গত 24 অক্টোবর কেনিয়ার নাইরোবিতে ইউএন এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম (ইউএনইপি) 'এমিশন গ্যাপ রিপোর্ট 2024: নো মোর হট এয়ার...প্লিজ !' শিরোনামে তাদের 15তম বার্ষিক নির্গমন গ্যাপ রিপোর্ট চালু করেছে । এই রিপোর্টের মাধ্যমে তারা একটি তীক্ষ্ণ ও উদ্বেগজনক বার্তা দিয়েছে ৷ সেখানে বলা হয়েছে - বর্তমান জলবায়ু নীতি প্যারিস চুক্তি দ্বারা নির্ধারিত 1.5 ডিগ্রি সেলসিয়াস লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে গ্লোবাল ওয়ার্মিংকে ধরে রাখার জন্য অপর্যাপ্ত । পরিবর্তে, সারা বিশ্বের তাপমাত্রা এই শতাব্দীর শেষে 2.6-3.1 ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে ৷ যা একটি বিপর্যয়কর তাপমাত্রা বৃদ্ধির পথে রয়েছে বলা যেতেই পারে ৷ এটা মানবতা ও বাস্তুতন্ত্রের জন্য মারাত্মক পরিণতি হতে পারে ।
আজারবাইজানের বাকুতে কোপ 29 এর সময় এগিয়ে আসছে ৷ সেই পরিস্থিতিতে ইউএনইপি-র প্রতিবেদন বিশ্ব নেতাদের কাছে সতর্কবার্তা এনে দিয়েছে, যাতে কার্বন নির্গমন কমানোর লক্ষ্যকে আরও কঠোর করা যায় এবং ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন (এনডিসি)-কে আরও জোরালো করা যায় ৷ ইউএনইপি সতর্ক করেছে যে উষ্ণতা 1.5 ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার সময়সীমা দ্রুত কমে যাচ্ছে ৷ 1.5 ডিগ্রি সেলসিয়াস লক্ষ্য পূরণের জন্য 2030 সালের মধ্যে সারা বিশ্বের নির্গমন অবশ্যই 42 শতাংশ এবং 2035 সালের মধ্যে 57 শতাংশ কমাতে হবে ৷ একটি ডিগ্রির প্রতিটি ভগ্নাংশ গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে প্রতিটি হ্রাস জীবন বাঁচাবে, বাস্তুতন্ত্র রক্ষা করবে এবং জলবায়ু সংক্রান্ত দুর্যোগের ক্রমবর্ধমান ব্যয় কমাবে ৷
রেকর্ড নির্গমন এবং জি20-র দায়িত্ব
ওই রিপোর্টে বর্তমান পরিস্থিতির একটি অন্ধকারাচ্ছন্ন চিত্র তুলে ধরা হয়েছে । গ্রিনহাউস গ্যাস (জিএইচজি) নির্গমন 2023 সালে 57.1 গিগাটন কার্বন ডাই অক্সাইডের সমান রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে ৷ এক্ষেত্রে 2022 থেকে 1.3 শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে ৷ সবেচেয়ে বেশি নির্মগন হয়েছে বিদ্যুতের মতো শক্তি-ক্ষেত্রগুলি থেকে ৷ এখানে নির্গমনের পরিমাণ 15.1 গিগাটন ৷ তারপরে পরিবহণের সময়ও 8.4 গিগাটন নির্গমন হয়েছে । কৃষি ও শিল্পক্ষেত্রে 6.5 গিগাটন নির্গমন হয়েছে । নির্গমনের ক্রমাগত বৃদ্ধি বিশ্বকে বিপজ্জনক, অজানা অঞ্চলে নিয়ে যাচ্ছে ।
গ্লোবাল নির্গমনের 77 শতাংশর জন্য দায়ী জি20 দেশগুলি জলবায়ু সংকটের প্রাথমিক দায় বহন করে । তাদের উল্লেখযোগ্য অবদান থাকা সত্ত্বেও চিন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মেক্সিকো, সৌদি আরব, দক্ষিণ কোরিয়া ও তুরস্কের মতো বড় শক্তিগুলি এখনও তাদের নির্গমন কমানোর লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি, যা নেট-শূন্য লক্ষ্যের দিকে প্রথম পদক্ষেপ ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র 2023 সালে জনপ্রতি 18 টন কার্বন ডাই অক্সাইড এবং 1850 সাল থেকে ঐতিহাসিক মোট 527 গিগাটন কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন করেছে ৷ এর ফলে তারা বৃহত্তম ক্রমবর্ধমান নির্গমনকারী হয়ে উঠেছে ৷ চিন দ্বিতীয় বৃহত্তম নির্গমনকারী ৷ সেখানে 2023 সালে জনপ্রতি 11 টন কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন হয়েছে, যা 300 গিগাটন কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমনের সমান ৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন 301 গিগাটন কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত করেছে ৷ এই দেশগুলি জলবায়ু সঙ্কটের মূল কারণ ঐতিহাসিক নির্গমনের জন্য দায়ী ৷
1.5 ডিগ্রি সেলসিয়াসে উষ্ণতা সীমাবদ্ধ করার সময়সীমা শেষ হচ্ছে
ইউএনইপি জোর দেয় যে উষ্ণতাকে 1.5 ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ করা প্রযুক্তিগতভাবে সম্ভব ৷ কিন্তু এর জন্য তাৎক্ষণিক এবং বড় আকারের পদক্ষেপের প্রয়োজন । লক্ষ্যের পথে অবিচল থাকার জন্য 2035 সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী নির্গমন অবশ্যই 57 শতাংশ এবং 2030 সালের মধ্যে 42 শতাংশ কমাতে হবে ৷ 2019 নির্গমনের স্তর যা ছিল, এই শতাংশের হিসেব তার নিরিখেই করা হয়েছে ৷ এই কাটছাঁট ছাড়া বিশ্বের 1.5 ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাবে এবং তাপমাত্রাকে আবার নামিয়ে আনতে ঝুঁকিপূর্ণ কার্বন ডাই অক্সাইড অপসারণ প্রযুক্তির উপর নির্ভর করতে হবে ।
ওই রিপোর্টে সতর্ক করা হয়েছে যে বর্তমান নীতিগুলি এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ বিশ্বকে 3.1 ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধির পথে নিয়ে যাচ্ছে ৷ গুরুত্বপূর্ণ টিপিং পয়েন্টগুলিকে ছাড়িয়ে গিয়েছে ৷ এর ফলে জলবায়ুতে এমন প্রভাব ফেলবে, যা চরম তাপপ্রবাহ, বিপর্যয়কর ঝড় এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ উঁচু হয়ে যাবে ৷ যা স্থানচ্যুত করবে লক্ষ লক্ষ মানুষকে ৷
কোনও পদক্ষেপ না হওয়ায় ইতিমধ্যেই বায়ুমণ্ডলে 20 থেকে 35 গিগাটন কার্বন ডাই অক্সাইড যোগ করেছে, যা 1.5 ডিগ্রি সেলসিয়াসের পথকে আরও তরান্বিত করেছে ৷ ইউএনইপি যেমন স্পষ্টভাবে বলেছে, "পদক্ষেপের অভাব এবং সময় নষ্ট হওয়ার কারণে অবশিষ্ট কার্বন বাজেট কমে গিয়েছে এবং কার্বন-নিবিড় পরিকাঠামো বন্ধ হওয়ার ঝুঁকি বেড়েছে ।"