কলকাতা, 29 জুলাই: রাহুল মুখোপাধ্যায়-ফেডারেশন দ্বন্দ্বে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন পরিচালকেরা। রবিবারই এই মর্মে এই বিবৃতি প্রকাশ করা হয় সামাজিক মাধ্যমে ৷ 'ডিরেক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া'র তরফে বিবৃতি মেনে সোমবার সকাল থেকেই শুনশান টলিপাড়া। দেখা নেই পরিচালক থেকে অভিনেতার ৷ সিনেমা কিংবা ওয়েব সিরিজের ক্ষেত্রে বিষয়টা অন্যরকম। টেলিকাস্ট জমা দেওয়ার তাড়া নেই। ব্যাঙ্কিংয়ের তাড়া নেই। কিন্তু ধারাবাহিকের ক্ষেত্রে এই সবই রয়েছে পুরোদমে। ফলে, একদিন শুটিং বন্ধ মানেই অনেকটা ক্ষতি। এই ব্যাপারে কী বলছেন বিভিন্ন ধারাবাহিকের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিচালক-অভিনেতারা, জানল ইটিভি ভারত।
মেগা সিরিয়ালের অত্যন্ত ব্যস্ত পরিচালক অমিত দাস বলেন, "রাহুলকে যতক্ষণ না সম্মানের সঙ্গে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে ততক্ষণ এই অবস্থা থাকবে। সবাই সেটা জানে। চ্যানেলও জানে। চ্যানেলের কাছেও মেইল পৌঁছে গিয়েছে আশা করি। এরকম নয় যে এটাই প্রথম। এর আগে ফেডারেশনের তরফ থেকে বন্ধ রাখা হয়েছিল শুটিং। এই সমস্যার তাড়াতাড়ি সমাধান হোক সেটাই চাই। আমরাও চাই তাড়াতাড়ি কাজে ফিরতে। শুটিং বন্ধ থাক আমরাও চাই না।"
বাংলা ধারাবাহিকের আরেক পরিচালক অয়ন সেনগুপ্ত বলেন, "বিষয়টা এতটাই স্পর্শকাতর এবং সংবেদনশীল যে পরিচালকরা এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন। সিনেমার ক্ষেত্রে টেলিকাস্টের চক্কর নেই। ধারাবাহিকের ক্ষেত্রে রয়েছে। যে সব ধারাবাহিকের ব্যাঙ্কিং হয়ে আছে সেগুলির টেলিকাস্ট হবে। যেগুলির নেই বা কম আছে সেগুলি নন টেলিকাস্ট হয়ে যাবে। কিন্তু সেটা আমরা ভাবতেও চাইছি না। আমরা চাইছি সব সমস্যা মিটে গিয়ে কাজে ফিরতে ।"
তিনি আরও বলেন, "নন টেলিকাস্ট মানে শুধু একজন পরিচালক বা প্রযোজকের ক্ষতি না, চ্যানেল, দর্শক, অভিনেতা-সহ সকলের ক্ষতি। অনেকে জড়িয়ে থাকেন একটা কাজের সঙ্গে। এই ক্ষতিটা আমরা কেউ মানতে পারছি না। পারব না। অদ্ভুত একটা যন্ত্রণা হচ্ছে। তাও এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। কেন না যেটা ঘটছে ক'দিন ধরে তা মেনে নেওয়া যায় না। আশা রাখছি যা হবে ভালো হবে। দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে। হাসি মুখে ফিরতে পারব ফ্লোরে। সবথেকে বড় কথা, আমাদের সঙ্গে প্রযোজকরাও আছেন। তাঁরাও বুঝেছেন এর গুরুত্ব আছে। তাঁরা তাঁদের ক্ষতির কথা ভাবছেন না। আমাদের পাশে আছেন। এটা অনেক বড় পাওয়া।"
এদিকে, খুব শীঘ্রই টেলিভিশনের পর্দায় আসছে ধারাবাহিক 'অমরসঙ্গী'। শুরু হয়েছিল শুটিং। এই টানাপোড়েনে হঠাতই স্তব্ধ সব। ধারাবাহিকের কেন্দ্রীয় পুরুষ চরিত্রে রয়েছেন নীল ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, "রাহুল মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে গোটা বিষয়টাই আমার লোকমুখে শোনা। তাই এই নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না। তবে, চাইব সব তাড়াতাড়ি মিটে যাক। কেন না নতুন কাজ। তার উপর বুম্বা দা'র প্রযোজনায়। এই নামে বুম্বা দা'র সিনেমা কাল্ট সিনেমা হয়ে রয়ে গিয়েছে। আর সেই নামে ধারাবাহিক। আমি খুব খুশি এই কাজটা নিয়ে। তাই ছুটি চাই না। কাজ চাই।"
প্রযোজক তথা পরিচালক বাবু বণিক বলেন, "পরিবারে ঝগড়া হয়, অভিমান হয়, দু'দিন একে অপরের সঙ্গে কথা বলে না। কিন্তু দিনের শেষে পরিবার তো পরিবারই থাকে। সব ঠিক হয়ে যাবে। মান অভিমান ভাঙার অপেক্ষা। ভাঙলেই কাজে ফিরব।" দুই পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতা চেয়ে রবিবার অর্থাৎ 28 জুলাই, ওয়েস্ট বেঙ্গল মোশন পিকচার্স আর্টিস্ট ফোরাম-এর তরফে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। ভিন্নমতাবলম্বীদের আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধান সূত্রের খোঁজে অগ্রণী ভূমিকা নিতে প্রস্তুত আর্টিস্ট ফোরাম। এখন দেখার, সকলের ক্ষতির কথা ভেবে এই দ্বন্দ্ব মেটে নাকি আরও বড় কিছুর দিকে এগোয় ৷