কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন 2025-26 অর্থবর্ষের বাজেট বক্তৃতায় প্রতিরক্ষা খাতে 6,81,210 কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন । এটি আগের বছরের তুলনায় 9.53 শতাংশ বেশি । প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো বাজেটের প্রশংসা করে বলেছে, 'এই বরাদ্দ আসন্ন অর্থবর্ষে পরিকল্পিত বড় অধিগ্রহণে সুবিধে দেবে এবং যৌথ ও একত্রিত হওয়ার উদ্যোগকে শক্তিশালী করবে ।' তারা আরও বলেছে যে, 'প্রতিরক্ষা উৎপাদন খাতে মূলধন বিনিয়োগ জাতীয় অর্থনীতিতে একটি বহুমুখী প্রভাব ফেলে, যা জিডিপি বৃদ্ধি করবে এবং এই দেশের যুবকদের জন্য আরও বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে ।'
প্রতিরক্ষা বরাদ্দ কেন্দ্রীয় বাজেটের 13.45% এবং এটি সমস্ত মন্ত্রকের মধ্যে সর্বোচ্চ । প্রতিরক্ষা বাজেট গত পাঁচ বছর ধরে 14%-এর নীচে রয়ে গিয়েছে । এটি জিডিপির 1.91% । এমনকি এই শতাংশও ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে, তবে অর্থনীতি এবং বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি পাচ্ছে । 2020-21 সালে প্রতিরক্ষা বরাদ্দ ছিল জিডিপির 2.4%, 2022-23 সালে ছিল জিডিপির 2.1%, গত বছর এই বরাদ্দ ছিল জিডিপির 1.98% এবং এবার তা 1.91%। যদিও সামগ্রিক বরাদ্দ 9.53% বৃদ্ধি পেয়েছে, তবে জিডিপির তুলনায় তা 0.07% হ্রাস পেয়েছে ।
2020 সালের জুনে গলওয়ানের ঘটনা ঘটেছিল, যার ফলে 2020-21 সালে জিডিপির শতাংশ হিসাবে প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছিল । তবে বছরের পর বছর ধরে, এই শতাংশ হ্রাস পেয়েছে ৷ যার অর্থ, সরকার শুধু কোনও সংকটের সময় কাজ করে । সশস্ত্র বাহিনীর ক্রমাগত চাহিদা কমপক্ষে 2.5-3%, তবে এটি একটি স্বপ্নই রয়ে গিয়েছে ।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জোর দিয়ে বলছেন যে, ন্যাটো সদস্যরা প্রয়োজনীয় সক্ষমতা তৈরির বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য তাদের জিডিপির 5% প্রতিরক্ষায় ব্যয় করবে, যদিও বেশিরভাগ দেশ এখনও তার পূর্ববর্তী 2% চাহিদা স্পর্শ করতে পারেনি । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার জিডিপির প্রায় 3.5% প্রতিরক্ষায় ব্যয় করে, যা ভারতের থেকে অনেক বেশি, যেখানে চিন 'আনুষ্ঠানিকভাবে' তার জিডিপির 1.8% প্রতিরক্ষায় ব্যয় করে । চিনের জিডিপি ভারতের পাঁচ গুণ । চিনা পরিসংখ্যানে যা অনুপস্থিত তা হল, বেসামরিক ও সামরিক প্রযুক্তিতে দ্বৈত ব্যবহারের বিনিয়োগ এবং কৌশলগত পরিকাঠামো তৈরি । এসআইপিআরআই (স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট)-এর পরিসংখ্যান, বিশ্বব্যাপী গড় হল জিডিপির প্রায় 1.8%।
কোনও সন্দেহ নেই যে, প্রতিটি দেশের নিজস্ব কিছু হুমকি রয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তাও রয়েছে । যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি বিশ্বব্যাপী সামরিক অগ্রাধিকার বজায় রাখতে চায় এবং চিন সামরিক সক্ষমতা ও তাইওয়ান পুনরুদ্ধারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলিত হওয়ার দিকে মনোনিবেশ করে, আবার ভারতের সামাজিক এবং পরিকাঠামোগত উন্নয়নের চাহিদা বেশি । একইসঙ্গে, একটি দেশ অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিকভাবে সুরক্ষিত না-হলে, তারা বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারে না । এই চাহিদাগুলির ভারসাম্য বজায় রাখা সরকারের কাজ । তবে, প্রতিরক্ষা ব্যয় কম থাকলে তা বর্ধিত হুমকিগুলির পথ সুগম করে কারণ সেই হুমকি মোকাবিলার ক্ষমতা সে দেশের তখন থাকে না ৷
প্রতিরক্ষা মূলধন বাজেট 1,85,000 কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা মোট প্রতিরক্ষা বরাদ্দের 27%। এর থেকে, সেনাবাহিনীর আধুনিকীকরণের জন্য প্রায় 1,50,000 কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে । এর মধ্যে, বিমান এবং বিমান ইঞ্জিন ক্রয়ের জন্য 48,614 কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, যেখানে নৌ-শক্তি বৃদ্ধির জন্য 24,390 কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে । অন্যান্য সরঞ্জামের জন্য 63,099 কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে ।
এছাড়াও, গবেষণা ও উন্নয়ন এবং সীমান্ত পরিকাঠামোগত সম্পদ নির্মাণের জন্য 31,000 কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে । যা অজানা রয়ে গিয়েছে তা হল, পূর্ববর্তী ক্রয় থেকে সংগৃহীত বাহিনীর অমীমাংসিত দায় । এই সংখ্যাটি সরিয়ে ফেলা হলে আধুনিকীকরণের জন্য প্রকৃত পরিমাণ জানা যাবে । আধুনিকীকরণের জন্য 27% বরাদ্দ বেশ কম ।
এমনও রিপোর্টও রয়েছে যে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রক পূর্ববর্তী বছরের বরাদ্দ করা মূলধন বাজেটের থেকে 12,500 কোটি টাকা ফেরত দিয়েছে, কারণ সেই টাকা তারা ব্যবহার করতে পারেনি । এটি দুটি দিক তুলে ধরে, প্রথমত, দীর্ঘমেয়াদী ক্রয় পদ্ধতি হল আদপে একটি প্রত্যাখ্যান পদ্ধতি । 'সংস্কারের বছরের' অংশ হিসাবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ক্রয়ের সঙ্গে জড়িত উপাদানগুলির পুনর্মূল্যায়ন এবং টাইম ফ্যাক্টর হ্রাস করার কথা ঘোষণা করেছে । আশা করা হচ্ছে যে, এটি বাস্তবায়িত হবে এবং পদ্ধতিগুলি সরলীকৃত ও দ্রুততর করা হবে ।