নয়াদিল্লি, 3 ফেব্রুয়ারি: মহাকুম্ভে পদপিষ্ট হয়ে 30 জনের মৃত্যু হয়েছে। এই মৃত্যুর জন্য দায়ী কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের গাফিলতি। এমনটাই দাবি বিরোধী সাংসদদের। শাসক ও বিরোধীদের তরজায় সোমবার আবারও উত্তাল লোকসভার অধিবেশন।
গত শনিবারও বাজেট পেশের সময় সমস্যায় পড়তে হয় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে। সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব এবং কংগ্রেস নেতা গৌরব গৈগৈ পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা নিয়ে সরব হয়েছিলেন। বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার ধর্ম-বিরোধী এমন অভিযোগও ওঠে।
সেই সূত্র ধরে এদিন শুরু থেকেই হট্টগোল শুরু হয় সভায় । ডিএমকের সাংসদ কানিমোঝি রাষ্ট্রপতির বাজেট ভাষণের উপর আলোচনা করার সময় মহাকুম্ভের ঘটনাটি তোলেন। কেন্দ্রের পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশ প্রশসানের সমালোচনা করে তাঁর দাবি, কুম্ভ মেলায় যাঁরা গিয়েছিলেন তাঁরা ভেবেছিলেন সরকার তাঁদের নিরাপত্তা দেবে। কিন্তু কেউ নিরাপত্তা দেয়নি তাঁদের।
তিনি মনে করেন, ধর্ম এবং রাজনীতি মিশে গিলে সবচেয়ে বেশি সমস্যা পড়ে সাধারণ মানুষ । প্রয়াগরাজে ঠিক কতজনের মৃত্যু হয়েছে তা এখনও জানা যায়নি। পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় সরকার বিভাজনের রাজনীতি করে বলেও দাবি করে কানিমোঝি। তিনি জানান, সমাজে ভেদাভেদ কোন পর্যায় গিয়েছে সেটা এখন খুব সহজে বোঝা যায়। এই সংসদে মুসলমান থেকে শুর করে এসসি , এসটি এবং ওবিসি প্রতিনিধিদের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে । বিভাজনের রাজনীতি এবং তার প্রভাবের এটাই সবচেয়ে বড় প্রমাণ।
ডিএমকে নেত্রীর আরও দাবি, রাষ্ট্রপতির ভাষণে সভ্যতার জাতীয়বাদকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। তাঁর মতে, বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের ধারনার বদলে সভ্যতার জাতীয়তাবাদ এক অখণ্ড সংস্কতির কথা বলে। পাশাপাশি, সংখ্যালঘুদের জন্য সরকার যে সমস্ত নীতি প্রণয়ন করছে তারও তীব্র সমালোচনা করেছেন কানিমোঝি । তাঁর কথায়, "এই সরকার চায় সংখ্যালঘুরা সবসময়ে ভয়ের মধ্যে থাকুক। সিএএ এবং তিন তালাক-কে এই সরকার ভয় দেখাবার হাতিয়ার হিসেবেই ব্যবহার করে ।"
অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যে রাজ্যপালদের কাজে লাগিয়ে প্রশাসনের কাজে বাধা সৃষ্টি করা হয় বলে তাঁর অভিযোগ। একইসঙ্গে 'এক দেশ এক নির্বাচন'-এর সমালোচনা করেন করুণানিধি-তনয়া। তাঁর মতে, এভাবে স্থানীয় ইস্যু গুরুত্ব পাবে না। কেন্দ্রীয় ভাবে শুধুমাত্র জাতীয় দলগুলি নিজেদের মতামত চাপিয়ে দিতে পারবে ।
অন্যদিকে, অখিলেশের দলের সাংসদ নরেশচন্দ্র উত্তম প্যাটেলকে বলতে শোনা যায়, মহাকুম্ভ মেলায় যা হয়েছে তা কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, এটা সরকারের ব্যর্থতার বড় উদাহরণ । তাঁর কটাক্ষ, উত্তরপ্রদেশের ডবল ইঞ্জিনের সরকার গণতন্ত্রকে পরিহাসে পরিণত করেছে।
পাশপাশি রাষ্ট্রপতির ভাষণে মহাকুম্ভের ঘটনার নামমাত্র উল্লেখ থাকা নিয়ে সমালোচনায় সরব হয়েছেন তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার। তাঁর কথায়, "কোটি কোটি হিন্দু মহাকুম্ভ মেলা নিয়ে উৎসাহিত। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পনা করে চলেছেন। সেখানেই এত মানুষের প্রাণ গেল আর তার জন্য রাষ্ট্রপতি মাত্র 61টি শব্দ খরচ করলেন! তিনি এই ধরনের মৃত্যর নিন্দাও করেননি । স্বজন হারানো পরিবারের পাশে থাকার বার্তাও দেননি । "
কাকলির অভিযোগ মৃতের সংখ্যাও কমিয়ে দেখানো হয়েছে । অন্য একটি প্রসঙ্গে তিনি দাবি করেন, সরকার প্রতিটি পদক্ষেপে সংবিধানকে অসম্মান করছে । দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের কথা না ভেবে বিত্তবানদের ছাড় দেওয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে রাষ্ট্রপতির ভাষণে মণিপুরে ঘটে চলা হিংসা প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য না করা নিয়েও সমালোচনা করেছেন কাকলি ।