নয়াদিল্লি, 1 ফেব্রুয়ারি: বাজেট তৈরি থেকে শুরু করে সংসদে পেশ এবং পাশ হওয়ার পদ্ধতি সংবিধানের স্পষ্ট করে উল্লেখ করা আছে। 112 ধারায় বলা আছে সংসদে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বাজেট পেশ করবেন।
তারপর তা নিয়ে আলোচনা হবে। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে বিরোধী দলনেতা এবং অন্য শাসক ও বিরোধী সাংসদদের ভাষণ হবে। শেষমেশ বাজেট পাশ করাতে হবে অর্থমন্ত্রীকে। তবে এই নিয়ম যে প্রতিবারই পালিত হয়েছে তেমন নয়। ইতিহাস বলছে দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু থেকে শুরু করে ইন্দিরা গান্ধি এমনকী রাজীব গান্ধিও প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন বাজেট পেশ করেছেন। আবার অতীতের বিভিন্ন সময় এমন তিনজন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন যাঁরা বাজেট পেশ করেননি।
1958 সালে বাজেট পেশ করেন নেহরু
তৎকালীন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী টিটি কৃষ্ণমাচারির বিরুদ্ধে দুর্নীতির একাধিক অভিযোগ উঠেছিল। বাজেট পেশ হওয়ার কয়েকদিন আগে 12 ফেব্রুয়ারি তিনি ইস্তফা দেন। শেষমেশ প্রধানমন্ত্রী নেহেরুকেই বাজেট পেশ করতে হয়। বাজেট বক্তৃতায় এই বিষয়টির উল্লেখ করে নেহেরু বলেন, "আমাদের সকলের সামনে যাঁর বাজেট পেশ করার কথা ছিল তিনি এখন আর দায়িত্বে নেই। তাই একপ্রকার বাধ্য হয়েই আমাকে এই গুরুতর দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে ।"
1970 সালে বাজেট পেশ করেন ইন্দিরা গান্ধি
দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি 10 বার বাজেট পেশ করেছেন মোরারজি দেশাই। কিন্তু 1969 সালে তাঁর বদলে বাজেট পেশ করেন ইন্দিরা গান্ধি। ইন্দিরার ক্যাবিনেটে অর্থমন্ত্রকের পাশাপাশি উপ-প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করতেন মোরারজি। কিন্তু আর্থিক সংস্কারের প্রশ্নে তাঁর সঙ্গে কয়েকটি ব্যাপারে ইন্দিরার সংঘাত তৈরি হয়। এমতাবস্থায় তাঁর হাত থেকে অর্থমন্ত্রক নিয়ে নেন ইন্দিরা। এরপর উপ-প্রধানমন্ত্রীর পদও ছেড়ে দেন মোরারজি ।
1978 সালে বাজেট পেশ করেন মোরারজি দেশাই
স্বাধীনতার পর প্রথমবার কংগ্রেসকে পরাজিত করে 1977 সালে সরকার গঠন করে জনতা পার্টি। অনেক টালবাহানার পর মোরারজিকেই প্রধানমন্ত্রী বেছে নেওয়া হয়। তবে শুরু থেকেই বিভিন্ন বিষয়ে সরকারে থাকা দলগুলির মধ্যে সংঘাত দেখা দিতে থাকে। সরকার তৈরির বছর খানেকের মধ্যে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর পদে ইস্তফা দেন সি সুব্রহ্মণন । সেবার প্রধানমন্ত্রী মোরারজিকেই বাজেট পেশ করতে হয়েছিল ৷
1987 সালে বাজেট পেশ করেন রাজীব গান্ধি
1984 সালে লোকসভা নির্বাচনে চারশোরও বেশি আসনে জিতে সরকার গঠন করেছিলেন রাজীব। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংকে । দু'জনের মধ্য সমন্বয়ও ছিল বেশ ভালো । অর্থমন্ত্রীর পরামর্শ ছাড়া কোনও বড় সিদ্ধান্ত নিতেন না রাজীব । তবে কয়েক বছরের মধ্যেই সেই সম্পর্কে ভাঙন ধরে। সুইডেন থেকে বোফর্স কামান কেনা নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ভিপি সিং। নিজের মতো করে তদন্তও শুরু করেন। আরও পরে বোফার্স দুর্নীতি ইস্যুতেই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর পদ ছাড়েন বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং। তাঁর জায়গায় বাজেট পেশ করেন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধি।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী থেকেও বাজেট পেশ করেননি যাঁরা
বাজেট পেশ করা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর কাছে স্বপ্নের মতো। তবে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে থেকেও কেউ কেউ এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। প্রথমেই বলতে হয়, হেমবতিনন্দন বহুগুনার কথা। কংগ্রেসের এই দাপুটে নেতা অর্থমন্ত্রকের দায়িত্ব সামলেছিলেন প্রায় সাড়ে পাঁচ মাস। কিন্তু বাজেটের আগেই পড়ে যায় সরকার। আর তাই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী হিসেবে বাজেট পেশ করা হয়নি বহুগুনার।
একইভাবে আসে কেসি নিয়োগির কথা। পাঁচের দশকের একেবারে শেষে মাত্র মাসখানেকের জন্য অর্থ মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলেছিলেন তিনি। তাঁরও বাজেট পেশ করা হয়নি।
তালিকার তৃতীয় নাম উত্তরপ্রদেশের বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতা এনডি তিওয়ারি । দীর্ঘ কয়েক দশক কংগ্রেসে থাকা নেতা পরবর্তী সময় বিজেপিতে যোগ দেন। তবে তার অনেক আগে অর্থমন্ত্রকের দায়িত্ব সামলে ছিলেন তিনি। বাজেট পেশ হওয়ার আগেই তাঁকে দায়িত্ব থেকে সরতে হয়। একসময় উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীও ছিলেন এনডি তিওয়ারি।