হায়দরাবাদ, 6 ফেব্রুয়ারি: 41 বছর পর কোনও সিনেমায় দেখা যায় সঙ্গীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকরকে ৷ আলাস্কার মতো লোকেশনে শুটিং হয় প্রথম ভারতীয় কোনও সিনেমার ৷ 25 বছর আগে এমনই একাধিক রেকর্ড তৈরি করেছিল রাজকুমার সন্তোষির 'পুকার' ৷
2000 সালের 4 ফেব্রুয়ারি মুক্তি পেয়েছিল অনিল কাপুর ও মাধুরী দীক্ষিত অভিনীত 'পুকার' ৷ অসাধারণ অভিনয়, চিত্রনাট্য ও গান আজও স্মৃতির সরণীতে নিয়ে যায় সিনেপ্রেমীদের ৷ এই ছবি তৈরির নেপথ্যে রয়েছে বেশ কিছু অজানা গল্প ৷ এক সাক্ষাৎকারে ছবির প্রযোজক বনি কাপুর জানান, কীভাবে লতা মঙ্গেশকরকে গান গাওয়ার জন্য ও ছবির দৃশ্য শুট করার জন্য মানিয়েছিলেন তিনি ৷ 'এক তু হি ভরোসা' গানে কণ্ঠ দেন লতা ৷ সঙ্গীত পরিচালনা করেন এআর রহমান ৷ কিন্তু এই গানের জন্য ক্যামেরার সামনে আসতে রাজি ছিলেন না লতা মঙ্গেশকর ৷ কিন্তু প্রযোজক ও বনি পরিচালক রাজকুমার চেয়েছিলেন স্টেজে লতাজি গাইছেন, এমন দৃশ্য সিনেমায় থাক ৷
এরপর প্রায় পাঁচ মাস ধরে লতাজির পিছনে পড়েছিলেন বনি ৷ রীতিমত গায়িকার পায়ে পড়ার মতো অবস্থা ছিল বনির ৷ প্রতিদিনই তিনি লতাজির কাছে যেতেন যদি তিনি রাজি হয়ে যান সিনেমার দৃশ্য শুট করার জন্য এই আশা নিয়ে ৷ কিন্তু প্রতিবারই হতাশ হতেন ৷ এরপর নাকি বনির দৃঢ়তা ও জেদ দেখে অবশেষে সিনেমার বিশেষ দৃশ্য শুট করতে রাজি হন লতা মঙ্গেশকর ৷ গায়িকা হায়দরাবাদে আসেন আর সেখানে একসপ্তাহ মতো ছিলেন ৷ গানটির রেকর্ড হয় রাতে ৷ বনি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করেন ৷ কারণ একমাত্র নিজের গাওয়া গানে বনি কাপুরের 'পুকার' সিনেমায় দেখা যায় লতাজিকে ৷
এই ছবির শুটিং লোকেশনও ছিল নজরকাড়া ৷ আলাস্কার পাশাপাশি মেক্সিকো ও উটাহ-তে ছবির অনেকটা অংশের শুটিং হয়েছে ৷ যার মধ্যে ভারতীয় সিনেমা হিসাবে 'পুকার' প্রথম, যে টিম কি না আলাস্কাতে শুট করেছে ৷ এক সাক্ষাৎকারে মাধুরী জানিয়েছেন 'কিসমত সে তুম হাম কো মিলে হো...' গানের শুট হয়েছে আলাস্কাতে ৷ আর সেই দৃশ্য শুট করতে গিয়ে একেবারে হাড়হিম অবস্থা হয়ে গিয়েছিল অভিনেত্রীর ৷
চারিদিকে বরফের চাদর ৷ বাইরে কয়েক সেকেন্ডও দাড়ানো মুশকিল ৷ তারমধ্যে অনিলের সঙ্গে রোমান্টিক গানের দৃশ্য শুট করতে হবে মাধুরীকে ৷ মজার বিষয়, এই গানের শুটে অনিল কাপুরের পরনে ছিল জিনস, টি-শার্ট ও ওভারকোট ৷ কিন্তু মাধুরীকে ঠান্ডায় পরতে হয়েছিল হালকা নীল রঙের শিফন শাড়ি ৷ এমন পরিস্থিতিতে কীভাবে করলেন শুটিং ? মাধুরী জানান, তিনি ও 'পুকার' টিম আলাস্কায় পৌঁছয় দুপুরবেলা ৷ ফারহা খান এই গানের কোরিয়োগ্রাফার ছিলেন ৷ যখন গানের শুটিং শুরু হয় তখন অভিনেত্রী নাকি গানে লিপ দিতে পারছিলেন না ৷ প্রচণ্ড ঠান্ডায় জমে গিয়েছিলেন তিনি ৷ ঠোঁট নীল হতে শুরু করেছিল ৷ মাধুরীর অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে ৷
ঘটনাস্থলে একজন চিকিৎসককে সবসময়ের জন্য় রাখা হয়েছিল ৷ অভিনেত্রীর এমন অবস্থা দেখে সেদিনের মতো ফারহা শুটিং বন্ধের নির্দেশ দেন ৷ দ্রুত চিকিৎসা শুরু হয় অভিনেত্রীর ৷ এর পরের দিন ফের গানের শুট শুরু হয় ৷ অভিনেত্রী জানান, লোকেশনে স্ট্যান্ডবাই হিসাবে একজনকে রাখা হয়েছিল চাদর ও ছোট হিটার হাতে ৷ গানের শট শেষ হতেই নাকি মাধুরী চাদর জড়িয়ে হিটারে নিজেকে গরম রাখার চেষ্টা করতে থাকতেন ৷ একটা গানের শুটের জন্য বড় ঝুঁকি নিয়েছিলেন মাধুরী ৷
উল্লেখ্য, মেজর জয় (অনিল কাপুর) ও পূজা (মাধুরী দীক্ষিত)-র অভিনয় আজও মুগ্ধ করে দর্শকদের ৷ ছবিতে সঙ্গীত পরিচালনা করেন এআর রহমান ৷ ছবির ঝুলিতে আসে 2টো জাতীয় পুরস্কার ৷ 25 বছর পর আজও এই ছবিকে ঘিরে নস্ট্যালজিক হয়ে পড়েন ছবির প্রযোজক থেকে অভিনেতা-অভিনেত্রীরা ৷ সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করেন নিজেদের অনুভূতিও ৷