পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / opinion

বিশ্বব্যাপী কার্বন নির্গমন 2.6-3.1 ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে, বিপর্যয় সামলাতে কী করা উচিত?

হরি কৃষ্ণ নিবানুপুড়ি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও দেশগুলির কীভাবে এটি মোকাবিলা করা উচিত সেই সম্পর্কে লিখেছেন।

Global Emissions
বিশ্বব্যাপী কার্বন নির্গমন 2.6-3.1 ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে, বিপর্যয় সামলাতে কী করা উচিত? (এপি)

By ETV Bharat Bangla Team

Published : 6 hours ago

গত 24 অক্টোবর কেনিয়ার নাইরোবিতে ইউএন এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম (ইউএনইপি) 'এমিশন গ্যাপ রিপোর্ট 2024: নো মোর হট এয়ার...প্লিজ !' শিরোনামে তাদের 15তম বার্ষিক নির্গমন গ্যাপ রিপোর্ট চালু করেছে । এই রিপোর্টের মাধ্যমে তারা একটি তীক্ষ্ণ ও উদ্বেগজনক বার্তা দিয়েছে ৷ সেখানে বলা হয়েছে - বর্তমান জলবায়ু নীতি প্যারিস চুক্তি দ্বারা নির্ধারিত 1.5 ডিগ্রি সেলসিয়াস লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে গ্লোবাল ওয়ার্মিংকে ধরে রাখার জন্য অপর্যাপ্ত । পরিবর্তে, সারা বিশ্বের তাপমাত্রা এই শতাব্দীর শেষে 2.6-3.1 ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে ৷ যা একটি বিপর্যয়কর তাপমাত্রা বৃদ্ধির পথে রয়েছে বলা যেতেই পারে ৷ এটা মানবতা ও বাস্তুতন্ত্রের জন্য মারাত্মক পরিণতি হতে পারে ।

আজারবাইজানের বাকুতে কোপ 29 এর সময় এগিয়ে আসছে ৷ সেই পরিস্থিতিতে ইউএনইপি-র প্রতিবেদন বিশ্ব নেতাদের কাছে সতর্কবার্তা এনে দিয়েছে, যাতে কার্বন নির্গমন কমানোর লক্ষ্যকে আরও কঠোর করা যায় এবং ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন (এনডিসি)-কে আরও জোরালো করা যায় ৷ ইউএনইপি সতর্ক করেছে যে উষ্ণতা 1.5 ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার সময়সীমা দ্রুত কমে যাচ্ছে ৷ 1.5 ডিগ্রি সেলসিয়াস লক্ষ্য পূরণের জন্য 2030 সালের মধ্যে সারা বিশ্বের নির্গমন অবশ্যই 42 শতাংশ এবং 2035 সালের মধ্যে 57 শতাংশ কমাতে হবে ৷ একটি ডিগ্রির প্রতিটি ভগ্নাংশ গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে প্রতিটি হ্রাস জীবন বাঁচাবে, বাস্তুতন্ত্র রক্ষা করবে এবং জলবায়ু সংক্রান্ত দুর্যোগের ক্রমবর্ধমান ব্যয় কমাবে ৷

রেকর্ড নির্গমন এবং জি20-র দায়িত্ব

ওই রিপোর্টে বর্তমান পরিস্থিতির একটি অন্ধকারাচ্ছন্ন চিত্র তুলে ধরা হয়েছে । গ্রিনহাউস গ্যাস (জিএইচজি) নির্গমন 2023 সালে 57.1 গিগাটন কার্বন ডাই অক্সাইডের সমান রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে ৷ এক্ষেত্রে 2022 থেকে 1.3 শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে ৷ সবেচেয়ে বেশি নির্মগন হয়েছে বিদ্যুতের মতো শক্তি-ক্ষেত্রগুলি থেকে ৷ এখানে নির্গমনের পরিমাণ 15.1 গিগাটন ৷ তারপরে পরিবহণের সময়ও 8.4 গিগাটন নির্গমন হয়েছে । কৃষি ও শিল্পক্ষেত্রে 6.5 গিগাটন নির্গমন হয়েছে । নির্গমনের ক্রমাগত বৃদ্ধি বিশ্বকে বিপজ্জনক, অজানা অঞ্চলে নিয়ে যাচ্ছে ।

বিশ্বব্যাপী কার্বন নির্গমন 2.6-3.1 ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে, বিপর্যয় সামলাতে কী করা উচিত? (গ্রাফিক্স)

গ্লোবাল নির্গমনের 77 শতাংশর জন্য দায়ী জি20 দেশগুলি জলবায়ু সংকটের প্রাথমিক দায় বহন করে । তাদের উল্লেখযোগ্য অবদান থাকা সত্ত্বেও চিন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মেক্সিকো, সৌদি আরব, দক্ষিণ কোরিয়া ও তুরস্কের মতো বড় শক্তিগুলি এখনও তাদের নির্গমন কমানোর লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি, যা নেট-শূন্য লক্ষ্যের দিকে প্রথম পদক্ষেপ ।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র 2023 সালে জনপ্রতি 18 টন কার্বন ডাই অক্সাইড এবং 1850 সাল থেকে ঐতিহাসিক মোট 527 গিগাটন কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন করেছে ৷ এর ফলে তারা বৃহত্তম ক্রমবর্ধমান নির্গমনকারী হয়ে উঠেছে ৷ চিন দ্বিতীয় বৃহত্তম নির্গমনকারী ৷ সেখানে 2023 সালে জনপ্রতি 11 টন কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন হয়েছে, যা 300 গিগাটন কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমনের সমান ৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন 301 গিগাটন কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত করেছে ৷ এই দেশগুলি জলবায়ু সঙ্কটের মূল কারণ ঐতিহাসিক নির্গমনের জন্য দায়ী ৷

1.5 ডিগ্রি সেলসিয়াসে উষ্ণতা সীমাবদ্ধ করার সময়সীমা শেষ হচ্ছে

ইউএনইপি জোর দেয় যে উষ্ণতাকে 1.5 ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ করা প্রযুক্তিগতভাবে সম্ভব ৷ কিন্তু এর জন্য তাৎক্ষণিক এবং বড় আকারের পদক্ষেপের প্রয়োজন । লক্ষ্যের পথে অবিচল থাকার জন্য 2035 সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী নির্গমন অবশ্যই 57 শতাংশ এবং 2030 সালের মধ্যে 42 শতাংশ কমাতে হবে ৷ 2019 নির্গমনের স্তর যা ছিল, এই শতাংশের হিসেব তার নিরিখেই করা হয়েছে ৷ এই কাটছাঁট ছাড়া বিশ্বের 1.5 ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাবে এবং তাপমাত্রাকে আবার নামিয়ে আনতে ঝুঁকিপূর্ণ কার্বন ডাই অক্সাইড অপসারণ প্রযুক্তির উপর নির্ভর করতে হবে ।

ওই রিপোর্টে সতর্ক করা হয়েছে যে বর্তমান নীতিগুলি এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ বিশ্বকে 3.1 ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধির পথে নিয়ে যাচ্ছে ৷ গুরুত্বপূর্ণ টিপিং পয়েন্টগুলিকে ছাড়িয়ে গিয়েছে ৷ এর ফলে জলবায়ুতে এমন প্রভাব ফেলবে, যা চরম তাপপ্রবাহ, বিপর্যয়কর ঝড় এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ উঁচু হয়ে যাবে ৷ যা স্থানচ্যুত করবে লক্ষ লক্ষ মানুষকে ৷

বিশ্বব্যাপী কার্বন নির্গমন 2.6-3.1 ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে, বিপর্যয় সামলাতে কী করা উচিত? (গ্রাফিক্স)

কোনও পদক্ষেপ না হওয়ায় ইতিমধ্যেই বায়ুমণ্ডলে 20 থেকে 35 গিগাটন কার্বন ডাই অক্সাইড যোগ করেছে, যা 1.5 ডিগ্রি সেলসিয়াসের পথকে আরও তরান্বিত করেছে ৷ ইউএনইপি যেমন স্পষ্টভাবে বলেছে, "পদক্ষেপের অভাব এবং সময় নষ্ট হওয়ার কারণে অবশিষ্ট কার্বন বাজেট কমে গিয়েছে এবং কার্বন-নিবিড় পরিকাঠামো বন্ধ হওয়ার ঝুঁকি বেড়েছে ।"

আগামীর পথ: নবায়নযোগ্য শক্তি ও বন

ভয়ঙ্কর দৃষ্টিভঙ্গি সত্ত্বে প্রতিটি দেশ যদি ঠিকমতো কাজ করে, তাহলে দ্রুত নির্গমন হ্রাস হতে পারে বলে আশাবাদী ইউএনইপি ৷ তবে এই বিষয়ে তারা সতর্কও রয়েছে ৷ উন্নত বন ব্যবস্থাপনা-সহ সৌর এবং বায়ু শক্তি সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিমূলক সমাধানের কথা বলে । সৌর ফোটোভোলটাইক প্রযুক্তি ও বায়ু শক্তি সম্প্রসারণ 2030 সালের মধ্যে 27 শতাংশ এবং 2035 সালের মধ্যে 38 শতাংশ নির্গমন কমাতে পারে । উপরন্তু, পুনর্বনায়ন, বনায়ন এবং উন্নত বন ব্যবস্থাপনা এই একই সময়ের মধ্যে সম্ভাব্য নির্গমন হ্রাসের 20 শতাংশের জন্য দায়ী হতে পারে ।

বিশ্বব্যাপী কার্বন নির্গমন 2.6-3.1 ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে, বিপর্যয় সামলাতে কী করা উচিত? (গ্রাফিক্স)

ইউএনইপি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে উন্নয়নশীল দেশগুলিকে সহায়তা করার জন্য বর্ধিত আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং বেসরকারি ক্ষেত্রকে বৃহত্তর ভাবে সঙ্গে নেওয়ার জন্য আবেদন করেছে ৷ যাতে জলবায়ু সংক্রান্ত কাজের জন্য একটি বিশ্বব্যাপী ও ক্রস-সেক্টর পদ্ধতি করা যায় ৷ ইউএনইপি সমস্যা মোকাবিলায় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার জন্য তহবিল ছয়গুণ বৃদ্ধির পক্ষে সওয়াল করেছেন ৷

জলবায়ু যুদ্ধে ভারতের ভূমিকা

ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম নির্গমনকারী দেশ ৷ 2023 সালে ভারতের নির্গমনের পরিমাণ 6.1 শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে । যদিও দেশের মাথাপিছু নির্গমন এখনও 2.9 টন-এ রয়েছে ৷ যা তুলনামূলকভাবে কম৷ এটা বিশ্বের নির্গমন গড় থেকে অনেক নীচে রয়েছে ৷ দ্রুত শিল্পায়ন নির্গমনের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি করছে ৷ প্যারিস চুক্তির অধীনে 2005 সালের স্তরের তুলনায় 2030 সালের মধ্যে নির্গমনের তীব্রতা 33-35 শতাংশ কমানোর লক্ষ্য রয়েছে ভারতের সামনে ৷ এক্ষেত্রে ভারতের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কয়লার উপর অত্যধিক নির্ভরতা ।

তবে, আশা আছে। ভারত দ্রুত তার সৌর ও বায়ু শক্তির ক্ষমতাকে প্রসারিত করছে এবং পরিচ্ছন্ন শক্তি ব্যবহারের দিক থেকে সারা বিশ্বে পথপ্রদর্শক হয়ে উঠতে পারে ৷ যাইহোক, সাফল্যের জন্য কেবল শক্তিশালী দেশীয় নীতিই নয়, প্রযুক্তি স্থানান্তর এবং জলবায়ু অর্থায়নের আকারে আন্তর্জাতিক সমর্থনও প্রয়োজন ।

কোপ 29 ও কোপ 30 এর জন্য দাবি

2024-এ কোপ 29 এবং 2025-এ কোপ 30-এর জন্য বিশ্ব নেতারা একত্রিত হওয়ার সময়, তারা একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হন: বিপর্যয়কারী উষ্ণায়নের পথে চলতে হবে না-হলে 1.5 ডিগ্রি সেলসিয়াসের নাগালের মধ্যে রাখতে প্রয়োজনীয় সাহসী পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করতে হবে ৷ ইউএনইপির কাছে স্পষ্ট যে এনডিসি-এর পরবর্তী রাউন্ড, যা 2025 সালের শুরুর দিকে হবে, সেখানে অবশ্যই নির্গমন হ্রাস করা নিয়ে অভূতপূর্ব কোনও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হবে ।

রিপোর্টের বার্তা গুরুত্বহীন: সমস্ত দেশ, বিশেষ করে জি20 ভুক্ত দেশগুলিকে আরও কিছু করতে হবে । সরকার, ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষকে এখনই কাজ করতে হবে । কোনও পদক্ষেপ না-করার দাম খুব বেশি এবং কাজ করার সময় ফুরিয়ে আসছে ।

ইউএনইপির এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ইঙ্গার অ্যান্ডারসেন জরুরি পরিস্থিতির সারসংক্ষেপ করেছেন: "আর কোনও গরম বাতাস থাকতে পারে না ।" কোপ 29 অবশ্যই পদক্ষেপ প্রদান করবে এবং 2025 সালে ব্রাজিলে কোপ 30-কে অবশ্যই একটি টার্নিং পয়েন্ট হতে হবে, যেখানে বিশ্ব অবশেষে একটি বাসযোগ্য ভবিষ্যত সুরক্ষিত করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রধান পদক্ষেপগুলির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হবে । নির্গমন ব্যবধান প্রশস্ত হচ্ছে ৷ তবে এই লক্ষ্য পূরণ করতে এখনও খুব বেশি দেরি হয়নি ।

(এই নিবন্ধে প্রকাশিত মতামতগুলি লেখকের । এখানে প্রকাশিত তথ্য এবং মতামত ইটিভি ভারত-এর মতামতকে প্রতিফলিত করে না ৷)

ABOUT THE AUTHOR

...view details