কলকাতা, 1 ফেব্রুয়ারি: শনিবার বাজেট 2025-26 পেশ করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন । এবারের কেন্দ্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে একাধিক বিষয়ে নজর দেওয়া হয়েছে । যেমন, ক্যানসার-সহ দুরারোগ্য রোগের জন্য ব্যবহৃত 36টি জীবনদায়ী ওষুধে উঠে গেল শুল্ক । বাজেট পেশের সময় ঘোষণা করলেন অর্থমন্ত্রী ।
পাশাপাশি, 6টি জীবনদায়ী ওষুধে 5 শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহারের ঘোষণা করা হয় । একই সঙ্গে মেডিক্যাল কলেজগুলিতে আগামী পাঁচ বছরে 75 হাজার আসন বৃদ্ধির ঘোষণা করেন নির্মলা সীতারামন । আগামী বছরেই কেবল মেডিক্যালে বৃদ্ধি করা হবে 10 হাজার আসন । সমস্ত জেলা হাসপাতালে ক্যানসার সেন্টার তৈরির কথাও জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী । 3 বছরে মোট 2 হাজার ক্যানসার সেন্টার তৈরি হবে সারা দেশে । চলতি অর্থবর্ষের বাজেটকে স্বাগত জানালেও চিকিৎসা ক্ষেত্রে পরিকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন তুলল চিকিৎসক সমাজ ৷
এবারের বাজেট নিয়ে মেডিকা হাসপাতালের ডিরেক্টর তথা অঙ্কলজিস্ট চিকিৎসক সৌরভ দত্ত বলেন, "সমস্ত জীবনদায়ী ওষুধ থেকে শুল্ক তোলা উচিত, বেছে বেছে নয় । যেটা 36-এর বেশি হবে । তার সঙ্গে আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করে ডাক্তারদের তৈরি করছি যেমন ভালো দিক । কিন্তু পাশ করার পর নিয়োগ যাতে হয়, সেটাও নজর রাখতে হবে । এর পাশাপাশি ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তাও ভালো । কিন্তু তার সঙ্গে নজর রাখতে হবে যাতে যথাযথ ব্যবস্থাপনা যাতে থাকে হাসপাতালগুলিতে । এমনকি প্রত্যেকটা স্টাফকে নিয়োগ করে যথাযথ ট্রেনিং দিতে হবে । উপর থেকে দেখে ভালো লাগছে । কিন্তু যথাযথ ব্যবস্থা যদি ঠিক না হয় তাহলে লাভের থেকে বেশি ক্ষতি হবে ।"
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "এই বাজেটকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি । কিন্তু সমস্ত জীবনদায়ী ওষুধ ও বিরল রোগের ওষুধের জিএসটি প্রত্যাহার করতে হবে । তাতে মানুষ উপকৃত হবে । মেডিক্যাল কলেজগুলোতে 10 হাজার আসনের জন্য 500 কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে । এটা আমাদের অপ্রতুল মনে হচ্ছে । এটা সরকারি ব্যবস্থায় পুরো হবে না । সেখানে প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজগুলোর উপর দিক নির্দেশ করা হচ্ছে ।"
অন্যদিকে এই বাজেট নিয়ে হতাশ মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টারের রাজ্য সম্পাদক তথা ক্যালকাটা হার্ট রিসার্চের চিকিৎসক বিপ্লব চন্দ্র । তিনি বলেন, "অন্তঃসার শূন্য বাজেট । এই আসন সংখ্যা বাড়ানো হবে কোথায় ? সরকারি নাকি বেসরকারি? নতুন এডুকেশন পলিসি আসার পর চিকিৎসা ক্ষেত্রে এডুকেশন ব্যবস্থা সব শেষ । পরিকাঠামো কমিয়ে কীভাবে ঝা চকচকে মেডিক্যাল খোলা যায়, এগুলো তার লক্ষণ । তার সঙ্গে 800-এর উপর ওষুধের দাম বাড়িয়ে 36টা ওষুধের দাম কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত, আদতে মানুষকে বোকা বানানো ছাড়া কিছু না ।"
অপরদিকে অ্যাপেলোর সিনিয়র চিকিৎসক নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "মোটামুটি আমার মতে এই বাজেট ভালো । প্রকল্পগুলো ভালো । কিন্তু বাস্তব করতে হবে । আমাদের দেশে ডাক্তারের সংখ্যা কম । কিন্তু সেখানে দেখতে হবে মেডিক্যাল কলেজগুলো যথাযথ পরিকাঠামো আছে কি না । তবে ক্যানসার নিয়ে যে উদ্যোগ তা অবশ্যই ভালো ।"
সিএমআরআই নার্সিংহোমের সিনিয়র চিকিৎসক অর্জুন দাশগুপ্ত বলেন, "আমরা শঙ্কিত । কারণ, পরিকাঠামোহীন অবস্থায় ব্যাঙের ছাতার মতো মেডিক্যাল কলেজ গজিয়ে উঠছে । তার পাশাপাশি দুর্নীতি আছে । টাকা দিয়ে পাশ করার মতো ঘটনাও আমরা দেখেছি । তবে জরুরিভিত্তিক ওষুধের যে তালিকা তৈরি করা রয়েছে, সেটা জরুরি বলেই এবং গুরুত্বপূর্ণ বলেই তালিকায় রয়েছে । সেখানে শুধুমাত্র 36 টা নয় আরও অনেক ওষুধ আছে । সেগুলোতেও শুল্ক বাদ দিতে হবে ।"