নয়াদিল্লি, 8 জুলাই: একদিকে যখন ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া, অন্যদিকে তখনই ওই দেশ সফরে যাচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷ সোমবার তিনি নয়াদিল্লি থেকে মস্কোর উদ্দেশে রওনা দেন ৷ যাওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রীর বার্তা, ভারত-রাশিয়া সম্পর্কের সবদিক নিয়ে আলোচনা এই সফরে তিনি এগিয়ে নিয়ে যেতে চান ৷ পাশাপাশি ভারত একটি শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির জন্য একটি সহায়ক ভূমিকা পালন করতে চায় ৷
2019 সালে শেষবার রাশিয়া সফর করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷ তার পর সোমবার ওই দেশে দু’দিনের সফরে গেলেন তিনি ৷ অন্যদিকে 2022 সালের গোড়া থেকে ইউক্রেনের উপর আক্রমণ চালাচ্ছে রাশিয়া ৷ ফলে সেই যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এই প্রথমবার মস্কোয় পা রাখতে চলেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ৷
তাই তাঁর সফরের দিকে নজর রয়েছে সকলের ৷ এবার প্রধানমন্ত্রী রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ সম্মেলনেও অংশ নেবেন ৷ ভারত ও রাশিয়ার 22তম দ্বিপাক্ষিক বার্ষিক সম্মেলনে দুই রাষ্ট্রনেতা বাণিজ্য, শক্তি ও প্রতিরক্ষা-সহ একাধিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন ৷ এবার দুই দেশের মধ্যে 28টি মউ (এমওইউ) সাক্ষরিত হতে পারে ৷ এছাড়া যৌথ বিবৃতি দিতে পারে দুই দেশ ৷ যার শিরোনাম হতে পারে, ‘শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্য ভারত-রাশিয়া অংশীদারিত্ব’ ৷
এই দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ সম্মেলন শেষবার হয়েছিল 2021 সালের 6 ডিসেম্বর ৷ নয়াদিল্লিতে সেই সম্মেলন হয় ৷ ওই সম্মেলনে যোগ দিতে সেই সময় ভারতে এসেছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ৷ এর পর 2022 সালের 16 সেপ্টেম্বর মোদি-পুতিন মুখোমুখি সাক্ষাৎ হয়৷ উজবেকিস্তানে এসসিও শীর্ষ সম্মেলনে এই সাক্ষাৎ হয়েছিল ৷ সেখানে দু’জনে আলাদা বৈঠকও করেন ৷ তার পর আবার সোমবার মুখোমুখি সাক্ষাৎ হতে চলেছে এই দুই রাষ্ট্রনেতার ৷
এই গুরুত্বপূর্ণ বিদেশ সফরে যাওয়ার আগে বিবৃতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ৷ সেখানে তিনি বলেন, "ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে শক্তি, নিরাপত্তা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি, পর্যটন এবং জনগণের মধ্যে বিনিময়ের ক্ষেত্র-সহ বিশেষ কৌশলগত অংশীদারিত্ব গত 10 বছরে অনেক এগিয়েছে ৷ আমি আমার বন্ধু প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার সমস্ত দিক পর্যালোচনা এবং বিভিন্ন আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ইস্যুতে দৃষ্টিভঙ্গি ভাগ করে নেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছি ৷ আমরা একটি শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল অঞ্চলের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করতে চাই ।"
মোদি যদিও নিজের বিবৃতিতে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলা যুদ্ধের কথা উল্লেখ করেননি ৷ তবে তাঁর ইঙ্গিত সেই যুদ্ধের দিকেই ছিল কূটনৈতিক মহলের মত৷ রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে যখন সারা বিশ্ব দ্বিধাবিভক্ত ছিল, সেই সময় ভারত নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছিল ৷ যুদ্ধের শুরুর দিকে একাধিকবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনেস্কির সঙ্গে ফোনে কথা হয় প্রধানমন্ত্রী মোদির ৷ তিনি উভয়পক্ষকেই যুদ্ধ থেকে বিরত হওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন ৷
রাশিয়া থেকে প্রধানমন্ত্রী মোদি চলে যাবেন অস্ট্রিয়া ৷ ইউরোপের এই দেশে 40 বছর পর কোনও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী যাচ্ছেন ৷ সেখানে যাওয়ার আগে রাশিয়ায় প্রবাসী ভারতীয়দের সঙ্গেও দেখা করবেন মোদি ৷ মস্কো যাওয়ার আগে পুরো বিষয়টি নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন প্রধানমন্ত্রী ৷ সেখানে মোদি লিখেছেন, "আগামী তিনদিন রাশিয়া ও অস্ট্রিয়াতে থাকব । এই সফরগুলি এই দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার একটি দুর্দান্ত সুযোগ হবে, যাদের সঙ্গে ভারত সময়মতো বন্ধুত্বের পরীক্ষা করেছে ।’’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘‘অস্ট্রিয়ায়, আমি রাষ্ট্রপতি আলেকজান্ডার ভ্যান ডের বেলেন ও চ্যান্সেলর কার্ল নেহামারের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাব । অস্ট্রিয়া আমাদের অটল ও নির্ভরযোগ্য সহযোগী এবং আমাদের গণতন্ত্র ও বহুত্ববাদ একইরকমের৷ 40 বছরে আমি প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ওই দেশে যাচ্ছি ৷ আমাদের অংশীদারিত্বকে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি এবং দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের ক্ষেত্রে পরখ করে দেখতে ও সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওযার বিষয়ে আলোচনা হবে ৷’’ অষ্ট্রিয়াতেও প্রবাসী ভারতীয়দের সঙ্গে দেখা করবেন প্রধানমন্ত্রী ৷