কলকাতা, 3 ফেব্রুয়ারি: আবারও মৃত্যু কলকাতার বিধায়ক আবাসে। বান্দোয়ানের তৃণমূল বিধায়ক রাজীবলোচন সোরেনের নিরাপত্তারক্ষীর মৃতদেহ উদ্ধার ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়াল কিট স্ট্রিটের এমএলএ হস্টেলে। এই ঘটনা মনে ফিরিয়ে দিল 30 বছর আগের এক দগদগে স্মৃতি। 1994 সালের 20 অক্টোবর মধ্য কলকাতার এই হস্টেলেই প্রাণ হারান গোয়ালপোখরের ফরওর্য়াড ব্লক বিধায়ক রামজান আলি। সেই মৃত্যু ঘিরেও উত্তাল হয় রাজ্য রাজনীতি। বেশ কয়েকদিন পর বিধায়কের স্ত্রী তালাত সুলতানাকে গ্রেফতার করা হয়। এই ঘটনায় এক সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মেজাজ হারান প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। মহাকারণ থেকে বেরনোর সময় সেদিন তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছিল, "আপনারা (সাংবাদিকরা) যা বলছেন তাতে এবার স্বামী-স্ত্রীর বেডরুমেও পুলিশ ঢোকাতে হবে !"
পুলিশের তদন্তে উঠে আসে বন্ধু নুরুল ইসলামের সঙ্গে ছক কষেই এই কাণ্ড ঘটান তালাত। দু'জনকেই আজীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়। 27 বছর জেলে থাকার পর 2022 সালে সাজা থেকে মুক্তি পান তালাত। জেলে সেলাই শেখাতেন তিনি। পাশাপাশি বন্দি মায়েদের সন্তানদের পড়ানোর ভারও নিয়েছিলেন। এই ধরনের ভালো আচরণের জন্য তাঁকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য প্রশাসন। তবে নুরুল ইসলাম এখনও জেলেই আছেন।
কলকাতার পুলিশের কাছে থাকা পুরনো মামলার তথ্য থেকে জানা যায়, নুরুল একটা সময় বিধায়কের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। বিধায়কের বিভিন্ন কাজ তিনিই করতেন। ঘটনাচক্রে তালাতের সঙ্গে তাঁর প্রণয়ের সম্পর্ক তৈরি হয়। তার জেরেই বিধায়ক রামজান আলি এবং নুরুল ইসলামের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। শেষমেশ রাতের অন্ধকারে বিধায়ক হস্টেলের ঘরে লুকিয়ে নুরুলকে ঢুকতে সাহায্য করেন তালাত। এরপর ঘুমের মধ্যেই শ্বাসরোধ করে খুন করা হয় বিধায়ককে।
খোদ বিধায়ক হস্টেলেই এই ঘটনা ঘটায় প্রশ্নের মুখে পড়ে রাজ্য প্রশাসন। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে কি না, তা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্ন করেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুকে। এক সাংবাদিকের প্রশ্নে মেজাজ হারিয়ে সেদিন প্রয়াত বামনেতা বলেছিলেন, "আপনারা যা বলছেন তাতে এবার দেখছি স্বামী-স্ত্রীর বিছানায় পুলিশ ঢোকাতে হবে।" মজার কথা, তখনও কিন্তু বিধায়ক খুনে স্ত্রীর যোগাযোগের কথা প্রকাশ্যে আসেনি। স্বভাবতই মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য অনেকেরই ভালো লাগেনি। নেতা শালীনতার সীমা অতিক্রম করে গিয়েছেন কি না, তা নিয়েও বিতর্ক দানা বাঁধে নানা মহলে। আরও পরে গ্রেফতার হন স্ত্রী তালাত সুলতানা। বোঝা যায়, ঠিক কেন এমন মন্তব্য করেছিলেন জ্যোতি বসু।
আরও পড়ুন:
- কলকাতার এমএলএ হোস্টেলে বিধায়কের নিরাপত্তারক্ষীর রহস্যমৃত্যু, উদ্ধার দেহ
- মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে পানশালার সামনে থেকে যুবককে অপহরণ, গ্রেফতার 3
- মাধ্যমিক পরীক্ষা কেন্দ্রের কাছেই উদ্ধার বোমা! আতঙ্ক ভাটপাড়ায়