ETV Bharat / opinion

বাজেট 2025, মতামত-আশা-আকাঙ্খা এবং উদ্বেগ - BUDGET 2025

পেশ হয়েছে কেন্দ্রীয় বাজেট। সবমিলিয়ে কেমন হল বাজেট? তা নিয়ে চর্চা চলছে। এই বাজেটের ভালো কোনটা? খামতিই বা কোথায়? বিস্তারিত বিশ্লেষণে প্রতীম রঞ্জন বসু।

Budget 2025 Opinion
পেশ হচ্ছে কেন্দ্রীয় বাজেট (ইটিভি ভারত)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Feb 3, 2025, 4:51 PM IST

পেশ হয়েছে 2025 সালের কেন্দ্রীয় বাজেট। এককথায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দেশ-দর্শন এবং অর্থনৈতিক সমীক্ষায় উঠে আসা বিভিন্ন মতামতের সমাহার এই বাজেট। মধ্যবিত্ত, পরিকাঠামো, কৃষিক্ষেত্র এবং শক্তির উৎপাদন-সব দিকেই নজর দিয়েছে কেন্দ্রীয় বাজেট।

গত দু'দিন ধরে এসব নিয়ে চর্চাও হয়েছে বিস্তর । তবে অর্থনীতির উপর এর প্রভাব কতটা সেটা বুঝতে বেশ খানিকটা সময় লাগবে । বিশেষ করে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন আয়বৃদ্ধি থেকে শুরু করে কর্মসংস্থানে জোয়ার আসবে বলে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা পূরণ হবে কিনা সেটা জানতে অপেক্ষা করতেই হবে। আয়করের ক্ষেত্রেও যে যে বদল এসেছে তা কতটা কার্যকরী সেটা বুঝতেও সময় লাগবে ।

বাজেটের সমস্যা ও আশা

তবে বাজেট পেশ হওয়ার পর কোনও সমস্যা যে চোখে পড়ছে না সেটা ভাবার কোনও কারণ নেই । সবেচেয়ে বড় সমস্যা হল কীভাবে অন্য ক্ষেত্র থেকে অর্থ সঞ্চয় করে তা পরিকাঠমো বৃদ্ধিতে খরচ করবে সরকার ? রাজস্ব ঘাটতির দিকটা নিয়েও আলাদা করে ভাবা দরকার । রাজস্ব ঘাটতি 4.9 শতাংশ হবে বলে মনে করা হয়েছিল । কিন্তু হয়েছে 4.8 শতাংশ । এখানেই পরিকাঠামো ক্ষেত্রে খরচের বিষয় নিয়েও কথা বলতে হবে। পরিকাঠামোয় যা ভাবা হয়েছিল তার থেকে 10 শতাংশ কম খরচ হয়েছে । এমতাবস্থায় সীতারমন চাইছেন 2025-26 অর্থবর্ষে রাজস্ব ঘাটতি 4.4 শতাংশের মধ্যে রাখতে । আর তার জন্য প্রতক্ষ্য করের ক্ষেত্রে সরকারের ক্ষতি হবে প্রায় একশো হাজার কোটির । পাশাপাশি বাজেট সাইজও বৃদ্ধি পাবে । ধার বাদ দিয়ে সামগ্রিকভাবে সংগ্রহ করা কর এবং সমস্ত খরচের যোগফল হল এই বাজেট সাইজ।

আয়কর এবং অত:পর

আয়কর বদলের বিষয়টি নিয়ে কথা শুরু হয়েছে অনেক দিন আগেই। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রয়াত অরুণ জেটলি বলতেন, যাঁকা চাকরি করেন তাঁদের অনর্থক বোঝার ভার সহ্য করতে হচ্ছে । মোবাইল ফোনের মাধ্যমে হওয়া লেনদেন এবং জিএসটি সরকারকে কয়েকটি জিনিস বুঝতে বিশেষ সাহায্য করেছে । এক সামগ্রিকভাবে নাগরিকদের রোজগার এবং তাঁদের লেনদেন এখন অনেক সহজেই বোঝা যায় । আইটি রিটার্ন ফাইলের প্রবণতাও বেড়ে গিয়েছে। তবে এখনও সরাসরি করদাতার পরিমাণ এবং তা থেকে হওয়া রোজগার এখনও খুব বেশি নয় । এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে চাকরিরত ব্যক্তিদের ভার লাঘবের প্রচেষ্টা রাজনৈতিক এবং সামাজিক-দুটো দিক থেকেই ভালো । এখন আয়কর থেকে তাঁদের খরচ বাঁচবে । সেই টাকার একটি অংশ নানা ব্যাপারে খরচ হলেও বাকিটা হবে সঞ্চয় । 12 লাখ টাকা পর্যন্ত ছাড় থাকার অর্থ এখন থেকে আয়কর শুধু উচ্চবিত্তদেরই দিতে হবে ।

এই ব্যবস্থায় ছোট ব্যবসায়ীদের মধ্যে ডিজিটাল লেনদেনের প্রবণতা আরও বাড়বে । অর্থনৈতিক লেনদেন আগের থেকে অনেক বেশি প্রাতিষ্ঠানিকতা পেতে পারে । সরকারও সহজে রোজগার-সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য পাবে । সেভাবে পরিকল্পনাও করতে পারবে । নির্ভরতা কমবে নগদ-অর্থনীতির উপর।

সঞ্চয়-আগ্রহ এবং জিএসটির সীমাব্ধতা

সঞ্চয়ও বাড়বে বলে ধরে নেওয়া যায় । মিউচুয়াল ফান্ডে এমনিতেই মধ্যবিত্তদের একটা বড় অংশ বিনিয়োগ করেছে । আরও বাড়বে সেই প্রবণতা। এর ফলে দেশের সংস্থাগুলি স্থানীয় অর্থনীতিকে প্রভাবিত করতে পারবে । সেটা অন্য কারণেও দরকারি । আগেই বলা হয়েছে, কয়েকটি ব্যাপারে সরকার প্রতক্ষ্য কর ছেড়েছে। সেই ফাঁক পূরণ জিএসটি থেকে হওয়া রোজগারের দিকেই নজর অর্থমন্ত্রকের । কিন্তু এভাবে কি সম্পূর্ণ ফাঁক পূরণ সম্ভব ?

এখানে মনে রাখা দরকার, কৃষিক্ষেত্র এবং পেট্রোলিয়াম এখনও জিএসটির অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এর ফলে জিএসটি'র সর্বোচ্চ ব্যবহার এখনও করা যাচ্ছে না । এই বিষয়টি নিয়ে আগে চর্চা করে তারপর জিএসটির উপর নির্ভরতা বাড়ালে তার প্রভাব অনেক ভালো হতে পারত । এটুকু বিশ্লেষণ করলে বুঝতে সমস্যা হয় না, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো এবং রাজনৈতিক কারণে জিএসটি-কে তার সর্বোচ্চ ব্যবহারের জায়গায় নিয়ে য়াওয়া যাচ্ছে না ।

পিপিপি মডেলের ভালো-মন্দ

এই প্রসঙ্গে অব-বিনিয়োগ নিয়ে ভাবা যেতে পারে। মোদি সরকার বেসরকারিকরণের ব্যাপারে অতীতে একাধিকবার ভাবনা-চিন্তা করেছে । তবে তার প্রতিফলন এয়ার ইন্ডিয়া ছাড়া অন্য কোথাও সেভাবে পড়েনি । বাজেটে পিপিপি নিয়ে অবশ্য কথা বলেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী । তিনি বলেছেন, পরিকাঠামোর সঙ্গে যোগাযোগ আছে এমন সকল মন্ত্রক তিন বছরের জন্য একটি পাইপলাইন প্রযেক্ট তৈরি করবে। এই সমস্ত প্রকল্প পিপিপি মডেলের মাধ্যমে করা যাবে। পাশাপাশি রাজ্যগুলিকেও পিপিপি'র ব্যাপারে উৎসাহিত করা হবে।

অতীতে পিপিপি যে ভারতে দারুণ সফল হয়েছে তেমন বলার সুযোগ অবশ্য নেই । মনমোহন সিংয়ের সরকারের সময় পিপিপি-র মাধ্যমে পরিকাঠামো বাড়ানো নিয়ে তুমুল চর্চা হয়েছে । বিষয়টি শুধু চর্চায় আটকে থেকেছে তেমনও নয় । হাইওয়ে নির্মাণ থেকে শুরু করে সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে পিপিপি'র প্রয়োগ খুবই ভালো করে দেখা গিয়েছে । অনেক সংস্থাই বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে । ব্যাঙ্ক তাদের ঋণও দিতে চেয়েছে । টোল ট্যাক্স বাবাদ সংগ্রহ হওয়া অর্থের সাহায্যে সেই ঋণ পরিশোধের পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছিল।

তখন কারও মাথায় আসেনি এভাবে অর্থ রোজগারের বিষয়টি হাইওয়ের কাজ সম্পূর্ণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সম্ভব নয় । তাছাড়া আইনি, প্রশাসনিক এবং অন্য দিক থেকে আসা সমস্যা নিয়েও তেমন গভীর আলোচনা হয়নি । 2014 সালে এই মডেলের কু-প্রভাব ভালোভাবে বোঝা গিয়েছিল । ইউপিএ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার সময় হাইওয়ে সংক্রান্ত বিষয় একাধিক ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা যায়। টাকা পয়সার অব্যবস্থার পাশাপাশি বহু কাজ থেকে গিয়েছিল অসমাপ্ত । সেখান থেকে কাজ শুরু করে মোদি সরকার ।

গত এক দশকে পরিকাঠামো বেড়েছে বলে মনে করা হয়। সেটার নেপথ্যে আছে সরকারি বিনিয়োগ। পরিকাঠমোয় বিনিয়োগ নিয়ে আলাদা তহবিলও গড়া হয়েছিল । সেটি জনপ্রিয়তাও পেয়েছিল। তবে পিপিপি-র উপর মোদি সরকার কতটা নির্ভর করছে তা স্পষ্ট নয় । নির্ভর করলে যে সমস্যা বাড়বে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না ।

ভারতীয় ডাকের রূপান্তর এবং বাস্তবতা

বাজেটে ভারতীয় ডাক ব্যবস্থা নিয়ে অনেক কথা আছে। ভারতীয় ডাককে রূপান্তর করা হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী । এটা ভালো উদ্যোগ তাতে সংশয় নেই। এখন সকলেই ডিএইচএলের কথা জানে। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন না একটা সময় এই ডিএইচএল ছিল জার্মানির নিজস্ব ডাক বিভাগ।

তবে ভাবনা কর্পোরেটে সংস্থার মতো না হলে এখনকার দিনে কোনও রূপান্তরই সম্ভব নয়। ভারতীয় ডাক এখনও পরিচালিত হয় বিট্রিশ আমলের আইন দ্বারা। পরিবর্তন নিয়ে কোনও কথা বলার আগে এই আইনের বদল প্রয়োজন । পাশাপাশি বিনিয়োগ থেকে শুরু করে কাজের পদ্ধতিতে বদল আনাও একটি বড় সমস্যার বিষয় হতে চলেছে। ভারতীয় ডাক ব্যবস্থাকে বদলে দেওয়ার ভাবনা খুবই ভালো তবে তা বাস্তবায়িত হতে কমপক্ষে 10 বছর সময় লাগবে ।

পেশ হয়েছে 2025 সালের কেন্দ্রীয় বাজেট। এককথায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দেশ-দর্শন এবং অর্থনৈতিক সমীক্ষায় উঠে আসা বিভিন্ন মতামতের সমাহার এই বাজেট। মধ্যবিত্ত, পরিকাঠামো, কৃষিক্ষেত্র এবং শক্তির উৎপাদন-সব দিকেই নজর দিয়েছে কেন্দ্রীয় বাজেট।

গত দু'দিন ধরে এসব নিয়ে চর্চাও হয়েছে বিস্তর । তবে অর্থনীতির উপর এর প্রভাব কতটা সেটা বুঝতে বেশ খানিকটা সময় লাগবে । বিশেষ করে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন আয়বৃদ্ধি থেকে শুরু করে কর্মসংস্থানে জোয়ার আসবে বলে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা পূরণ হবে কিনা সেটা জানতে অপেক্ষা করতেই হবে। আয়করের ক্ষেত্রেও যে যে বদল এসেছে তা কতটা কার্যকরী সেটা বুঝতেও সময় লাগবে ।

বাজেটের সমস্যা ও আশা

তবে বাজেট পেশ হওয়ার পর কোনও সমস্যা যে চোখে পড়ছে না সেটা ভাবার কোনও কারণ নেই । সবেচেয়ে বড় সমস্যা হল কীভাবে অন্য ক্ষেত্র থেকে অর্থ সঞ্চয় করে তা পরিকাঠমো বৃদ্ধিতে খরচ করবে সরকার ? রাজস্ব ঘাটতির দিকটা নিয়েও আলাদা করে ভাবা দরকার । রাজস্ব ঘাটতি 4.9 শতাংশ হবে বলে মনে করা হয়েছিল । কিন্তু হয়েছে 4.8 শতাংশ । এখানেই পরিকাঠামো ক্ষেত্রে খরচের বিষয় নিয়েও কথা বলতে হবে। পরিকাঠামোয় যা ভাবা হয়েছিল তার থেকে 10 শতাংশ কম খরচ হয়েছে । এমতাবস্থায় সীতারমন চাইছেন 2025-26 অর্থবর্ষে রাজস্ব ঘাটতি 4.4 শতাংশের মধ্যে রাখতে । আর তার জন্য প্রতক্ষ্য করের ক্ষেত্রে সরকারের ক্ষতি হবে প্রায় একশো হাজার কোটির । পাশাপাশি বাজেট সাইজও বৃদ্ধি পাবে । ধার বাদ দিয়ে সামগ্রিকভাবে সংগ্রহ করা কর এবং সমস্ত খরচের যোগফল হল এই বাজেট সাইজ।

আয়কর এবং অত:পর

আয়কর বদলের বিষয়টি নিয়ে কথা শুরু হয়েছে অনেক দিন আগেই। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রয়াত অরুণ জেটলি বলতেন, যাঁকা চাকরি করেন তাঁদের অনর্থক বোঝার ভার সহ্য করতে হচ্ছে । মোবাইল ফোনের মাধ্যমে হওয়া লেনদেন এবং জিএসটি সরকারকে কয়েকটি জিনিস বুঝতে বিশেষ সাহায্য করেছে । এক সামগ্রিকভাবে নাগরিকদের রোজগার এবং তাঁদের লেনদেন এখন অনেক সহজেই বোঝা যায় । আইটি রিটার্ন ফাইলের প্রবণতাও বেড়ে গিয়েছে। তবে এখনও সরাসরি করদাতার পরিমাণ এবং তা থেকে হওয়া রোজগার এখনও খুব বেশি নয় । এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে চাকরিরত ব্যক্তিদের ভার লাঘবের প্রচেষ্টা রাজনৈতিক এবং সামাজিক-দুটো দিক থেকেই ভালো । এখন আয়কর থেকে তাঁদের খরচ বাঁচবে । সেই টাকার একটি অংশ নানা ব্যাপারে খরচ হলেও বাকিটা হবে সঞ্চয় । 12 লাখ টাকা পর্যন্ত ছাড় থাকার অর্থ এখন থেকে আয়কর শুধু উচ্চবিত্তদেরই দিতে হবে ।

এই ব্যবস্থায় ছোট ব্যবসায়ীদের মধ্যে ডিজিটাল লেনদেনের প্রবণতা আরও বাড়বে । অর্থনৈতিক লেনদেন আগের থেকে অনেক বেশি প্রাতিষ্ঠানিকতা পেতে পারে । সরকারও সহজে রোজগার-সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য পাবে । সেভাবে পরিকল্পনাও করতে পারবে । নির্ভরতা কমবে নগদ-অর্থনীতির উপর।

সঞ্চয়-আগ্রহ এবং জিএসটির সীমাব্ধতা

সঞ্চয়ও বাড়বে বলে ধরে নেওয়া যায় । মিউচুয়াল ফান্ডে এমনিতেই মধ্যবিত্তদের একটা বড় অংশ বিনিয়োগ করেছে । আরও বাড়বে সেই প্রবণতা। এর ফলে দেশের সংস্থাগুলি স্থানীয় অর্থনীতিকে প্রভাবিত করতে পারবে । সেটা অন্য কারণেও দরকারি । আগেই বলা হয়েছে, কয়েকটি ব্যাপারে সরকার প্রতক্ষ্য কর ছেড়েছে। সেই ফাঁক পূরণ জিএসটি থেকে হওয়া রোজগারের দিকেই নজর অর্থমন্ত্রকের । কিন্তু এভাবে কি সম্পূর্ণ ফাঁক পূরণ সম্ভব ?

এখানে মনে রাখা দরকার, কৃষিক্ষেত্র এবং পেট্রোলিয়াম এখনও জিএসটির অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এর ফলে জিএসটি'র সর্বোচ্চ ব্যবহার এখনও করা যাচ্ছে না । এই বিষয়টি নিয়ে আগে চর্চা করে তারপর জিএসটির উপর নির্ভরতা বাড়ালে তার প্রভাব অনেক ভালো হতে পারত । এটুকু বিশ্লেষণ করলে বুঝতে সমস্যা হয় না, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো এবং রাজনৈতিক কারণে জিএসটি-কে তার সর্বোচ্চ ব্যবহারের জায়গায় নিয়ে য়াওয়া যাচ্ছে না ।

পিপিপি মডেলের ভালো-মন্দ

এই প্রসঙ্গে অব-বিনিয়োগ নিয়ে ভাবা যেতে পারে। মোদি সরকার বেসরকারিকরণের ব্যাপারে অতীতে একাধিকবার ভাবনা-চিন্তা করেছে । তবে তার প্রতিফলন এয়ার ইন্ডিয়া ছাড়া অন্য কোথাও সেভাবে পড়েনি । বাজেটে পিপিপি নিয়ে অবশ্য কথা বলেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী । তিনি বলেছেন, পরিকাঠামোর সঙ্গে যোগাযোগ আছে এমন সকল মন্ত্রক তিন বছরের জন্য একটি পাইপলাইন প্রযেক্ট তৈরি করবে। এই সমস্ত প্রকল্প পিপিপি মডেলের মাধ্যমে করা যাবে। পাশাপাশি রাজ্যগুলিকেও পিপিপি'র ব্যাপারে উৎসাহিত করা হবে।

অতীতে পিপিপি যে ভারতে দারুণ সফল হয়েছে তেমন বলার সুযোগ অবশ্য নেই । মনমোহন সিংয়ের সরকারের সময় পিপিপি-র মাধ্যমে পরিকাঠামো বাড়ানো নিয়ে তুমুল চর্চা হয়েছে । বিষয়টি শুধু চর্চায় আটকে থেকেছে তেমনও নয় । হাইওয়ে নির্মাণ থেকে শুরু করে সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে পিপিপি'র প্রয়োগ খুবই ভালো করে দেখা গিয়েছে । অনেক সংস্থাই বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে । ব্যাঙ্ক তাদের ঋণও দিতে চেয়েছে । টোল ট্যাক্স বাবাদ সংগ্রহ হওয়া অর্থের সাহায্যে সেই ঋণ পরিশোধের পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছিল।

তখন কারও মাথায় আসেনি এভাবে অর্থ রোজগারের বিষয়টি হাইওয়ের কাজ সম্পূর্ণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সম্ভব নয় । তাছাড়া আইনি, প্রশাসনিক এবং অন্য দিক থেকে আসা সমস্যা নিয়েও তেমন গভীর আলোচনা হয়নি । 2014 সালে এই মডেলের কু-প্রভাব ভালোভাবে বোঝা গিয়েছিল । ইউপিএ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার সময় হাইওয়ে সংক্রান্ত বিষয় একাধিক ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা যায়। টাকা পয়সার অব্যবস্থার পাশাপাশি বহু কাজ থেকে গিয়েছিল অসমাপ্ত । সেখান থেকে কাজ শুরু করে মোদি সরকার ।

গত এক দশকে পরিকাঠামো বেড়েছে বলে মনে করা হয়। সেটার নেপথ্যে আছে সরকারি বিনিয়োগ। পরিকাঠমোয় বিনিয়োগ নিয়ে আলাদা তহবিলও গড়া হয়েছিল । সেটি জনপ্রিয়তাও পেয়েছিল। তবে পিপিপি-র উপর মোদি সরকার কতটা নির্ভর করছে তা স্পষ্ট নয় । নির্ভর করলে যে সমস্যা বাড়বে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না ।

ভারতীয় ডাকের রূপান্তর এবং বাস্তবতা

বাজেটে ভারতীয় ডাক ব্যবস্থা নিয়ে অনেক কথা আছে। ভারতীয় ডাককে রূপান্তর করা হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী । এটা ভালো উদ্যোগ তাতে সংশয় নেই। এখন সকলেই ডিএইচএলের কথা জানে। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন না একটা সময় এই ডিএইচএল ছিল জার্মানির নিজস্ব ডাক বিভাগ।

তবে ভাবনা কর্পোরেটে সংস্থার মতো না হলে এখনকার দিনে কোনও রূপান্তরই সম্ভব নয়। ভারতীয় ডাক এখনও পরিচালিত হয় বিট্রিশ আমলের আইন দ্বারা। পরিবর্তন নিয়ে কোনও কথা বলার আগে এই আইনের বদল প্রয়োজন । পাশাপাশি বিনিয়োগ থেকে শুরু করে কাজের পদ্ধতিতে বদল আনাও একটি বড় সমস্যার বিষয় হতে চলেছে। ভারতীয় ডাক ব্যবস্থাকে বদলে দেওয়ার ভাবনা খুবই ভালো তবে তা বাস্তবায়িত হতে কমপক্ষে 10 বছর সময় লাগবে ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.