শাহজাহান ইস্যুতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য মহেশতলা, 25 ফেব্রুয়ারি: শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতারির প্রশ্নে এবার বিচার ব্যবস্থাকেই কাঠগড়ায় তুললেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার মহেশতলায় এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে শাহজাহানের গ্রেফতারি থেকে শুরু করে সন্দেশখালি ইস্যু নিয়ে মুখ খুললেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শেখ শাহজাহান গ্রেফতার না-হওয়ার পিছনে এদিন ঠারেঠোরে হাইকোর্টকেই দায়ী করেছেন তিনি। তাঁর সাফ দাবি, হাইকোর্ট পুলিশের হাত বেঁধে রেখেছে। অভিষেকের কথায়, "যদি কেউ জনগণের উপর অত্যাচারের জন্য দায়ী হয় অথবা দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত হয়, দল তার পাশে দাঁড়াবে না। বরং দল তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে।"
প্রসঙ্গত, শনিবার এবং রবিবার পরপর দু'দিন রাজ্যের দুই মন্ত্রী সুজিত বসু এবং পার্থ ভৌমিক সন্দেশখালি গিয়েছেন। সন্দেশখালির মহিলাদের শেখ শাহজাহানের গ্রেফতারি নিয়ে অভিযোগের জবাবে তাঁদের বলতে শোনা গিয়েছে, "আদালত হাত বেঁধে রেখেছে পুলিশের। আর তাই শেখ শাজাহানকে গ্রেফতার করতে পারছে না পুলিশ। আদালত অনুমতি দিলে 10 দিনেই শাজাহানকে গ্রেফতার করবে তারা।" স্বাভাবিকভাবে বোঝাই যাচ্ছিল এটাই শাহজাহান গ্রেফতারি না-হওয়ার পেছনে তৃণমূলের যুক্তি। তারই পুনরাবৃত্তি করে অভিষেক বলেছেন, "সন্দেশখালি ইস্যু জিইয়ে রাখার জন্য বিচার ব্যবস্থা শাজাহানকে রক্ষাকবচ দিয়ে রেখেছে।"
এখানেই শেষ নয়, বিচার ব্যবস্থাকে নিশানা করে অভিষেক বলেন, "হাইকোর্ট হাত বেঁধে দিলে পুলিশ কী করবে ! 5 জানুয়ারি ইডি আধিকারিকদের উপর হামলা চালানো হয়েছিল, ওই ঘটনায় সিট গঠন করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। ইডি আপিল করে রায়ের উপর স্থগিতাদেশ চায়। সেই আর্জি মঞ্জুর করে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। 6 মার্চ শুনানি। হাইকোর্ট রাজ্য পুলিশ-প্রশাসনের হাত-পা বেঁধে দিলে পুলিশ কীভাবে গ্রেফতার করবে ? এফআইআরের ভিত্তিতে পদক্ষেপ করতে 15 দিন বা একমাস সময় দিতে হবে পুলিশকে।"
অন্যদিকে, এদিন সন্দেশখালি বিজেপির নেতাদের সফর নিয়েও মুখ খুলেছেন অভিষেক। তিনি বলেন, "প্রধানমন্ত্রী তথা বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে সন্দেশখালি ইস্যুকে জিইয়ে রাখা হচ্ছে। এই ইস্যুকে বাঁচিয়ে রাখতে মিডিয়া হাইপ তৈরি করতেই প্রতিদিন নিয়ম করে দিল্লি থেকে প্রতিনিধি দল বিজেপি নেতাদের সন্দেশখালি পাঠানো হচ্ছে।" সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে মোদিকে কটাক্ষ করে অভিষেক বলেন, "প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, 2022-এর মধ্যে ভারতের প্রত্যেক নাগরিকের ছাদের ব্যবস্থা করব। মানুষকে ভাঁওতা দিয়েছে, কাজ করেনি। ধর্মের নামে উস্কানি দিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করেছিল।"
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার পাশাপাশি, বিচারব্যবস্থার একাংশও কেন্দ্রের পক্ষে দাঁড়িয়েছে বলেও এদিন অভিযোগ করেন অভিষেক। তিনি বলেন, "বলতে দ্বিধা নেই, 100 দিনের কাজ নিয়ে বিচার ব্যবস্থার কাছে দ্বারস্থ হয়েছি, কোনও সুরাহা হয়নি। গণতন্ত্রে শেষ কথা বলে সাধারণ মানুষ, আর সেই মানুষ আছে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গেই। মানবাধিকারের কর্তা ও রক্ষাকর্তারা রোজ আলোয় থাকার জন্য বলছেন, একে অ্যারেস্ট করুন, তাকে অ্যারেস্ট করুন।"
গত 5 জানুয়ারি রেশন দুর্নীতির তদন্তে শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালাতে গিয়েছিল ইডি। তদন্তকারীদের উপর চড়াও হয় শাহজাহানের দলবল। আহত হন ইডি আধিকারিকরা। তারপর থেকেই বেপাত্তা শেখ শাহজাহান। তাঁকে আড়াল করার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যে, সন্দেশখালির মহিলাদের একাংশ অভিযোগ করেছে, রাত-বিরেতে মহিলাদের পার্টি অফিসে ডেকে নির্যাতন চালাত শেখ শাহজাহানের দলবল। ঘটনায় ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে শাহজাহান ঘনিষ্ঠ দুই তৃণমূল নেতা উত্তম সর্দার ও শিবু হাজরাকে। কিন্তু শাহজাহান এখনও পুলিশের নাগালের বাইরে! সন্দেশখালির বাসিন্দারা চাইছেন, অবিলম্বে গ্রেফতার করা হোক শেখ শাহজাহানকে। প্রশ্ন উঠেছে, পুলিশের ভূমিকা নিয়েও।
আরও পড়ুন:
- সাংসদের দেখা না-পাওয়ায় ক্ষোভ সন্দেশখালিতে, সোশাল মিডিয়ায় সাফাই গাইলেন নুসরত
- 10 মার্চ জনগর্জন সভা, ব্রিগেড থেকেই ভোট প্রচার শুরু তৃণমূলের