হুগলি, 8 মার্চ: বামদুর্গ হিসেবে পরিচিত হুগলিতে 2009 সালে ফাটল ধরিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের রত্না দে নাগ ৷ টানা 20 বছরের সাংসদ সিপিএমের রূপচাঁদ পালকে হারিয়ে তিনি লোকসভার সদস্য হয়েছিলেন ৷ পরপর দু’বার ওই কেন্দ্রে সাংসদ থাকার পর বিজেপির লকেট চট্টোপাধ্যায়ের কাছে হেরে যান তিনি ৷ 70 হাজারেরও বেশি ভোটে তাঁকে হারিয়ে 2019 সালে প্রথমবার সাংসদ হন এই বিজেপি নেত্রী ৷
তারপর পেরিয়ে গিয়েছে পাঁচ বছর ৷ চলে এসেছে আরও একটা লোকসভা নির্বাচন ৷ এবারও হুগলি লোকসভা কেন্দ্রে লকেটের উপরই ভরসা রেখেছেন নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহরা ৷ নামও ঘোষণা হয়ে গিয়েছে ৷ এই পরিস্থিতিতে গত পাঁচ বছরে সাংসদ হিসেবে লকেটের পারফরম্যান্স নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে ৷ সকলেই জানতে উৎসুক যে কী আছে লকেট চট্টোপাধ্যায়ের রিপোর্ট কার্ড-এ ?
সামগ্রিকভাবে সাংসদ উন্নয়ন তহবিল খরচের নিরিখে খুব একটা পিছিয়ে নেই এই বিজেপি সাংসদ ৷ গত পাঁচ বছরে (কোভিড অতিমারীর জন্য 2020-21 অর্থবর্ষে সাংসদরা তাঁদের তহবিলে কোনও টাকা পাননি তিনি) সব মিলিয়ে 17 কোটি টাকা ওই তহবিল থেকে খরচ করেছেন লকেট ৷ এর মধ্যে 2019-20, 2022-23 ও 2023-24 অর্থবর্ষে তিনি পাঁচ কোটি টাকা করে খরচ করেছেন ৷ 2021-22 আর্থিক বছরে তাঁর সাংসদ উন্নয়ন তহবিল থেকে খরচ হয়েছে 2 কোটি টাকা ৷
কোটি কোটি টাকা যে বরাদ্দ হয়েছে, তাতে কাজ কী কী হয়েছে ? সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্য়ায় বলছেন, "হুগলির বিভিন্ন ব্লকে অ্যাম্বুলেন্স থেকে শুরু করে সোলার লাইট দেওয়া হয়েছে । বহু স্কুলে পরিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে ।" তাঁর সাংসদ উন্নয়ন তহবিলের টাকায় বা তাঁর উদ্য়োগে পাঁচ বছরে হুগলিতে যা যা হয়েছে, তার যে খতিয়ান পাওয়া গিয়েছে, সেটা হল -
- সিঙ্গুর-সহ কয়েকটি স্কুলে সাব মার্সেবল পাম্প ৷
- স্কুলের সীমানা প্রাচীর ও ক্লাসরুম নির্মাণ ।
- স্কুলে সাইকেল শেড ও গ্রিল দেওয়ার কাজ ৷
- স্কুলে পরিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা ।
- পাঁচটির অধিক প্রতিষ্ঠানে অ্যাম্বুলেন্স বিতরণ ।
- সাতটি ব্লকের বিভিন্ন জায়গায় 95টি সোলার হাইমাস্ট লাইট লাগানো হয়েছে । আরও 272টি জায়গায় লাইট বসানোর কাজ চলছে ।
- ড্রেন ও গ্রামীণ হাসপাতালে জেনারেটরে লাগানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে ।
- প্রতিবন্ধীদের সাইকেল ও প্রবীণদের হুইল চেয়ার এবং কানে শোনার জন্য বিভিন্ন সরঞ্জাম প্রদান ।
- ব্যান্ডেল স্টেশনে উন্নয়নের জন্য 10 কোটি টাকার কাজ হয়েছে সাংসদের সুপারিশে ৷
রেলের বিভিন্ন স্টেশনের শেড, বাথরুম । - প্রধানমন্ত্রী রিলিফ ফান্ড থেকে ক্যানসার ও জটিল রোগের জন্য 125টি পরিবার কে 2 কোটি টাকার সাহায্য করা হয়েছে সাংসদ ।
- বিভিন্ন ব্লকে 60টি জলসত্র করা হয়েছে ।
সাংসদের কাছে দাবি পূরণের বিষয়টি পাশাপাশি বেশ কিছু কাজ হয়নি বলেও কেউ কেউ বলছেন ৷ সেগুলি কী কী, দেখা নেওয়া যাক একনজরে -
- বলাগড়ের ভাঙ্গনের সমস্যা সমাধান হয়নি ।
- ডানলপ টায়ার কারখানার পরিবর্তে অন্য কোনও শিল্প হয়নি ।
- ভদ্রেশ্বর ও বৈদ্যবাটির মাঝে খুড়িগাছি স্টেশনের দাবি পূরণ হয়নি ।
- হুগলি লোকসভার গ্যাঞ্জেস ও কোন্দলপাড়া জুটমিলের শ্রমিক অসন্তোষ লেগেই থাকে সারা বছর ।
- শিমলাগড় রেল লাইনের উপর ফ্লাইওভারের দাবি ।
- গঙ্গা-সহ একাধিক নদীর দূষণের প্রতিকার ।
তবে উন্নয়ন-অনুন্নয়নের এই তরজার মধ্যেই এই সংসদীয় এলাকার অন্যতম বড় ইস্য়ু শিল্প ৷ কারণ, এই কেন্দ্রের মধ্যেই পড়ছে সিঙ্গুর ৷ যেখানে টাটাদের গাড়ি তৈরির কারখানা মাঝপথে থমকে যায় তৃণমূল কংগ্রেসের আন্দোলনের জেরে ৷ অনেকে বলেন, ওই ঘটনাই বাংলায় শিল্পবন্ধ্যা পরিস্থিতি তৈরি করেছে ৷ স্বাভাবিকভাবে গত দেড় দশকে প্রতিটি নির্বাচনেই সিঙ্গুর প্রসঙ্গ ফিরে ফিরে এসেছে ৷
এবারও যে তা আসবে, সেটা বিলক্ষণ জানেন লকেট চট্টোপাধ্যায় ৷ তাই তিনি বলছেন, "এখানে শিল্প হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা ছিল । সেই সম্ভাবনাকে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই বাংলায় 12 বছরে কোনও শিল্প হয়নি । সিন্ডিকেট-তোলাবাজি এত ভয়ংকর যে কেউ থাকতে চাইছেন না ।"
একই সঙ্গে তাঁর আশ্বাস, "যখন মোদিজির সরকার আসবে, তখন এ রাজ্যে বিনিয়োগ হবে । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার চলে গিয়ে বিজেপি সরকার এলে টাটারাও প্রস্তুত এই বাংলার শিল্প করার জন্য। আমরা প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে টাটাদের কাছে বিনিয়োগের জন্য আবেদন জানিয়েছিলাম । আগামিদিনে জমি জট কাটিয়ে এই সিঙ্গুর থেকেই শিল্প হবে ।"