লেহ, 23 জানুয়ারি: পর্যটকদের ঘোরার অন্যতম স্থান হতে চলেছে লাদাখের গালওয়ান উপত্যকা ৷ কারণ খুব শীঘ্র পর্যটকদের জন্য খুলে যাচ্ছে গালওয়ান উপত্যকার দরজা ৷ এখানেই 2020 সালের জুনে ভারতীয় এবং চিনা সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল ৷ এবার পর্যটকরা এখানে বেড়াতে যেতে পারবেন ৷ তবে কেবল দেশীয় পর্যটকদেরই সেই সুযোগ মিলবে ৷
স্থানীয় প্রশাসন ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং স্থানীয় স্টেকহোল্ডারদের সহযোগিতায় গালওয়ান উপত্যকা এবং হট স্প্রিং এলাকাটি অভ্যন্তরীণ পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা শুরু হয়েছে ৷ তার জন্য পরিকাঠামোগত উন্নয়ন এবং বাকি নিরাপত্তার দিকটি খতিয়ে দেখার কাজ ইতিমধ্যেই চলছে ।
15 জানুয়ারি সেনা দিবসে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং আনুষ্ঠানিকভাবে গালওয়ান উপত্যকা পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন ৷ তিনি জানান, এর ফলে এই পদক্ষেপ ওই অঞ্চলে সীমান্ত ও গ্রামীণ পর্যটনকে উৎসাহিত করবে এবং স্থানীয় সম্প্রদায়কে অর্থনৈতিকভাবে আরও চাঙ্গা করে তুলবে বলে আশা করা হচ্ছে । লাদাখের পর্যটন শিল্প এবং আঞ্চলিক উন্নয়নের জন্য ভারতীয় সেনাদের আত্মত্যাগের স্মরণে যুদ্ধের স্মারক বা স্মৃতিসৌধ স্থাপন থেকে শুরু করে বন্যপ্রাণী এবং সাংস্কৃতিক পর্যটনের প্রচার করা হচ্ছে ৷
- গালওয়ান উপত্যকা খোলার দিনক্ষণ
সূত্রের খবর, চলতি বছরের জুন মাস থেকে পর্যটকদের জন্য খুলে যেতে পারে গালওয়ান উপত্যকা ৷ এই উদ্যোগটি লাদাখের ঐতিহ্যকে তুলে ধরা, অর্থনৈতিক বৃদ্ধি এবং সশস্ত্র বাহিনীর বীরত্বকে সম্মান করার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসাবে চিহ্নিত করে ।
অল লাদাখ ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী সদস্য এবং রেকি টিমের প্রতিনিধি লবজাং বিসুধা ইটিভি ভারতকে বলেন, "অল লাদাখ ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন, ট্যাক্সি ইউনিয়ন, টেম্পো ইউনিয়ন, বাইক ইউনিয়ন এবং এএলজিএইচএ প্রতিনিধিদের 10-সদস্যের একটি দল 19 জানুয়ারি গালওয়ান এলাকার রেকি করে । রেকিটি জিওসি খারু বিভাগ দ্বারা আয়োজন করা হয়েছিল এবং প্রাথমিকভাবে এলাকাটি দেশীয় পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে ।"
তাঁর কথায়, "প্যাংগং হ্রদ বিপুল সংখ্যক পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে ৷ এবার গালওয়ানও পর্যটনক্ষেত্র হিসাবে সেই তালিকায় যুক্ত হতে চলেছে ৷ 2020 সালে গালওয়ান হামলায় কর্নেল সন্তোষ বাবু শহিদ হয়েছিলেন, যিনি কোভিড অতিমারী চলাকালীনও এলাকাটিকে স্পটলাইটে এনেছিলেন । পরিকাঠামোগত উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে এই অঞ্চলটি 15 জুনের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে পর্যটকদের জন্য খুলে যাবে । এর ফলে লাদাখে প্রচুর পরিমাণে দেশপ্রেমিক পর্যটক আসবে ।"
লবজাং বিসুধা জানান, দুটি মূল পয়েন্ট করার পরিকল্পনা করা হয়েছে ৷ একটি হল ডারবুক থেকে 56 কিলোমিটার দূরে, যেখানে একটি ক্যাফেটেরিয়া, স্যুভেনির শপ এবং প্রায় 30 জন লোকের আবাসন তৈরি করা হচ্ছে এবং আরেকটি ডারবুক থেকে 120 কিলোমিটার দূরে । শায়োক হল শেষ বসতি গ্রাম । এর বাইরে আর কোনও জনবসতি নেই ৷
- স্মৃতিসৌধ ও মিউজিয়াম
এই নয়া উদ্যোগকে এলএএইচডিসি লেহ'র এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলর তাশি নামগিয়াল ইয়াকজি আনন্দের মুহূর্ত বলে অভিহিত করেছেন এবং জানান, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে গালওয়ানকেও পর্যটনক্ষেত্র হিসাবে গড়ে তোলার জন্য চেষ্টা করছিলেন ৷ তিনি বলেন, "2020 সালের গালওয়ানের ঘটনার পর এই উপত্যকা উল্লেখযোগ্য মনোযোগ আকর্ষণ করেছে এবং লোকেরা এই অঞ্চলটি দেখার জন্য খুব উৎসাহিত । প্রতিরক্ষা কর্তৃপক্ষও গত দুই থেকে তিন বছর ধরে এটি নিয়ে কাজ করছে ৷ একটি যুদ্ধের স্মৃতিসৌধ স্থাপনের ব্যবস্থা করা হয় ৷"
ইয়াকজি জানিয়েছেন, তাঁরা সম্প্রতি এই উদ্যোগের বিষয়ে ডারবুকে একটি বৈঠক করেছেন । তিনি বলেন, "2020 সালের স্মৃতিসৌধের অংশ হিসাবে গালওয়ানে একটি মিউজিয়ামও তৈরি করা হচ্ছে । পর্যটকরা এই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় অপূর্ব সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করার এবং দুই দিনের বার্ষিক বৌদ্ধ উৎসব তারসিং কার্মোর সাক্ষী হওয়ার সুযোগ পাবে ৷"
তাঁর কথায়, "এই উদ্যোগটি পূর্ব লাদাখের জনগণকে উপকৃত করবে ৷ এই অঞ্চলের সামগ্রিক উন্নয়নে অবদান রাখবে ৷ প্রাচীন সিল্ক রুট এবং দুর্গের অবশিষ্টাংশ-সহ এই অঞ্চলের ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে । গালওয়ান লেহ জেলা সদর থেকে 240 কিলোমিটার এবং জেলার ডরবুক তহসিল থেকে 120 কিলোমিটার দূরে ।"
- অর্থনৈতিক উন্নয়ন
তাশি নামগিয়াল ইয়াকজি ইটিভি ভারতকে আরও বলেন, "ডারবুক মহকুমার পর্যটকরা প্যাংগং হ্রদে ভ্রমণ করে এবং একই দিনে ফিরে আসতে পারে । যদি গালওয়ান খোলা হয় তাহলে পর্যটকদের গাড়িতে করে 120 কিলোমিটার ভ্রমণ করতে হবে এবং ডারবুকের গ্রামে রাত্রিযাপন করতে হবে । এই বর্ধিত যাত্রাপথ স্থানীয় অর্থনীতিতে ট্যাক্সি, হোটেল, গেস্ট হাউস এবং রেস্তোরাঁ-সহ উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাব ফেলবে ৷ কারণ লাদাখ মূলত পর্যটনের উপর নির্ভর করে ৷"
তিনিও নিশ্চিত করেছেন, 2025 সালের মে বা জুনের মধ্যে গালওয়ানকে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে ৷ 2020 সালের ঘটনার পরে গালওয়ানে ভ্রমণের উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল ৷ বর্তমানে, ডারবুক এবং শায়োকের স্থানীয়রা মেষপালক এবং পোর্টার-সহ বিশেষ অনুমতি নিয়ে এলাকায় প্রবেশ করতে পারে ৷ কারণ তাদের ঘোড়া এবং ইয়াকগুলি এই অঞ্চলের খুব কাছাকাছি চরে বেরায় ।
ইয়াকজির বক্তব্য, "আমরা আমাদের বিবৃতি তৎকালীন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের কাছে জমা দিয়েছিলাম, যখন তিনি সেতু উদ্বোধনের জন্য 2017 সালে শায়োক পরিদর্শন করেছিলেন । একইভাবে, বর্তমান প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং দু'বার একবার শায়কে এবং অন্যবার ডিবিওতে উদ্বোধনের জন্য এই অঞ্চলটি পরিদর্শন করেছেন ৷"
- বন্যপ্রেমীদের আকর্ষণের কেন্দবিন্দু
চুশুলের কাউন্সিলর কনচোক স্ট্যানজিনও গালওয়ান উপত্যকা খোলার খবরে সিলমোহর দিয়েছেন ৷ তিনি জানান, কর্তৃপক্ষ পর্যটকদের জন্য গালওয়ান এবং হট স্প্রিং খোলার পরিকল্পনা করছে । তিনি বলেন, "গালওয়ানের ঘটনায় শহিদ হওয়া 20 জন জওয়ানকে সম্মান জানাতে গালওয়ানে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণের পরিকল্পনা করছে সেনাবাহিনী । হট স্প্রিং-এ আমাদের কাছে ইতিমধ্যেই করম সিং এবং তাঁর দল-সহ 10 জন সিআরপিএফ জওয়ানকে উৎসর্গ করে একটি স্মৃতিসৌধ রয়েছে ৷ ওইসব জওয়ানরা 1959 সালে চিনা বাহিনীর অতর্কিত হামলায় শহিদ হয়েছিলেন ।"
স্ট্যানজিন জানিয়েছেন, গত বছর কু ভ্যালিতে ট্রেকিং শুরু করার সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যেই মার্টসেমিক পর্যন্ত প্রবেশের দরজা খুলে দিয়েছে । হট স্প্রিং এলাকা নিয়ে তিনি বলেন, এই এলাকায় বন্যপ্রাণী পর্যটনের উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা রয়েছে । এই অঞ্চলটি অনন্য প্রজাতির যেমন বন্য ইয়াক, অ্যান্টিলোপ, প্যালাসের বিড়াল, তুষার চিতা, লিংক্স এবং অন্যান্য বিভিন্ন প্রাণীর আবাসস্থল । এখানে পর্যটনের প্রচার শুধু বন্যপ্রেমীদের আকৃষ্ট করবে না, বরং এই অঞ্চলে পরিকাঠামোগত উন্নয়নকেও উৎসাহিত করবে ৷"
গালওয়ান সংঘর্ষের পর প্রথম, চিনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক রাজনাথের