হায়দরাবাদ, 19 জুলাই:উত্তরপ্রদেশের হাথরসে একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছে ৷ স্বঘোষিত ধর্মগুরু সৎসঙ্গে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে প্রায় 120 জনের ৷ এই ধর্মগুরু একসময় কনস্টেবল ছিলেন ৷ সমাজের একটি বিশাল সংখ্যক মানুষের কাছে এই স্বঘোষিত ধর্মগুরু অত্যন্ত শ্রদ্ধার ৷ এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনায় ধর্মগুরুর পুরো বিষয়টি সমাজের সামনে আনা উচিত ৷
সত্যি, এটা একটা প্রশাসনিক ব্যর্থতা ৷ এই পদপিষ্টের ঘটনার জন্য কে বা কারা দায়ী, তাকে চিহ্নিত করা উচিত এবং তাদের বিচার হওয়া দরকার ৷ তবে এর থেকেও বড় চিন্তার বিষয় দেশজুড়ে বাড়তে থাকা স্বঘোষিত ধর্মগুরুর সংখ্যা ৷ সমাজ মনে করে, ওই ধর্মগুরুরা দেবত্ব বা অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী, তাঁরা উচ্চমর্যাদার, এটা বিরক্তিকর ৷
এই ভাবমূর্তি নিয়ে তাঁরা সাধারণ মানুষকে প্রায় সম্মোহিত করে ফেলে ৷ আর হাথরসের মতো ভয়াবহ দুর্ঘটনার জন্য এই সম্মোহন আংশিক দায়ী ৷ জানা গিয়েছে, স্বঘোষিত ধর্মগুরু যেখানে দাঁড়িয়েছিলেন, সেই ধুলো স্পর্শ করার জন্য ভক্তরা দৌড়োদৌড়ি আরম্ভ করেন ৷ আর তার ফলেই নিরপরাধ মানুষের প্রাণ যায় ৷ বিপর্যয় নেমে আসে বহু পরিবারে ৷
ভারতের মতো গভীর ধর্মীয় এবং নানান সংস্কৃতির দেশে কেউ একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে তাঁর আধ্যাত্মিক তৃষ্ণা মেটাচ্ছেন, এটা অস্বাভাবিক নয় ৷ যাইহোক, এটাও ঘটনা যে, বহু স্বঘোষিত দেবতার মতো মানুষজনেরা অনেক ভুলভাল কাজে প্রশ্রয় দেন, যা সমাজের সচেতনতাকে নাড়িয়ে দেয় ৷ অন্যদিকে একজনের আদর্শগত অবস্থানের জন্য একতরফাভাবে সামাজিক ও ধর্মীয় ঘটনাগুলিকে খারাপভাবে দেখাও ঠিক নয় ৷ কারণ তাঁরা প্রত্যেকের মধ্যে আধ্যাত্মিক চেতনাকে জাগ্রত করে, যা সমাজকে ঐক্যবদ্ধও করে ৷ সমস্যাটা তখন হয়, যখন বিশ্বাস গোঁড়ামিতে পরিণত হয় এবং সেখানে কার্যকারণকে খাটো করা হয় ৷ পাশাপাশি বৈজ্ঞানিক বিষয়গুলিকেও অবহেলা করার ঘটনা ঘটে ৷
অনেক ভণ্ড নিজেকে ভগবান বলে প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেন ৷ তাঁরা ধর্মান্ধতায় মানুষকে আচ্ছন্ন করে, তাঁদের চেতনাকে অন্ধ করে দেন ৷ বুদ্ধি এবং আধ্যাত্মিক বিকাশকে বাধা দেয় ৷ ধর্মীয়গুরুদের মাদকের মতো প্রভাব, যাঁরা পৃথিবীতে মসীহা হওয়ার অভিপ্রায় রাখলেও তা অস্পষ্টতার উপর সীমাবদ্ধ ৷ কারণ এটি মানুষের মানসিক ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয় এবং সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনার গতিরোধ করে ৷ এতে আশ্চর্যের কিছু নেই যে, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পিরামিডের সবচেয়ে নীচে থাকা মানুষ ধর্মগুরুদের পায়ে পরিত্রাণ খোঁজে ৷