পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / opinion

সকলের জন্য বাড়ি, লক্ষ্য পূরণে সরকারের নীতির পরিবর্তন প্রয়োজন - Housing for All

Housing for All: কাউকে রাস্তায় শুয়ে রাত কাটাতে হবে না ৷ ভারতের সব বাসিন্দার কাছে বসবাসের বাড়ি থাকবে ৷ 'সকলের জন্য বাড়ি'-র স্বপ্ন অর্জনে সহায়তা করবে সরকারের নীতির পরিবর্তন । এই নিয়ে লিখছেন বিশ্বভারতীর অর্থনীতি ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক সৌম্যদীপ চট্টোপাধ্যায় ৷

Housing for All
সকলের জন্য বাড়ির লক্ষ্য (নিজস্ব ছবি)

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jun 22, 2024, 4:56 PM IST

হায়দরাবাদ, 22 জুন: পেটে দু'মুঠো ভাত ও মাথার উপর এক টুকরো ছাদ ৷ সব খেটে খাওয়া মানুষের খুব সাধারণ চাহিদা ৷ সেই চাহিদা মেটাতে গ্রাম ছেড়ে শহরতলি এবং শহরমুখী হচ্ছেন রোজ লক্ষ লক্ষ মানুষ ৷ তাদের একটা বাড়ি চাই ৷ কিন্তু সকলের ক্ষমতায় হয়তো নিজেদের বাড়ি করে ওঠা হয় না ৷ তাই তাদের ভরসা বলতে ভাড়ার বাড়ি বা আবাসন ৷

সেখানেই কলকাতা, হায়দরাবাদ-সহ শহরগুলিতে কয়েক লক্ষ মানুষ থাকে ৷ তাই ভাড়া বাড়ির চাহিদা দিন দিন বাড়ছে ৷ সেই চাহিদা মেটাতে দরকার আরও আবাসন ৷ প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় শহরে বাড়ি তৈরি হচ্ছে ৷ তবে ভাড়ার বাড়ির চাহিদার দিকে নজর দিতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারকে ৷ তার জন্য ভাড়া বাড়ি সম্পর্কিত একটি বড় নীতি পরিবর্তনের প্রয়োজন ।

শহরে আবাসনের ঘাটতি বোঝা দরকার

কেন্দ্রে নবনির্বাচিত এনডিএ সরকার তার প্রথম বৈঠকে ভারতের গ্রামীণ এবং শহুরে উভয় মিলিয়ে 30 মিলিয়ন অতিরিক্ত বাড়ি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে । অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এবারের অন্তর্বর্তী বাজেটে আগামী পাঁচ বছরে গ্রামীণ এলাকায় অতিরিক্ত 2 কোটি বাড়ি নির্মাণের কথা উল্লেখ করেছিলেন । তাই শহুরে অঞ্চলগুলি 10 মিলিয়ন অতিরিক্ত বাড়ি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে ৷ ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর রিসার্চ অন ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক রিলেশনস রিপোর্ট (2020) অনুযায়ী, 2018 সাল পর্যন্ত থাকা 29 মিলিয়নের শহরে বাড়ির ঘাটতি ছিল ৷ অতিরিক্ত বাড়ি নির্মাণ সেই ঘাটতি মেটাবে বলে মনে করা হচ্ছে ৷ তবে পুরোপুরি নয় ৷

চলতি বছরের 10 জুন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার অধীনে শহরের জন্য প্রায় 11.86 মিলিয়ন বাড়ি অনুমোদন করা হয়েছে, যার মধ্যে 11.43 মিলিয়ন ঘর নির্মাণের কাজ চলছে এবং 8.37 মিলিয়ন ঘর নির্মাণের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে । সুতরাং, আবাসন ঘাটতির শহরে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ৷ এর জন্য নীতি বা পলিসি দরকার । ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর রিসার্চ অন ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক রিলেশনস রিপোর্ট (2020) বলে যে, 99 শতাংশ শহরের বাসিন্দারা বাড়ির ঘাটতির সম্মুখীন হয় এবং তাঁদের সকলের আয় কম । কারণ তাঁরা হয়তো এমন কাজ করেন যে তার জন্য ঋণ পান না । এর ফলে বাড়িও করতে পারেন না ৷

সরকারি আবাসন নীতির গুরুত্ব

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (শহুরে)-সহ ভারতে সরকারি আবাসন নীতিগুলি 'সকলের জন্য বাড়ি'র স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করছে ৷ তবে এর সূচনা পর্বে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (শহুরে) 2022 সালের মধ্যে সকলের জন্য আবাসনের অংশ হিসাবে 20 মিলিয়ন বাড়ির মধ্যে 20 শতাংশ ভাড়ার জন্য একচেটিয়াভাবে নির্মাণ করার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করেছিল । এক্সপেনডিচার ফিনান্স কমিটি পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (শহুরে)তে ভাড়া বাড়ির জন্য 6 হাজার কোটি টাকা অনুমোদন করেছে ।

এরপরেই অবশেষে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (শহুরে) 2015 সালের শেষের দিকে ব্যক্তিগত মালিকানার আবাসনের অধীনে চালু করা হয়েছিল ৷ ব্যক্তিগত মালিকানার আবাসনের বিধানের চারটি মূল বিষয় হল- বস্তিগুলির পুনঃউন্নয়ন, সরকার থেকে বাড়ি কেনার জন্য সুদের হার ভরতুকি পাওয়ার বিধান-সহ ক্রেডিট-সংযুক্ত ভরতুকি প্রকল্প, নির্মাণকারীদের জন্য ভরতুকি বিধানের সঙ্গে অংশীদারিত্বে সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন এবং সুবিধাভোগীর নেতৃত্বে বাড়ি নির্মাণ বা বর্ধিতকরণের জন্য আর্থিক সহায়তা । বাস্তবে নিজের নামে জমি না থাকায় আইনি ও প্রশাসনিক জটিলতা, বাড়ি তৈরির খরচের সঙ্গে মেলে এমন সুদের হারের ভরতুকির অপর্যাপ্ততা, আবাসন তৈরির জন্য জায়গার অভাব এবং বেসরকারি খাতে সমস্যা শহরে আবাসন ঘাটতি মোকাবিলায় প্রকল্পটির কার্যকারিতাকে বাধাগ্রস্ত করেছে ।

ভাড়া বাড়ির চাহিদা বৃদ্ধি

ভারতীয় শহরে ভাড়া বাড়িতে কম দামে থাকতে পছন্দ করেন বাসিন্দারা ৷ প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (শহুরে) প্রকল্পে ভাড়া বাড়ির তেমন জায়গা নেই ৷ কম আয় রয়েছে এমন মানুষেরা বিশেষত ভাড়ার বাড়িতে থাকেন । 2011 সালের আদমশুমারির তথ্য অনুসারে, 27.5 শতাংশ শহুরে পরিবার ভাড়া বাড়িতে বাস করে এবং 2001 থেকে 2011 সালের মধ্যে ভাড়া বাড়িতে বসবাসকারী শহুরে পরিবারের সংখ্যা 6.4 মিলিয়ন বেড়েছে ।

মজার বিষয় হল, ওই একই সময়ে শহরাঞ্চলে 4.6 মিলিয়ন বাড়ি খালি হয়েছে ৷ এই পরিসংখ্যানই ভাড়া বাড়ি এবং খালি আবাসন ইউনিটগুলির জন্য অপূর্ণ চাহিদার সহাবস্থানকে নির্দেশ করে । এনএসএসও 2018 রিপোর্ট ইঙ্গিত দেয় যে, ভারতের সমস্ত শহুরে পরিবারের এক-তৃতীয়াংশ ভাড়া বাড়িতে বাস করে এবং বেশিরভাগ শহরে একই রকম ছবি । প্রায় 70 শতাংশ ভাড়াটেদের বাড়িওয়ালার সঙ্গে কোনও চুক্তিপত্র নেই এবং তাদের গড় মাসিক ভাড়া 3 হাজার 150 টাকা ।

বাড়িওয়ালা এবং ভাড়াটিয়া কথা বলে ভাড়ার বিষয়ে বোঝাপড়া করে নেন, যা সাধারণ ভাড়ার চেয়ে বেশি হয় । মালিকপক্ষের তুলনায় ভাড়া থাকা পরিবারগুলির শৌচালয় এবং জল সরবরাহে অবস্থা খুবই খারাপ । এমনকী বেশিরভাগ শহরে বসবাসকারী ভাড়াটিয়ারা সাধারণ মৌলিক পরিষেবাগুলিও পান না । তার উপর ভাড়া বাড়িতে বসবাসকারী শহুরে পরিবারের অনুপাত বৃদ্ধি পাচ্ছে যখন মাথাপিছু মাথাপিছু ব্যয় বাড়ছে । এটি নিম্ন-আয়ের পরিবারের জন্য নিজের বাড়ি থেকে ভাড়া থাকা বেশি গুরুত্বপূর্ণ ।

সমস্যা এবং সমাধান

এখনকার আবাসন নীতিগুলি বেশিরভাগ মালিকপক্ষের সহায়ক ৷ ভাড়ার সর্বোচ্চ সীমা-সহ ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ব্যাপকতা বাড়ি ভাড়ার বাজারে কিছু সীমাবদ্ধতা তৈরি করেছে । নিম্ন ভাড়া (সম্পত্তি মূল্যের ভাগ হিসাবে বার্ষিক ভাড়া) একটি গুরুতর সমস্যা ৷ কারণ আইডিএফসি 2018 রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতীয় শহরগুলিতে আবাসিক ভাড়া আয়ের 2 থেকে 4 শতাংশের মধ্যে থাকে ৷ উচ্ছেদ-সহ মালিক ও ভাড়াটিয়া বিরোধগুলি প্রতিকার দরকার । এই সবকিছুর জন্য মালিকপক্ষ বাড়ি ভাড়া দিতে পিছপা হন ৷ এমনকী তারা ভাড়া দেওয়া বাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ এবং আপগ্রেড বা প্রসারিত করার জন্য খুব কমই কোনো প্রচেষ্টা করে । বাড়ি ভাড়া কম পাওয়া যাওয়ার ফলে বাজারে বাড়ির ভাড়া বৃদ্ধি পায় এবং এর ফলে শহরে বসবাসকারী দরিদ্ররা বাড়ি ভাড়া নিতে পারে না ।

তবে ইতিবাচক দিকও রয়েছে ৷ রেন্টাল হাউজিং মার্কেটে সমস্যাগুলি মোকাবিলা করার জন্য 2021 সালে মডেল টেন্যান্সি অ্যাক্ট (MTA) চালু করা হয়েছিল । তার বেশ কয়েকটি বিধান রয়েছে ৷ যেমন, কেবল দুই মাসের অগ্রিম ভাড়া দিতে হবে, সময়মতো বাড়ি খালি না করলে ভাড়াটিয়াকে ভারী জরিমানা দিতে হবে, পর্যাপ্ত কারণ ছাড়াই নির্বিচারে ভাড়া বাড়ানোর জন্য মালিকপক্ষের উপর নিষেধাজ্ঞা এবং নোটিশ দিয়ে বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়া উভয়ের দ্বন্দ্ব মেটাতে হবে ।

রেন্টাল কোর্ট ও রেন্টাল ট্রাইব্যুনাল দ্রুত ভাড়া সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করতে পারে ৷ তা সত্ত্বেও মাত্র চারটি রাজ্য তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ এবং অসম এমটিএ 2021-এর আদলে তাদের ভাড়াটে আইন সংশোধন করেছে । আইন না বোঝার ফলে ভাড়া চুক্তির জটিলতায় যেতে চান না অনেকে ৷ সংখ্যালঘু-সহ সামাজিকভাবে অনগ্রসর শ্রেণির স্বার্থ রক্ষার জন্য বৈষম্য-বিরোধী ধারার অনুপস্থিতি ভাড়াটিয়াদের চুক্তি করা থেকে বিরত রাখে ৷ বিশেষ করে শহুরে দরিদ্ররা চুক্তিতে যেতে চায় না ৷

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

ভারতে জনসংখ্যার মধ্যে কয়েক কোটি মানুষ শহরে থাকে ৷ ফলে আবাসনের চাহিদা ভবিষ্যতে আরও বাড়তে থাকবে । এই চাহিদা মেটাতে ভাড়ার আবাসনের সম্ভাবনাকে উপেক্ষা করা উচিত নয় ৷ পেশাগতভাবে ভাড়া ব্যবস্থাপনা কমিটিগুলিকে এর সঙ্গে জড়িত সম্ভাবনাগুলি অন্বেষন করা দরকার । একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ হল সমাজের দুর্বল অংশের স্বার্থ রক্ষার জন্য উপযুক্ত সংশোধনী-সহ এমটিএ-এর বাস্তবায়ন করা । এটি বাড়ি ভাড়ার বাজারকে বৃদ্ধি করবে এবং 'সকলের জন্য বাড়ি'-এর স্বপ্ন অর্জনে সহায়তা করবে ।

ABOUT THE AUTHOR

...view details