গত 22 ডিসেম্বর কিষান দিবস ছিল ৷ চৌধুরী চরণ সিং, যিনি ভারতীয় কৃষকদের জীবনে বদল আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন । কিষান দিবসে তাঁকেই স্মরণ করেছে দেশ ৷ তিনি এমন একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন, যাঁর হৃদয় কৃষকের ছিল ৷ তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদানগুলির মধ্যে একটি ছিল পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ এবং আশেপাশের অঞ্চলে আখচাষের প্রচার । এই একটাই পদক্ষেপ অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন করে এবং সমগ্র অঞ্চলকে সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে গিয়েছিল ৷
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি আখের অর্থনীতির অত্যধিক সম্পৃক্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করেছিলেন ৷ তাই বৈচিত্র্যের পরামর্শ দিয়েছিলেন ৷ সেই সময়োপযোগী পরামর্শ ওই অঞ্চলের আখচাষ দীর্ঘমেয়াদী বৃদ্ধির দিকে পরিচালিত করেনি । তবে সম্ভবত আমাদের দেশ এবং বর্তমান সরকারের দীর্ঘমেয়াদী বৃদ্ধির বিষয়ে তাঁর সেই পরামর্শ শোনার সময় এসেছে ।
সেই পরামর্শ আমাদের কাছে এই দিনের থিম তৈরি করে, ‘দীর্ঘমেয়াদী কৃষির জন্য কৃষকদের ক্ষমতায়ন’ । এখন বছরের পর বছর ধরে আমাদের খামারগুলিতে স্থায়িত্ব বাড়ানোর বিষয়ে অনেক কিছু বলা হয়েছে ৷ কিন্তু সামান্যই অর্জন করা হয়েছে । 2481 কোটি টাকার বাজেট প্রকাশ করে প্রাকৃতিক কৃষিকে উৎসাহিত করার জন্য নরেন্দ্র মোদি সরকারের সাম্প্রতিক ঘোষণা একটি ভালো পদক্ষেপ । জলবায়ু পরিবর্তন, মাটি ও জলের অবনতি, শিল্প কৃষির ক্রমবর্ধমান ইনপুট খরচ ইত্যাদির চ্যালেঞ্জের কারণে আমাদের আগ্রাসীভাবে প্রাকৃতিক চাষাবাদ করতে হবে ।
বর্তমানে প্রাকৃতিক কৃষিও অনেক মৌলিক সমস্যায় জর্জরিত । সেগুলির মধ্যে অন্যতম হল - জৈব উচ্চ-মানের বীজ ও পণ্যের প্রাপ্যতা, জৈব বাজার, যুক্তিসঙ্গত মূল্য এবং সন্দেহজনক সার্টিফিকেশনের মান প্রাকৃতিক চাষের দীর্ঘমেয়াদী বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে ৷
এখন যদি আমরা সমাধানের কথা ভাবি, আমাদের আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে ভারতে ঐতিহ্যবাহী কৃষি পদ্ধতিকে বাড়াতে হবে । এর অর্থ এই নয় যে বিদেশি কর্পোরেশনগুলিকে জৈব চাষের দখল নিতে দেওয়া বা আমাদের কৃষকদেরকে বড় কোম্পানিগুলির জন্য শোষণযোগ্য ইউনিটে পরিণত করার অনুমতি দেওয়া নয় ৷ বরং কৃষক, মাটি, জল এবং গ্রামীণ বাস্তুতন্ত্রের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর ইকোসিস্টেম তৈরি করতে হবে ৷ যাতে আয়ের ঘাটতি না-হয়, কৃষকরা আত্মহত্যা না-করে, পরিবেশগত ধ্বংসের পরিস্থিতি তৈরি না-হয় ৷
যেহেতু এই দিনটি চৌধুরি চরণ সিংয়ের জন্মদিন, তাই আমাদের অবশ্যই পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ এবং হরিয়ানার সুগার বেল্ট দিয়ে শুরু করতে হবে । চিনিকল ও সমবায় সমিতিগুলো আখের মূল্য পরিশোধে খেলাপি হওয়ায় এসব এলাকা ঋণে ডুবে গিয়েছে । প্রথম পদক্ষেপ হওয়া উচিত, শুধুমাত্র চিনিকলের উপর নির্ভরতা না-আসে, সরকারকে বিকেন্দ্রীভূত খাঁদসারী (ঐতিহ্যগত অপরিশোধিত চিনির কুটির ইউনিট) পুনরায় চালু করতে হবে, যা আমাদের প্রাচীন চিনি অর্থনীতির মূল ভিত্তি ছিল ।