হায়দরাবাদ, 7 নভেম্বর: 'মেঘ পিওনের ব্যাগের ভিতর মন খারাপের দিস্তা...' মন খারাপ স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের ৷ মন খারাপের কারণে গলা বন্ধ হয়ে কান্না উঠতে আসতে চাইছে তাঁর ৷ মন খারাপের দিস্তা, তিস্তায় ভাসিয়ে না দিয়ে তা তুলে ধরলেন নিজের সোশাল মিডিয়া পেজে ৷
অনেক সময় হয় জীব ছাড়াও এমন কোনও জড়পদার্থ মনের ঘুপচি ঘরে জায়গা করে নেয়, তা নষ্ট হলে বা চলে গেলে বাঁ-দিকটা চিনচিন করে ওঠে ৷ পুরনো বাড়ি, বন্ধ হয়ে যাওয়া ঘড়ি, ধুলো পড়া আলমারি জীবনের ফেলে আসা সেই মুহূর্তগুলোকে নিমেষে জীবন্ত করে তোলে ৷ আর এমন দুঃখের সঙ্গেই যুঝছেন স্বস্তিকা ৷
সোশাল মিডিয়ায় অভিনেত্রী লিখলেন, "যখনই কিছু মনে হয়, তখনই লিখে ফেলা ভালো, পরে যদি মনে হওয়াগুলো হারিয়ে যায়…একটা ইলেকট্রিক যন্ত্রের প্রতি যে এতটা ভালোবাসা লেগে আছে, একটা যন্ত্র খারাপ হয়ে যাওয়ার সঙ্গে যে মন খারাপের এমন একটা সংযোগ আছে, তাতে যে গলা বন্ধ হয়ে কান্না উঠে আসতে পারে তা আগে জানা ছিল না।"
স্বস্তিকা এরপর লেখেন, "এত প্রবল ভাবে অনুভূতি থেকে যাওয়াটা যন্ত্রনার। আমার বাড়ির মাইক্রোভেনটার আয়ু শেষ হল। ওর বয়স আমার মেয়ের চেয়েও বেশি।বাড়িতে বিয়ের ম্যারাপ বাঁধা হলে যেমন অনেক নতুন জিনিস কেনা হয়, 1998 সালে ও নতুন হয়ে আমাদের কাছে এলো। বিপিএল Sanyo কোম্পানি উঠে গেল, সম্পর্ক চুকে গেল, আমি মা হলাম, মাকে হারালাম, বাড়িতে সাদা কাপড় জড়ানো শ্রাদ্ধের ম্যারাপ বাঁধা হল, জীবনের কত শত ঝড় ঝাপটা পেরোলাম, নাম হল, কত কেউ, কত কিছু এলো-গেল, মাইক্রোভেনটা রয়ে গেল।"
আবেগতাড়িত অভিনেত্রী তারপর স্মৃতির পাতা ঘেঁটে তুলে ধরেন আরও নানান কথা ৷ তিনি লেখেন, "...গত এক বছরে ও নানান ভাবে জানান দিয়েছে যে ওর চলে যাওয়ার সময় আসন্ন তাও আমি সব কিছু দিয়ে চেষ্টা করেছি ওকে আটকে রাখার। বারংবার ভেবেছি, আহারে মা কত উৎসাহ নিয়ে ওকে বাড়ি এনেছিল, কত রকম নতুন পদ্ধতিতে রান্না করে খাওয়াত, চারবেলা আর ঘামতে ঘামতে গ্যাস এ খাবার গরম করতে হবে না - এই নিয়ে মা যতটা উৎফুল্ল ছিল, কোথাও যেন এই মেশিনটা মায়ের সব অনুভূতিকে নিজের মধ্যে আটকে রাখতে সক্ষম হয়েছে।"
মায়ের কথা মনে করতে গিয়ে স্বস্তিকা লেখেন, "আকাশ থেকে তারা খসে পড়ার মতন মায়ের কেনা জিনিসগুলোও একটা একটা করে খসে পড়ছে। আহারে ফেলে দিই কেমন করে এই ভেবে, অকেজো জিনিস স্তুপাকার হয়ে বাড়িটা গুদাম ঘরে পরিণত হচ্ছে। এও আর এক লড়াই। এই লড়াই ও জিততে হবে। মায়া ত্যাগ করে মায়ের সংসার মুছে নিজের মতন করে সবটা গুছিয়ে নিতে হবে। মা মরে গেছে 10 বছর হতে চলল, এখনও পারছি না, আর কবে…"