হায়দরাবাদ, 15 মার্চ: গত কয়েক মাস ধরেই নয়াদিল্লি ও মালের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে । ফের একবার হুঁশিয়ারি দিয়ে মলদ্বীপের রাষ্ট্রপ্রধান মহম্মদ মুইজ্জু জানিয়ে দিয়েছেন, দেশে থাকতে পারবে না কোনও ভারতীয় সেনা ৷ পাশাপাশি চিনা গবেষণা জাহাজ 'জিয়াং ইয়াং হং 3'কে মালে বন্দরে ডক করার ছাড়পত্র দিয়েছে মালদ্বীপ ৷ এর আগে যেই জাহাজটিকে নিজেদের বন্দরে নোঙর করার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছিল শ্রীলঙ্কা ৷
মুইজ্জু 2023 সালের নভেম্বরে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন । তাঁর নির্বাচনী প্রচারে তিনি বলেছিলেন যে, তিনি তাঁর দ্বীপরাষ্ট্র থেকে প্রায় 75 জন ভারতীয় সামরিক কর্মীদের একটি ছোট দলকে সরিয়ে দেবেন এবং মালদ্বীপের 'ভারত প্রথম' নীতি পরিবর্তন করবেন । অতীতে মলদ্বীপের রাষ্ট্রপ্রধানরাই বিস্তৃত দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক এবং ভারতের সঙ্গে সে দেশের সম্পর্ক বিবেচনা করে প্রথমেই ভারত সফর করেছিলেন ৷ তারপরে চিন সফরে যান ৷ চিন মলদ্বীপে বড় প্রকল্পে বিনিয়োগ করে দ্বীপরাষ্ট্রে তার প্রভাব বিস্তার করেছে । মুইজুই প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান যিনি প্রথমে চিন সফরে যান ৷
ক্রমশ তলানিতে পৌঁছেছে ভারত-মালদ্বীপ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক
- স্বাস্থ্যখাতকে লক্ষ্য করে নয়াদিল্লির ওপর চাপ সৃষ্টি করছে মাল । চিকিৎসার জন্য মলদ্বীপের সার্বজনীন স্বাস্থ্যবীমা প্রকল্প, ‘আসান্ধা’র (Aasandha) অধীনে তালিকাভুক্ত হাসপাতালগুলি শুধুমাত্র ভারত এবং শ্রীলঙ্কায় থাকলেও তার সিংহভাগ ছিল ভারতে । বিদেশী হাসপাতালে আসান্ধার বিতরণ করা সবচেয়ে বেশি অর্থ ভারতীয় হাসপাতালে গিয়েছে । মুইজ্জুর নির্দেশের পরেই এখন তাইল্যান্ড এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর (ইউএই) সঙ্গেও আলোচনা করছে সেদেশ । দু’দেশই চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানকারীদের মধ্যে শীর্ষে থাকলেও সেদেশ খরচ অপেক্ষাকৃত বেশি ।
- বিনামূল্যে সামরিক সহায়তার জন্য প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি এবং হাইড্রোগ্রাফিক সমীক্ষা পরিচালনার জন্য ভারতের সঙ্গে চুক্তি পুনর্নবীকরণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মলদ্বীপ ৷ যা তাদের সঙ্গে চিনের সম্পর্ক বৃদ্ধির আরেকটি নিদর্শন ৷
- ভারত মহাসাগরে ক্রমবর্ধমান সামুদ্রিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে ৷ যা ভারতীয় বাণিজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক জলসীমায় নৌ-চলাচলের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বিগ্ন ৷ তথ্যবিশ্লেষণকারী সংস্থা উড ম্যাকেঞ্জির মতে, ভারত তার তেলের চাহিদার 88 শতাংশ পূরণ করে সমুদ্রবাহিত আমদানির মাধ্যমে ৷ সমুদ্রপথে কোনও বাধা দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত ঝুঁকির ।
- যে সমুদ্রপথের মধ্য দিয়ে দেশের বাণিজ্য চলে সেগুলিকে রক্ষা করা এবং ওই অঞ্চলে চিনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি মোকাবিলা করা নয়াদিল্লির প্রধান উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে । মলদ্বীপ ভারতকে ঘিরে রাখার জন্য তার ‘স্ট্রিং অফ পার্লস’-এর গুরুত্বপূর্ণ অংশ চিনের জন্য খুলে দিয়েছে । পাকিস্তানের গোয়াদরে চিনের ঘাঁটি রয়েছে, যা আরব সাগরের সংলগ্ন এবং ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা বন্দরের সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারে ।
- ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে (আইওআর) ভারতকে নিচের দিকে ঠেলে দিতে, বেজিং নিয়মিত ভারত মহাসাগরের বিভিন্ন অংশে সমুদ্রের তথ্য সংগ্রহের জন্য গবেষণা চালাচ্ছে ৷ একই সঙ্গে ডুবজাহাজ এবং মনুষ্যবিহীন আন্ডারওয়াটার যান (ইউভি) পাঠাচ্ছে ।
- মলদ্বীপে চিনা গবেষণা জাহাজ জিয়াং ইয়াং হং 3 নোঙর করায় আপত্তি জানিয়েছে ভারত । এই অবস্থায় চিন-মলদ্বীপ দ্বিপাক্ষিক বন্ধন দীর্ঘমেয়াদে ভারতের জন্য একটি নিরাপত্তাজনিত হুমকির সৃষ্টি করবে ।
- পাশাপাশি চিনের একটি কোম্পানি রাজধানী মালের দ্বীপ ফেইডহো ফিনোলহুর 50 বছরের জন্য ইজারা নিয়েছে । যেটি মিনিকয় দ্বীপ থেকে 900 কিলোমিটার এবং ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে 1000 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ৷ ফলে ওই দ্বীপে চিনা সামরিক ঘাঁটি তৈরি হলে তা ভারতের নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াবে ৷
- ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভারতের কোনও সামরিক ঘাঁটি নেই ৷ শুধুমাত্র সেশেলস, মাদাগাস্কার এবং মরিশাসে নজরদারি ব্যবস্থা স্থাপন করেছে নয়াদিল্লি । ফলে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিজের দখল ধরে রাখতে, ভারতীয় নৌবাহিনী 6 মার্চ মালদ্বীপের প্রায় 125 কিলোমিটার (78 মাইল) উত্তরে মিনিকয় দ্বীপে নতুন নৌ-ঘাঁটি আইএনএস জটায়ু চালু করেছে ৷ নৌ এয়ার স্কোয়াড্রনে মাল্টিরোল এমএইচ 60 হেলিকপ্টারও অন্তর্ভুক্ত করেছে নয়াদিল্লি । আইএনএস জটায়ু, কাভারত্তিতে আইএনএস দ্বীপরক্ষকের পরে লাক্ষাদ্বীপে ভারতের দ্বিতীয় ঘাঁটি হিসেবে কাজ করছে ৷ লাক্ষাদ্বীপের দক্ষিণতম দ্বীপ মিনিকয়ে যা কৌশলগতভাবে অবস্থান করছে ৷