ETV Bharat / politics

নির্যাতিতার পরিবারকে এড়িয়ে যাওয়ার শাহী-সিদ্ধান্তের ফল কি উপ-নির্বাচনে পাবে বিজেপি?

নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে অমিত শাহের সাক্ষাৎ না-করা কি অসৌজন্যতা, নাকি বাঙালিকে অসম্মান করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ? মতামত দিলেন রাজনীতিক থেকে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ৷

Amit Shah
অমিত শাহ (ফাইল ছবি)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : 2 hours ago

কলকাতা, 28 অক্টোবর: গত মাস আড়াই সময় ধরে পশ্চিমবঙ্গে যে বিষয়টি নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে, তা হল আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা ৷ নিহত ওই চিকিৎসকের পরিবার দেখা করতে চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছে ৷ অমিত শাহ সেই চিঠির উত্তর তো দেনইনি, এমনকী রবিবার বাংলা সফর করে গেলেও নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেননি ৷

এই শাহী-সিদ্ধান্ত নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠেছে ৷ প্রথমত, নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা না করার কারণ কী ? দ্বিতীয়ত, এই সাক্ষাৎ এড়িয়ে কি ভুল করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ? বিশেষ করে সামনেই যখন রাজ্যের ছ’টি বিধানসভা আসনে উপ-নির্বাচন, সেই পরিস্থিতিতে তাঁর কি উচিত ছিল না একবার অন্তত সন্তানহারা ওই মা-বাবার আবেদনে সাড়া দেওয়া ? এর ফল কি উপ-নির্বাচনে ভুগতে হবে না বিজেপিকে ?

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ তথা রাজনৈতিক বিশ্লেষক পবিত্র সরকার বলছেন, ‘‘আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবেই বলতে পারি, তিলোত্তমার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা উচিত ছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর । মূলত, সৌজন্যের খাতিরেই । কারণ, এই বিষয়টি নিয়ে জনসাধারণের প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছিল বাংলা ।’’

সৌজন্যতার পরিসর ছাড়িয়ে উপ-নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে অমিত শাহের উচিত ছিল নির্যাতিতার মা-বাবার সঙ্গে দেখা করা, এমনটাও মনে করেন পবিত্র সরকার ৷ একই মতের শরিক কংগ্রেস নেতা তথা আইনজীবী পার্থপ্রতীম বিশ্বাসও ৷ তাঁর কথায়, ‘‘গোটা বিশ্বে যখন তিলোত্তমার এই আন্দোলনের প্রতি সমর্থন দেখা যাচ্ছে, সেখানে তিলোত্তমার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ না-করে বাস্তবে বাঙালিকে অপমান করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৷’’

পার্থপ্রতীম বিশ্বাস আরও বলেন, ‘‘তিলোত্তমার বাবা-মায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ না-করার থেকে বড় অসম্মান আর কিছু হতে পারে না । আগে একবার মিছিল থেকে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙে বাঙালিকে অপমান করেছিলেন । আরও একবার একই কাজ করলেন তিনি । যে মেয়েটির জন্য গোটা পৃথিবী রাত জাগল, তাঁর পরিবারের সঙ্গে উনি দু’মিনিটের জন্য সাক্ষাৎ করলেন না ।’’

আগামী 13 নভেম্বর বিধানসভার ছ’টি আসনে উপ-নির্বাচন ৷ সেই নির্বাচনে তো অমিত শাহের এই সিদ্ধান্তের বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে ? এই নিয়ে অবশ্য বিজেপি নেতারা মুখে কুলুপ এঁটেছেন ৷ অমিত শাহের নিহত চিকিৎসকের মা-বাবার সঙ্গে দেখা করা উচিত ছিল কি না, কিংবা কেন তিনি গেলেন না, দুই প্রশ্নের উত্তর চাইলেই নীরবতা বিরাজ করছে গেরুয়া শিবিরে ৷

যদিও এই ইস্যুতে আরও একটি প্রশ্ন প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে ৷ তা হল, বিজেপি কি আদৌ উপ-নির্বাচন নিয়ে ভাবছে ? কারণ, দলের যে অনুষ্ঠানে বিজেপির প্রাক্তন জাতীয় সভাপতি অমিত শাহ ভাষণ দিয়েছেন, সেখানে তিনি উপ-নির্বাচনের প্রসঙ্গ টানেননি ৷ বরং ছাব্বিশে নবান্ন দখলের স্বপ্ন দেখিয়েছেন নেতা-কর্মী-সমর্থকদের ৷

এই নিয়ে কংগ্রেস নেতা পার্থপ্রতীম বিশ্বাসের বক্তব্য, ‘‘সাধারণত উপ-নির্বাচনে শাসকের জয়ের একটা ঝোঁক থাকে । দ্বিতীয়ত, কংগ্রেসের সভাপতি পরিবর্তন হয়েছে ৷ এতে সাধারণ মানুষের কংগ্রেসের প্রতি একটা হালকা সমর্থন বেড়েছে । মানুষ সামান্য হলেও কংগ্রেসের দিকে ফিরছে । তিলোত্তমা ইস্যুতে এই সরকারের গ্রহণযোগ্যতায় যে ভাঁটা পড়েছে । এই মানুষগুলো কিন্তু কংগ্রেস ও বামের দিকেই যাবে । এই অঙ্কটা বিজেপি বুঝতে পারছে । অমিত শাহ তাই তৃণমূলকে চটাতে চাইছেন না । শাসককে চটালে তাদের অস্তিত্ব আরও সংকটে পড়তে পারে ৷’’

এই নিয়ে পবিত্র সরকার বলছেন, ‘‘ছাব্বিশে কি হবে সেটা দেখা যাবে ? আমি ভবিষ্যৎবাণীতে বিশ্বাস করি না । উনি ডাক দিয়েছেন ভালো কথা । কিন্তু ওঁর আচরণ সেই ডাকে সমর্থন করছে না । ওঁর দল রাজ্যে এমন কিছু করে দেখাতে পারেনি যে রাজ্যের জনগণ ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁর দলকে সমর্থন করবেন ।’’

কলকাতা, 28 অক্টোবর: গত মাস আড়াই সময় ধরে পশ্চিমবঙ্গে যে বিষয়টি নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে, তা হল আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা ৷ নিহত ওই চিকিৎসকের পরিবার দেখা করতে চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছে ৷ অমিত শাহ সেই চিঠির উত্তর তো দেনইনি, এমনকী রবিবার বাংলা সফর করে গেলেও নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেননি ৷

এই শাহী-সিদ্ধান্ত নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠেছে ৷ প্রথমত, নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা না করার কারণ কী ? দ্বিতীয়ত, এই সাক্ষাৎ এড়িয়ে কি ভুল করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ? বিশেষ করে সামনেই যখন রাজ্যের ছ’টি বিধানসভা আসনে উপ-নির্বাচন, সেই পরিস্থিতিতে তাঁর কি উচিত ছিল না একবার অন্তত সন্তানহারা ওই মা-বাবার আবেদনে সাড়া দেওয়া ? এর ফল কি উপ-নির্বাচনে ভুগতে হবে না বিজেপিকে ?

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ তথা রাজনৈতিক বিশ্লেষক পবিত্র সরকার বলছেন, ‘‘আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবেই বলতে পারি, তিলোত্তমার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা উচিত ছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর । মূলত, সৌজন্যের খাতিরেই । কারণ, এই বিষয়টি নিয়ে জনসাধারণের প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছিল বাংলা ।’’

সৌজন্যতার পরিসর ছাড়িয়ে উপ-নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে অমিত শাহের উচিত ছিল নির্যাতিতার মা-বাবার সঙ্গে দেখা করা, এমনটাও মনে করেন পবিত্র সরকার ৷ একই মতের শরিক কংগ্রেস নেতা তথা আইনজীবী পার্থপ্রতীম বিশ্বাসও ৷ তাঁর কথায়, ‘‘গোটা বিশ্বে যখন তিলোত্তমার এই আন্দোলনের প্রতি সমর্থন দেখা যাচ্ছে, সেখানে তিলোত্তমার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ না-করে বাস্তবে বাঙালিকে অপমান করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৷’’

পার্থপ্রতীম বিশ্বাস আরও বলেন, ‘‘তিলোত্তমার বাবা-মায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ না-করার থেকে বড় অসম্মান আর কিছু হতে পারে না । আগে একবার মিছিল থেকে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙে বাঙালিকে অপমান করেছিলেন । আরও একবার একই কাজ করলেন তিনি । যে মেয়েটির জন্য গোটা পৃথিবী রাত জাগল, তাঁর পরিবারের সঙ্গে উনি দু’মিনিটের জন্য সাক্ষাৎ করলেন না ।’’

আগামী 13 নভেম্বর বিধানসভার ছ’টি আসনে উপ-নির্বাচন ৷ সেই নির্বাচনে তো অমিত শাহের এই সিদ্ধান্তের বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে ? এই নিয়ে অবশ্য বিজেপি নেতারা মুখে কুলুপ এঁটেছেন ৷ অমিত শাহের নিহত চিকিৎসকের মা-বাবার সঙ্গে দেখা করা উচিত ছিল কি না, কিংবা কেন তিনি গেলেন না, দুই প্রশ্নের উত্তর চাইলেই নীরবতা বিরাজ করছে গেরুয়া শিবিরে ৷

যদিও এই ইস্যুতে আরও একটি প্রশ্ন প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে ৷ তা হল, বিজেপি কি আদৌ উপ-নির্বাচন নিয়ে ভাবছে ? কারণ, দলের যে অনুষ্ঠানে বিজেপির প্রাক্তন জাতীয় সভাপতি অমিত শাহ ভাষণ দিয়েছেন, সেখানে তিনি উপ-নির্বাচনের প্রসঙ্গ টানেননি ৷ বরং ছাব্বিশে নবান্ন দখলের স্বপ্ন দেখিয়েছেন নেতা-কর্মী-সমর্থকদের ৷

এই নিয়ে কংগ্রেস নেতা পার্থপ্রতীম বিশ্বাসের বক্তব্য, ‘‘সাধারণত উপ-নির্বাচনে শাসকের জয়ের একটা ঝোঁক থাকে । দ্বিতীয়ত, কংগ্রেসের সভাপতি পরিবর্তন হয়েছে ৷ এতে সাধারণ মানুষের কংগ্রেসের প্রতি একটা হালকা সমর্থন বেড়েছে । মানুষ সামান্য হলেও কংগ্রেসের দিকে ফিরছে । তিলোত্তমা ইস্যুতে এই সরকারের গ্রহণযোগ্যতায় যে ভাঁটা পড়েছে । এই মানুষগুলো কিন্তু কংগ্রেস ও বামের দিকেই যাবে । এই অঙ্কটা বিজেপি বুঝতে পারছে । অমিত শাহ তাই তৃণমূলকে চটাতে চাইছেন না । শাসককে চটালে তাদের অস্তিত্ব আরও সংকটে পড়তে পারে ৷’’

এই নিয়ে পবিত্র সরকার বলছেন, ‘‘ছাব্বিশে কি হবে সেটা দেখা যাবে ? আমি ভবিষ্যৎবাণীতে বিশ্বাস করি না । উনি ডাক দিয়েছেন ভালো কথা । কিন্তু ওঁর আচরণ সেই ডাকে সমর্থন করছে না । ওঁর দল রাজ্যে এমন কিছু করে দেখাতে পারেনি যে রাজ্যের জনগণ ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁর দলকে সমর্থন করবেন ।’’

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.