কলকাতা, 1 ফেব্রুয়ারি: সংসদে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন 2025-26 আর্থিক বছরের বাজেট পেশ করেছেন ৷ তাতে একাধিক খাতে ছাড়ের কথা ঘোষণা করা হয়েছে । একইভাবে ইলেকট্রনিক্স-সহ বিভিন্ন জিনিসপত্রের দাম কমার সম্ভাবনার কথাও জানানো হয়েছে । আয়করের দিক থেকে সর্বোচ্চ 12 লক্ষ টাকা বার্ষিক আয় যারা করেন, তাদেরকে কার্যত আর কর দিতে হবে না বলেই দাবি করা হচ্ছে । কিন্তু সার্বিকভাবে নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে ছাড়ের কোনও উল্লেখ নেই বাজেটে, তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সরকারি চাকরিজীবীদের একাংশ । তাঁদের প্রশ্ন, "12 লক্ষ টাকা রোজগারে কর ছাড় আই-ওয়াশ, নিত্যদিনের জিনিসপত্র ছাড় কোথায়?"
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, "12 লক্ষ টাকা রোজগার করে কত জন? রোজগারের দিশাই তো বলা নেই বাজেটে । এমনিতেই জিএসটিতে সকলেই কর দেয় । কাজেই কর ছাড় একেবারেই আই-ওয়াশ এবং ভোটমুখী । কারণ, কেন্দ্রীয় সরকারের জোটে আছে বিহারের নীতিশ কুমারের সরকার । সেই বিহারে একাধিক খাতে বরাদ্দ এবং উন্নয়নের কথা বলা হলেও পশ্চিমবঙ্গে কার্যত ছিটেফোঁটাও নতুন বরাদ্দের কথা বলা হয়নি । কারণ, কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে জোটে নেই পশ্চিমবঙ্গের সরকার । তাছাড়া এর আগে বেশ কয়েকটি রিপোর্টে প্রকাশ পেয়েছে, মধ্যবিত্তের খরচ বেড়েছে । কিন্তু নতুন করে কর্মসংস্থান বা কাজের কোনও দিশা নেই । ফলে এই বাজেটকে এক প্রকার উচ্চ মধ্যবিত্ত এবং ভোটমুখী জোটমুখী বাজেট বলা চলে ।"
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কর্মচারী নাদিম খান বলেন, "মাত্র 18 হাজার টাকা মাইনে পাই । ইনকাম ট্যাক্স নেই । কিন্তু জিএসটি তো দিতেই হয় । তা হলে আর ছাড় কী হল?" নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এক গ্রুপ ডি কর্মচারী বলেন, "কর ছাড় দিয়েছে বলে বলা হচ্ছে । কিন্তু জিএসটিতে তো কোনও ছাড় নেই । পোশাক-আশাক কিংবা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের কর ছাড়ের কোনও বালাই নেই । ফলে রোজকার জিনিস বা সামগ্রী কিনতে যে বিপুল টাকা কর দিতে হয়, তাতে তো ছাড় পেলাম না । খরচে কোনও সুবিধা হল না । ফলে গোটাটাই আই-ওয়াশ ।"
অন্যদিকে রাজ্য সরকারের বনদফতরের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক আবার আয়কর ছাড়ে খুশি । তাঁর বক্তব্য, "আয়করে ছাড় পেয়ে খুশি । কারণ, আমরা একটার সঙ্গে আর একটা ছাড়ে জিনিস পেলেই খুশি হই । ফলে, এই 12 লক্ষ টাকা আয়ে ছাড় পেয়ে খুশি হওয়াটাই স্বাভাবিক । শুধু তাই নয়, আমি নিজে চারচাকা গাড়ি ব্যবহার করি । এখন ইলেকট্রিক গাড়িতে ছাড় দেওয়া হবে । ফলে, আগামীতে ইলেকট্রনিক গাড়ির দিকে ঝুঁকব ।"
একই সুর শোনা গেল কেন্দ্রীয় সরকারের সচিব পর্যায়ের এক আধিকারিকের গলায় । তিনিও আয়কর ছাড়ে খুশি । তবে, সাধারণ নিম্নবিত্ত বা মধ্যবিত্তের কথা আর একটু ভাবা যেত বাজেটে বলে জানিয়েছেন তিনি ।