চলতি বছরের জুলাই মাসের প্রথম দিন থেকে লাগু হয়েছে তিনটি নতুন ফৌজদারি আইন - ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (বিএনএস), ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা (বিএনএসএস) ও ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম (বিএসএ) ৷ ইন্ডিয়ান পিনাল কোড (আইপিসি), কোড অফ ক্রিমিনাল প্রসিডিয়োর ও ইন্ডিয়ান এভিডেন্স অ্যাক্টের বদলে এই তিন আইন আনা হয়েছে ৷ এই নিয়ে বেশ কিছু সময় ধরে অনেক আলোচনা এবং লেখালেখি হয়েছে ৷ একটি ছোট্ট প্রতিবেদনে এই আইনগুলির প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা সম্ভব নয় ৷ তাই আমি এই আইনগুলির কয়েকটি দিক তুলে ধরছি ৷ যার মধ্যে কিছু অদ্ভুত অংশ রয়েছে ৷ কিছু ভালো অংশ রয়েছে ৷ আবার কিছুক্ষেত্রে কঠোর পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে ।
অদ্ভুত বিষয়: ঔপনিবেশিক মানসিকতা থেকে মুক্তি পেতেই এই আইন চালু করা হতে চলেছে বলে জানানো হয়েছিল ৷ কিন্তু 90 শতাংশ ক্ষেত্রে পুরনো আইন থেকে হুবহু নকল করা হয়েছে ৷ আইপিসির মৌলিক কাঠামো বজায় রেখে প্রয়োজনীয় সংশোধনও করা যেত । ঔপনিবেশিক আইন হিসাবে যা অব্যাহত রয়েছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা পুনরায় কার্যকর করার দরকার ছিল না । বিএনএস একটি নতুন বোতলে পুরনো মদ ছাড়া আর কিছুই নয় ।
আইপিসির সবচেয়ে অপব্যবহৃত ধারাগুলির মধ্যে একটি ছিল রাষ্ট্রদ্রোহ । নির্দোষ টুইট করার জন্য যুবক-যুবতীদের গ্রেফতার করার ঘটনা ঘটেছে । এর আগে সুপ্রিম কোর্ট ও সারা দেশকে এই প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল যে এই ঔপনিবেশিক বিধান বাতিল করা হবে । কিন্তু এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি উল্টোটা হয়েছে । নতুন বিধানে (ধারা 152 বিএনএস) রাষ্ট্রদ্রোহকে যুক্ত করা হয়েছে ৷ এখন আরও কঠোর শাস্তি দিয়ে এই বিধানের অপব্যবহারের আরও সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে । কয়েকদিন আগে প্যালেস্তাইনের পতাকা ওড়ানোর অভিযোগে কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয় । এখন তাদের বিরুদ্ধে বিএএনস-এর 152 নম্বর ধারা ব্যবহার করে নাশকতামূলক কার্যকলাপের জন্য অনির্ধারিত উত্তেজনা তৈরির অভিযোগ আনা যেতে পারে ।
একই ভাবে, আইপিসির আরও একটি অপব্যবহৃত ধারা ছিল 153-এ (বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে শত্রুতা তৈরিতে প্রচার) ৷ তা পুনরায় প্রণয়ন করা হয়েছে এবং এখন সেটা বিএনএস-এর 196 নম্বর ধারা হিসেবে উল্লেখিত হচ্ছে ৷ এই ধারার অধীনে জামিন অযোগ্য অপরাধের জন্য একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করার অধিকার পুলিশকে দেওয়া হয়েছে ৷ কিন্তু অতীতের মতো এটি বিদ্বেষীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার সম্ভাবনা কম ।
ভালোদিক: বিএনএসএস-এর কিছু ভালো বিধানও রয়েছে ৷ তার মধ্যে রয়েছে তল্লাশি অভিযানের সময় মোবাইল ফোনে ভিডিয়োগ্রাফি (ধারা 185)৷ আশা করি, এর ফলে পুলিশ আধিকারিকদের অতিসক্রিয়তা দূর হবে ৷ কিন্তু মনে হচ্ছে ভিডিয়োগ্রাফির কোনও স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিয়োর বা এসওপি নেই । আইনে এখন একটি থানায় গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের তালিকা বাধ্যতামূলকভাবে প্রদর্শন করা প্রয়োজন (ধারা 37) । ভালো, কিন্তু গ্রেফতার দেখানো না হলে কী হবে ? পুলিশ এই খেলাটি খেলতে জানে ।
3 বছরের কম শাস্তি হতে পারে এমন অপরাধের ক্ষেত্রে 60 বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিদের গ্রেফতারের উপরও বিধিনিষেধ রয়েছে (ধারা 35) । বয়স কিভাবে যাচাই করা হবে ? তবে এই ধরনের বেশিরভাগ অপরাধই জামিনযোগ্য । তাই এটা সত্যিই একটি উন্নতি ৷ বিএনএসএস অপরাধের শিকার হওয়াদের ক্ষেত্রে সুবিধা প্রদান করছে ।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, 193 ধারায় বলা হয়েছে যে যৌন অপরাধের ক্ষেত্রে দুই মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে হবে ৷ এই বিধানটি ভালো ৷ তবে দুই মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ না হলে সময় বাড়ানোর জন্য আদালতের দ্বারস্থ হতে পারবেন তদন্তকারীরা । কেন একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা দেওয়া হল ? এছাড়াও একটি শর্ত রয়েছে যে যৌন অপরাধের ক্ষেত্রে পুলিশকে 90 দিনের মধ্যে তদন্তে অগ্রগতির বিষয়ে আক্রান্তকে জানাতে হবে । তথ্য না দেওয়া হলে, এটা কোনও ব্যাপার বলে মনে হয় না । পুলিশ কি আসলেই এই বিধানকে সম্মান করবে ? আশ্চর্যজনকভাবে, 90 দিনের পরে তথ্য সরবরাহ করার কোনও প্রয়োজন নেই । এমন অনেক ফাঁক রয়েছে, যা বাধ্যতামূলক ফলো-আপ ছাড়াই ভালো বিধানকেও অর্থহীন করে তোলে ।