এক রায়ে সরকারের অস্বস্তি বাড়ায় 2024 সালেই বাংলা দখলের ট্রেলার দেখানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন শুভেন্দু অধিকারীরা ৷ তবে সেই প্রচেষ্টাই ব্যুমেরাং হয়ে গেল ৷ আদালতের রায়ে যাঁরা চাকরিহারা, তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে এক ধাক্কায় অনেকগুলো ভোট কুড়িয়ে কাছিয়ে নিজেদের ঝুলিতে পুরে নিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ শুধু তাই নয়, এবারের ভোটে তাঁদের জয়ের আরও দুই স্তম্ভ লক্ষ্মীর ভাণ্ডার এবং আবাস-যোজনা ও 100 দিনের কাজের টাকা নিয়ে 'কেন্দ্রীয় বঞ্চনা'৷
লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে কেল্লা-ফতে: গত বিধানসভা ভোটে কামাল করে দিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প ৷ বাড়ির মা-বোনেদের প্রতি মাসে 500 টাকা করে হাতখরচ দিয়ে রাজ্যের মহিলা ভোটারদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিল 'মমতাময়ী' সরকার ৷ এর জন্য শুনতে হয়েছে নানা কটাক্ষ ৷ মমতার 'অনুদানের রাজনীতি'কে বারবার নিন্দা করলেও ভোটের মুখে মহিলা ভোটব্যাংকের কথা ভেবে মাসিক 3000 টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিতে দেখা গিয়েছে বিজেপিকে ৷ লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ধাঁচে তাঁরা বঙ্গবাসীকে 'অন্নপূর্ণার ভাণ্ডার'-এর স্বপ্ন দেখিয়েছে ৷ মমতার প্রকল্প ধার করেই 'লাডলি বহেনা' প্রকল্প ইতিমধ্যেই মধ্যপ্রদেশে সুফল দিয়েছে বিজেপিকে ৷ তবে বাংলার প্রতিটি মহিলাকে মাসে 3 হাজার টাকা দেওয়ার জন্য এত পরিমাণ টাকা রাজকোষের কোথা থেকে আসবে, তার হিসেব দিতে পারেনি গেরুয়া শিবির ৷
অপরদিকে, বিধানসভা ভোটের আগের লক্ষ্মীর ভাণ্ডার হাতিয়ারকেই লোকসভার আগে আরও ধারালো করেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তিনি ভোটের আগে ঘোষণা করেন যে, রাজ্যের মহিলারা ভোটের পর থেকেই লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে মাসে আর 500 টাকা নয়, পাবেন 1000 টাকা করে ৷ আর তফশিলি জাতি ও উপজাতির মহিলারা হাজারের পরিবর্তে পাবেন মাসিক 1200 টাকা ৷ তাঁরাই আবার বৃদ্ধ বয়সে সরাসরি বার্ধক্যভাতার জন্য নির্বাচিত হবেন ৷ ভোটের আগে মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ের এই তাস ট্রাম্প কার্ডের মতো কাজ করেছে ভোটবাক্সে ৷
হাতিয়ার 'কেন্দ্রীয় বঞ্চনা': প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও বঙ্গবাসীর ঘাস-ফুলে আস্থা রাখার আরও এক কারণ 100 দিনের কাজ ও আবাস যোজনার টাকা না-পাওয়া ৷ বাংলাকে শাস্তি দিতে বিভিন্ন বাংলার প্রকল্পের টাকা কেন্দ্রীয় সরকার ইচ্ছে করে আটকে রেখেছে বলে বারবার তোপ দেগেছে তৃণমূল কংগ্রেস ৷ এর জন্য আলাদা আলাদা করে তৈরি হয়েছে কর্মসূচি ৷ 'কেন্দ্রীয় বঞ্চনা'র অভিযোগ এনে বাংলার রাজভবন ও বিধানসভা থেকে শুরু করে দিল্লির মসনদ পর্যন্ত তৃণমূল কংগ্রেসের আন্দোলন বাংলার নিম্নবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষকে কাছে টানতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে ৷
- নির্বাচনের ফলাফল সংক্রান্ত আরও খবর জানুন
কর্মশ্রীতে রুটি-রুজির স্বপ্ন ফেরি: শুধু আন্দোলনই নয়, 100 দিনের কাজের ধাঁচে রাজ্য সরকারের 50 দিনের কাজের কর্মশ্রী প্রকল্প ঘোষণা রাজ্যের খেটে খাওয়া মানুষকে রুটি-রুজির স্বপ্ন দেখিয়েছে ৷ কেন্দ্রের মুখাপেক্ষী না-হয়ে জব কার্ডের মাধ্যমে বাংলার বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ তার পাশাপাশি 100 দিনের কাজের যে 3700 কোটি টাকা কেন্দ্র দেয়নি, প্রতিশ্রুতি মতো সেই টাকাও রাজ্য সরকার মিটিয়ে দেওয়া শুরু করেছে ৷ আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই উদ্যোগের প্রত্যক্ষ প্রতিফলন দেখা গিয়েছে ভোটবাক্সে ৷