কলকাতা, 21 জানুয়ারি: সোমবার আরজি কর কাণ্ডে দোষী সঞ্জয় রায়কে আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে আদালত ৷ ঘটনার 5 মাস 11 দিনের মাথায় এই সাজা ঘোষণা করল শিয়ালদা আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস ৷ কিন্তু ডাক্তারি পড়ুয়ার ধর্ষণ-মৃত্যুর ঘটনায় সঞ্জয় কি একা দোষী ? বাকি যাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছিল সেই গতি কোন দিকে এগোল ? সঞ্জয়ের সাজা ঘোষণার পর হতাশ ঘটনায় প্রতিবাদী তারকারা ৷ উঠছে একাধিক প্রশ্নও ৷
চৈতী ঘোষাল
তিনি ইটিভি ভারতের কাছে বলেন, "রোগা পাতলা মতো সাইকোপ্যাথ চোখ নিয়ে সঞ্জয় রায় নামে লোকটাকে তাকিয়ে থাকতে দেখছি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে। এক মহিলা ডাক্তারকে সে এমন জায়গায় ধর্ষণ ও খুন করল যেখানে বহু মানুষের চলাচল। তরুণী ডাক্তার কোনও পোড়ো বা পরিত্যক্ত জায়গায় যায়নি। একইভাবে সে অসুস্থও নয়, অপুষ্টিতেও ভুগছে না যে সে চিৎকার করেনি। এই হাসপাতালে সারা দিন রাত চিকিৎসা চলে। বহু মানুষের আনাগোনা। ফলে টের পাওয়া অস্বাভাবিক নয়। এই অপরাধের জন্য একটা লোকই দায়ী? মানতে পারছি না। কার কার ডিএনএ পাওয়া গেল মেয়েটির শরীরে? জানতে চাই। আমি একা নয় সবাই জানতে চায়। কেন মেয়েটির মরদেহের দু'বার পোস্টমর্টেম হল না? কারা বলছে এটা আত্মহত্যা? কেন মেয়েটির বাবা মাকে এত পরে জানানো হল? যারা আত্মহত্যা বলছে তারা কারা? আর কী করে তাদের মনে হল এটা আত্মহত্যা? প্রশ্নগুলো বারবার আসছে মনের মধ্যে।"
অভিনেত্রী আরও বলেন, "মেয়েটির জন্য যাঁরা পথে নেমেছেন তাঁরা কেউ রাজনৈতিক মুনাফার জন্য নামেননি পথে। তারা এই ঘৃণ্য অপরাধের অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন। তাতে যারা অন্যায় করে, অন্যায় সহ্য করে, অন্যায়কারীকে তোল্লাই দেয় তাদেরও একটা শিক্ষা হয়ে যেত। আমরাও নিরাপদ থাকতাম। তবে উচ্চ আদালত আছে, আশা ছাড়িনি। দেখা যাক কী হয়। আর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই বিষয়টার বিবেচনা করুন। তাঁরাও তো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান। আমি মেয়েটার বাবা মায়ের সঙ্গে দেখা করে এসেছি। বাবা মায়ের কোল থেকে তাদের সন্তানকে কেড়ে নিল। এর থেকে বড় নৃশংসতা আর হয়? সবটা ভেবে আমার অসুস্থ লাগছে নিজেকে।"
দেবলীনা দত্ত
অভিনেত্রী বলেন, "যাবজ্জীবন হয়েছে সঞ্জয় রায়ের। কিন্তু আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে এটা কোনও খবরই নয়। কারণ ঘটনার 48 ঘণ্টার মধ্যে যে একমাত্র ব্যক্তি ধরা পড়েছিল সে সঞ্জয় রায়। কাজেই একদিন না একদিন তার ভয়ঙ্কর শাস্তি হবে তা জানা ছিল। কেননা যে অপরাধ সে করেছে তাতে হয় ফাঁসি নয়তো যাবজ্জীবন- সেই ব্যাপারে আমরা সবাই নিশ্চিত ছিলাম। কিন্তু তারপর কী হল? সিবিআই বলেছিল এই কাজ একার পক্ষে কারোর সম্ভব না। তাহলে বাকিরা কোথায়? পাঁচ মাস ধরে যে তিমিরে ছিলাম সেই তিমিরেই আছি আমরা। সিবিআই-এর তরফে তা হলে কী এগোল?
একা সঞ্জয় রায় শাস্তি পাবে আর বাকিরা বাড়িতে বসে থাকবে? তারা আমাদের আশেপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে না তো? তা হলে আমি নিরাপদ কোথায়? আমি একজন নাগরিক হিসেবে, একজন ভোটার হিসেবে একজন নারী হিসেবে নিজেকে একেবারেই নিরাপদ বোধ করছি না।"
দেবলীনা আরও বলেন, "সিবিআই বলেছিল প্রমাণ লোপাট করা হয়েছে। তা হলে সঞ্জয় রায়ের মতো একজন লোককে বাঁচানোর জন্য প্রমাণ লোপাট করা হয়েছে? এও কি সম্ভব? আবার প্রমাণ লোপাট করেও তার সাজা হয়ে গেল! এতদিন চুলচেরা বিশ্লেষণ করে বাচ্চাদের মতো আমাদের বোঝানো হয়েছে যে পাঁচ-ছয়জন যুক্ত এই কাজের সঙ্গে। তা হলে তারা কোথায়? তারা যতক্ষণ না ধরা পড়ছে আমি নিরাপদ মনে করছি না নিজেকে।" |
রূপাঞ্জনা মিত্র
তিনি বলেন, "সাজা হতই। মনে হচ্ছিল আমৃত্যু কারাবাস অন্তত হবেই। নিজের টুকুই বলতে পারি মন থেকে মৃত্যু চেয়েছিলাম সঞ্জয় রায়ের। তবে, বিচার ব্যবস্থার উপর বা মহামান্য আদালতের বিচারের উপর থেকে বিশ্বাস হারাইনি। যে নারকীয় ঘটনা ঘটেছে একজন কর্মরত মহিলা চিকিৎসকের উপর তা প্রায় 6 মাসের কাছাকাছি এই বিচার শুনে একটু স্বস্তি পেয়েছি। কিন্তু অনেক মতানৈক্য তৈরি হচ্ছে। এই নিয়েই আমাদের থাকতে হবে। অবশ্যই এক অংশ আমার মতোই মৃত্যুদণ্ড চেয়েছিল তবে, যে সাজা সঞ্জয়কে শোনানো হয়েছে সেটাও কম নয়।"