হায়দরাবাদ, 28 মার্চ:ডায়াবেটিস, শরীরে একবার এই রোগ বাসা বাঁধলে তা ক্রমশ শরীরের একাধিক অঙ্গ-প্রতঙ্গকে বিকল করতে শুরু করে ৷ বিশেষ করে এই রোগের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় মস্তিষ্ক ৷ সম্প্রতি এক গবেষণায় ডায়াবেটিস ও ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভংশের যোগসাজৃশ পেয়েছেন গবেষকরা ৷ যা চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে চিকিৎসকদের কপালে ৷
সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে টাইপ 2 ডায়াবেটিসের সঙ্গে অ্যালঝাইমার রোগের ঝুঁকি থাকছে ৷ যত তাড়াতাড়ি আপনার শরীরে ডায়বেটিস রোগ দানা বাঁধবে ততই আপনার অ্যালঝাইমার রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা ৷ বেশ কিছু সমীক্ষা থেকে জানা গিয়েছে, 81 শতাংশ মানুষ অ্যালঝাইমার রোগে আক্রান্ত ৷ আবার তাঁদের টাইপ টু ডায়াবেটিসও রয়েছে ৷
টেক্সাস এএন্ডএম ইউনিভার্সিটি এবং আমেরিকান সোসাইটি ফর বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজির বার্ষিক সভায় ডায়াবেটিস ও অ্যালঝাইমার রোগের যোগ নিয়ে গবেষণা সামনে আনা হয়েছে ৷ যেখানে দেখানো হয়েছে, অন্ত্রে থাকা প্রোটিনও এই রোগের কারণ হতে পারে ৷ গবেষকরা একটি ইঁদুরের উপরে এই পরীক্ষা চালিয়েছিল ৷ তবে সেই পর্যালোচনা এখন পর্যন্ত প্রকাশিত হয়নি ৷ বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, প্রতিদিন ডায়েটে হাই-প্রোটিন থাকলে তা শরীরে থাকা জ্যাক 3( jak3) প্রোটিন নষ্ট করতে শুরু করে ৷ ইঁদুর উপরে পরীক্ষার সময় অতিরিক্ত প্রোটিন ব্যবহার করায় জ্যাক 3 প্রোটিন নষ্ট হতে দেখা যায় ৷ এরপরেই ইঁদুরের শরীরে প্রদাহ বা জ্বালা শুরু হয় ৷ প্রথমে সেই জ্বালা বা প্রদাহ হতে থাকে অন্ত্রে ৷ পরে ধীরে ধীরে তা ছড়িয়ে যায় লিভারে ৷ পরবর্তী সময়ে তার প্রভাব পড়ে মস্তিষ্কেরও উপরেও ৷ সেখান থেকেই অ্যালজাইমারের লক্ষণগুলি দেখা দিতে শুরু করে ৷ বিজ্ঞানীদের মতে, ডায়েটে যদি স্বাস্থ্যকর খাবার রাখা হয় তাহলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব ৷ পাশাপাশি পরিবর্তন আনা দরকার লাইফস্টাইলেও ৷
এই বিষয়ে চিকিৎসক কী বলছেন...
বেসরকারি হাসপাতালের বিশিষ্ট ডায়বেটোলজিস্ট তথা চিকিৎসক অনুপ মিশ্রা জানিয়েছেন, রক্তে অতিরিক্ত সুগার থাকা ভীষণ রকম ক্ষতিকর ৷ আসলে শরীরে নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষয় শুরু হওয়া মানে তা ডায়াবেটিসের বড় লক্ষণ ৷ এর পাশাপাশি ডায়াবেটিস মস্তিষ্কের উপরও বড় প্রভাব ফেলে ৷ তিনি বলেন, " ডায়াবেটিসের কারণে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালনে বাধার সৃষ্টি হয় ৷ এটা দীর্ঘ সময় ধরে হতে থাকলে, তা ব্রেনে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে ৷ সোজা কথায় রক্তে সুগার থাকার কারণে যত তাড়াতাড়ি মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে তত তাড়াতাড়ি অ্যালঝাইমার বা ডিমেনশিয়াতে রোগী আক্রান্ত হবেন ৷ তাই রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত ৷ না হলে, স্মৃতিভ্রংশ, মুড সুইং, ওজন বৃদ্ধি ও হরমোন পরিবর্তনের মতো সমস্যা হতে পারে ৷"
ডায়াবেটিস 2 ট্রিটমেন্ট পদ্ধতি...
প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকদের মতে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করলেই ডায়াবেটিস থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব ৷ পাশাপাশি টাইপ 2 ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে না পারলে শরীরে অনান্য রোগও দ্রুত বাসা বাঁধবে ৷
ওষুধ ও ইনসুলিন থেরাপি...
- ডায়েট ও এক্সারসাইজ- ডায়াবেটিস থেকে রক্ষা পেতে দরকার সঠিক ডায়েট ও নিয়মিত শরীর চর্চা
- মনিটরিং- প্রতিদিন পরীক্ষা করা, রক্তে শর্করার পরিমাণ কীরকম রয়েছে ৷
পাশাপাশি দরকার হেলদি লাইফস্টাই ও চিকিৎসকের সঠিক পরামর্শ মেনে চলা ৷