পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / entertainment

Exclusive: নেটপাড়ায় প্রচুর ফলোয়ার্স... সুযোগ অভিনয়ে ! ইন্ডাস্ট্রিতে বদলাচ্ছে যোগ্যতার মাপকাঠি ? - SOCIAL MEDIA INFLUENCER IN CINEMA

বদলেছে মাপকাঠি ? টলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে একজন অভিনেতা-অভিনেত্রী কাজ পাবেন কি না, তা নির্ভর করছে তাঁর ফলোয়ার্সের উপর ? ক্ষোভ সিনে অন্দরে ৷

Etv Bharat
ইন্ডাস্ট্রিতে বদলাচ্ছে অভিনয় যোগ্যতার মাপকাঠি ? (ইটিভি ভারত/গেটি)

By ETV Bharat Entertainment Team

Published : Jan 6, 2025, 7:03 PM IST

কলকাতা, 6 জানুয়ারি: "ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ নেই"- কথাটা প্রায়ই বলতে শোনা যায় টলিপাড়ার প্রতিনিধিদের মুখেই। বড়দের কাজ নেই, ছোটদের নেই, মেজদেরও নেই। তা হলে আছে কাদের? যাঁদের সোশাল মিডিয়ায় ফ্যান ফলোয়ার্স আছে তাঁদের। সহজ কথায় সোশাল মিডিয়ায় যাদের লক্ষ লক্ষ ফলোয়ার্স, যারা নেট পাড়ার সেনসেশন তাঁদের হাতে কাজ এসে ধরা দেয়। এমনটাই দাবি টলিপাড়ার একাংশের।

সেই দাবি তুলেই সামাজিক মাধ্যমে সরব হয়েছেন অভিনেতা দেবনাথ চট্টোপাধ্যায় এবং রায়তী ভট্টাচার্য। দেবনাথ চট্টোপাধ্যায় লেখেন, "যে সব নির্মাতারা শুধু ফলোয়ার্স দেখে নন অ্যাক্টরদের কাস্ট করছেন, তাদের মঙ্গল হোক।
আগামী প্রজন্ম মনে রাখবে আপনাদের।"

অভিনেত্রী রায়তী ভট্টাচার্যও লিখেছেন, "একজন পরোটা বিক্রেতা অভিনয় করছে, তাতে কোনও সমস্যা নেই। একজন অভিনেতা পরোটা বিক্রি করতে চাইলেও কোনও সমস্যা নেই। সমস্যা তখন হয়, যখন একজন পরোটা বিক্রেতা অনিচ্ছা সত্বেও শুধু বিক্রি বাড়াতে অভিনয় করতে আসে, আর একজন অভিনেতা কাজ না পেয়ে সংসার চালাতে পরোটা বিক্রি করতে যায়। এতে আর্ট আর আটা দুটোই নষ্ট হয়।" এখানেই শেষ নয়, দিনকয়েক আগে অভিনেতা রেমো বলেন, "টলিউডে নতুনরা কাজ পাচ্ছে না। অথচ তারা তাদের কাজ ইতিমধ্যেই দেখিয়েছে। ভাবতেই অবাক লাগে এখানে তরুণ প্রজন্ম বেকার হয়ে ঘরে বসে আছে।..."

উল্লেখ্য, সম্প্রতি শিয়ালদহর ফুটপাত থেকে সোজা ক্যামেরার সামনে চলে এসেছেন পরোটা বিক্রেতা 'রাজুদা'। তাঁকে এবার দেখা যাবে হইচইয়ের ওয়েব সিরিজে। সোশাল মিডিয়ায় রাজু ঘোষ বেশ জনপ্রিয় পরোটা দাদা। নেটপাড়ার জনপ্রিয়তা থেকেই রিয়ালিটি গেম শো 'লাখ টাকায় লক্ষ্মী লাভ'-এ খেলতে গিয়েছিলেন তিনি। আর এবার তিনি সোজা ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হইচই-এর ওয়েব সিরিজে!

এখানেই শেষ নয়, প্রিয়দর্শী বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত 'তিন সত্যি' ছবিতে অভিনয় করছেন ডালহৌসী মোড়ের পাইস হোটেল খ্যাত নন্দিনী দিদি। সোশ্যাল মিডিয়ার সেনসেশন তিনি। ইনস্টাগ্রামে তাঁর লক্ষ লক্ষ ফলোয়ার্স। 'তিন সত্যি' ছবিতে তাঁর চরিত্রের নাম নীলাক্ষী।

ইটিভি ভারতের তরফে দেবনাথ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "আজকাল অডিশন দিতে গেলেও অডিশনের শেষে জিজ্ঞেস করা হয় কত ফলোয়ার্স আছে। ফলোয়ার্স বেশি হলে তাঁকে নিয়ে মানুষ কিছুদিন বেশি মাতামাতি করবে। আর তাতে সেই ছবি বা সিরিজ দেখতে মানুষ আগ্রহী হবে। এটা আগে মুম্বইতে হত। এখন এখানেও শুরু হয়েছে। নাম কে বাস্তে অডিশন নেওয়া হচ্ছে। আগে থেকেই ঠিক করা কাকে নেবে আর কাকে নেবে না। না হলে যারা জীবনেও অভিনয় করেনি তারা কাজ পায় আর আমরা পাই না?"

তিনি আরও বলেন, "প্রযোজকদের পছন্দই এখন সব। পরিচালকের পছন্দ সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। আর যে পরিচালক নিজের পছন্দের অভিনেতাকে নিতে চায় তাঁর পাশ থেকে প্রযোজনা সংস্থা সরে দাঁড়ায়।"

রায়তী ভট্টাচার্যর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "যে কোনও মানুষই চাইলে শিল্পী হয়ে উঠতে পারে, যে কোনও প্রফেশনে যেতে পারে সেটা নিয়ে কারোর কিছু বলার থাকতে পারে না। কিন্তু হতাশার জায়গা হল, অভিনয় তো আর পাঁচটা শিল্পের মতোই একটা সাধনার জিনিস যা শিখতে হয়, সাধনা করতে হয়। এবারে যাঁরা সেটাকে নিয়ে দীর্ঘদিন চর্চা করছেন তাঁরা এটুকু ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ পাচ্ছেন না, বসে আছেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে কিছু মানুষ যাঁদের প্রথাগত কোনও অভিনয়ের শিক্ষা নেই, অভিনয়ের সঙ্গে কোনও কানেকশন নেই শুধুমাত্র তাঁদের সামাজিক মাধ্যমে ফলোয়ার্স আছে বলে তাঁদেরকে অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চলছে। এই চেষ্টাটা আমার কাছে খুবই হতাশাজনক।"

রায়তী আরও বলেন, "এটা তো ঠিকই যারা একটা জিনিস নিয়ে চর্চা করে তারা যতটা যথাযথভাবে একটা কাজ করতে পারবে যারা এই নিয়ে কিছুই জানে না, আউটসাইডার তারা নিশ্চয়ই কাজ জানা লোকেদের থেকে ভালো করে ফেলবে না ৷ হয়ত কেউ কেউ ভালো করতে পারে কিন্তু সেটা খুবই কম সংখ্যায়। ব্যতিক্রমী সে তা হলে।আমার মনে হয়, ইন্ডাস্ট্রিতে যেখানে কত মানুষ কাজ পাচ্ছে না কাজ জানা সত্ত্বেও, তাদের দিকে না তাকিয়ে যাদের ফলোয়ার্স আছে তাদের জোর করে অভিনেতা বানানোর চেষ্টা অত্যন্ত হতাশাজনক।"

অভিনেত্রী বলতে থাকেন, "কিছুদিন আগে ইন্ডাস্ট্রির একজন দক্ষ পরিচালক অয়ন দা খাবারের দোকান খুলেছেন তপন থিয়েটারের সামনে। খুব হতাশার এটা। কাজ নেই তাই বাধ্য হয়েছেন। অবাক লাগে, কাজটা যারা জানে তারা বাধ্য হয়ে অন্য প্রফেশনে যাচ্ছে। আর যারা অন্য জায়গায় প্রতিষ্ঠিত, দরকার নেই অভিনয়ের, তারা জোর করে অভিনয়ে আসছে বা তাদের আনা হচ্ছে ইন্ডাস্ট্রির ব্যবসায়িক স্বার্থে। এতে প্রকৃত আর্টিস্টদের বিপাকে ফেলে দেওয়া হচ্ছে।

এখন একজন অভিনেতার যোগ্যতার মাপকাঠি শুধু অভিনয় নয়, তার সোশ্যাল মিডিয়ায় কত ফলোয়ার্স আছে সেটাও দেখা হচ্ছে সমাজ নজর দিয়ে।"

ABOUT THE AUTHOR

...view details