ঢাকা, 27 নভেম্বর: সনাতনী নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারিকে কেন্দ্র করে উত্তাল বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ৷ 26 নভেম্বর বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে সহকারী সরকারি কৌঁসুলির ৷ এছাড়া নিরাপত্তারক্ষীদের উপর চড়াও হওয়ার অভিযোগ উঠেছে হিন্দু নেতার সমর্থকদের বিরুদ্ধে ৷ এই সংঘর্ষে কমপক্ষে 30 জন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করল পুলিশ ৷
দেশদ্রোহিতার অভিযোগে ঢাকার হজরত শাহজালাল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে সোমবার গ্রেফতার করা হয় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে ৷ তিনি বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ৷ এর আগে তিনি ইসকন-এর সদস্য ছিলেন ৷ সম্প্রতি তাঁকে বহিষ্কার করে ইসকন ৷ 25 নভেম্বর চিন্ময় কৃষ্ণ দাস চট্টগ্রামে একটি মিছিলে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন ৷ তখনই তাঁকে গ্রেফতার করা হয় ৷ মঙ্গলবার তাঁর জামিনের আবেদন খারিজ করে দেয় চট্টগ্রামের একটি আদালত এবং জেল হেফাজতের নির্দেশ দেয় ৷
বাংলাদেশের ইসকনের প্রতিক্রিয়া
এদিকে সনাতনী নেতার গ্রেফতারি এবং জামিন না দেওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণা কনসিয়াসনেস (ইসকন) ৷ একটি বিবৃতিতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারির কড়া নিন্দা করা হয়েছে ইসকনের তরফের ৷ পাশাপাশি বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে হিন্দুদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়ার আর্জি জানিয়েছে ৷
বাংলাদেশের ইসকন-এর সাধারণ সম্পাদক চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী বলেন, "আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন ৷ চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারির তীব্র নিন্দা করছি ৷ এর পরবর্তী যে সংঘর্ষ এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় সনাতনীদের উপর আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে, তারও নিন্দা করছি ৷"
চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারির প্রতিবাদে আন্দোলনকারীদের উপর পুলিশের লাঠিচার্জ (ছবি: এপি) বিবৃতিতে ইসকন বাংলাদেশকে জন্মস্থান হিসেবে উল্লেখ করেছে ৷ এখানেই তাঁদের পূর্বপুরুষরাও বাস করতেন বলে জানিয়েছেন সাধারণ সম্পাদক চারু চন্দ্র দাস ৷ মুখ্য উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে গঠিত দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সবার জন্য সুবিচার নিশ্চিত করা এবং প্রত্যেক নাগরিককে স্বাধীনভাবে তাঁদের ধর্মীয় আচার রীতিনীতি পালন করতে দেওয়ার আবেদন করেছে এই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ৷
বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবে সনাতনী নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ যেন নিরপেক্ষ বিচার পান ৷ তিনি এবং সনাতনী সম্প্রদায়ের অন্যরা বিচার পাওয়ার যোগ্য ৷ কোনও রকম বৈষম্য সহ্য করবে না ইসকন, সাফ জানানো হয়েছে বিবৃতিতে ৷ "বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ও অন্য নেতাদের কাছে আমরা বারংবার আর্জি জানিয়েছি, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক", জানানো হয়েছে বিবৃতিতে ৷
সরকারি আইনজীবীর মৃত্যুতে আটক সন্দেহভাজন
চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিনের আবেদন বাতিল হওয়ার পরেই পুলিশের সঙ্গে প্রতিবাদীদের সংঘর্ষ বাধে ৷ এর মাঝে গুরুতর জখম হন সহকারী সরকারি কৌঁসুলি সইফুল ইসলাম, জানিয়েছে পুলিশ ৷ তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন ৷ পুলিশ সূত্রে খবর, বন্দর শঙর চট্টগ্রামে সরকারি কৌঁসুলি ইসলামের হত্যার ঘটনায় 30 জনকে আটক করা হয়েছে ৷
পুলিশের মুখপাত্রের কথায়, "গতকাল আইনজীবী সইফুল ইসলামের হত্যা এবং অন্য তদন্তকারী সংস্থার কর্মীদের উপর আক্রমণের ঘটনায় কার কী ভূমিকা রয়েছে, আমরা তা খতিয়ে দেখছি ৷" প্রাথমিক পর্যায়ের তদন্তের পর সন্দেহভাজনদের গ্রেফতার করা হবে ৷ আরও অনেকের গ্রেফতারির আশঙ্কা রয়েছে, জানান পুলিশের মুখপাত্র ৷
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার কাজি মহম্মদ তারেক আজিজ জানান, সন্দেহভাজনদের ধরতে সারারাত ধরে যৌন অভিযান চালিয়েছে আধাসামরিক বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বাহিনী এবং পুলিশ ৷ অন্তর্বর্তী সরকারের মুখ্য উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসও মঙ্গলবার সরকারি কৌঁসুলির মৃত্যুর নিন্দা করেছেন ৷ তিনি দেশবাসীকে কোনও রকম অপ্রীতিকর কাজকর্ম থেকে দূরে থাকার আর্জি জানিয়েছেন ৷