কলকাতা, 9 জুলাই: সিনেমা, সিরিয়াল কিংবা অন্য যে কোনও দৃশ্যমাধ্যমে শারীরিক 'প্রতিবন্ধী' বা বিশেষভাবে সক্ষমদের কোনওভাবে ‘অমর্যাদা’ করা যাবে না। সোমবার এমনই নির্দেশিকা জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট ৷ সেই নির্দেশিকায় স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে বিশেষভাবে সক্ষমদের বর্ণনা দিতে 'পঙ্গু', 'বিকলাঙ্গ' বা 'জড়বুদ্ধি'-র মতো শব্দগুলিও ব্যবহার করা যাবে না। কারণ এগুলি মানুষকে অবমাননা করার উপযোগী শব্দ।
এই বিষয়ে বিশিষ্ট কাহিনি ও চিত্রনাট্যকার তথা প্রযোজক লীনা গঙ্গোপাধ্যায় ইটিভি ভারতকে বলেন, "সুপ্রিম কোর্টের এই রায় আসার অনেক আগে থেকেই আমরা এগুলো মেনে চলি। তাই নতুন করে ভাবার আর দরকার নেই। আমরা সদা সতর্ক এই ব্যাপারে। শব্দ অনেক সময়েই প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্য গড়ে তোলে। বিশেষ করে 'পঙ্গু', 'বিকলাঙ্গ'র মতো কিছু শব্দকে অবমাননাকর বলে মনে করা হয় আমাদের সমাজে।" জনপ্রিয় চিত্রনাট্যকারে এর আগে দর্শকদের উপহার দিয়েছেন 'জল নূপুর'-এর পরীকে, 'রোশনাই'-এর মিনিকে কিংবা 'ধুলোকণা'র মৃণ্ময়ীদের। শীর্ষ আদালত এখন নির্দেশিকা জারি করলেও লেখিকার চিত্রনাট্যে বিশেষভাবে সক্ষমরা বরাবরই আলাদা মর্যাদা ও সম্মান পেয়েছেন ৷
সুপ্রিম কোর্টের রায় প্রসঙ্গে চলচ্চিত্র পরিচালক জয়দীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, "এই ব্যাপারগুলো নিয়ে আমরা অনেক আগে থেকেই সতর্ক হয়েই কাজ করি। বই কিংবা উপন্যাসে কোনও চরিত্রের অসুস্থতার ধরন বোঝাতে ওই জাতীয় শব্দগুলো প্রয়োজনে প্রয়োগ করা হত । নাহলে পাঠকের পক্ষে বোঝা সম্ভব হত না। কিন্তু সামনাসামনি বোঝাতে অসুবিধা নেই। আর ওই শব্দগুলো স্ক্রিপ্ট লেভেল থেকেই বাদ চলে যায় যদি ভুলবশত লেখা হয়েও যায়। সেন্সর রয়েছে। সুতরাং আমাদের নতুন কোনও সতর্কতার দরকার নেই।"
উল্লেখ্য, 2023 সালে মুক্তিপ্রাপ্ত উমেশ শুক্লা পরিচালিত 'আঁখ মিচোলি'-তে ভিন্নভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের দেখানো নিয়ে আপত্তি তুলে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছিলেন নিপুণ মালহোত্রা নামে জনৈক ব্যক্তি। সেই মামলাটি সোমবার ওঠে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চে।সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ অনুযায়ী, "দৃশ্যমাধ্যমগুলির উচিত বিশেষ ভাবে সক্ষমদের জীবনের আলোকময় দিকগুলিকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে সামনে নিয়ে আসা। শুধুই তাঁদের সমস্যা, অসুবিধার কথা পর্দায় তুলে না ধরে তাঁদের সাফল্য, মেধা এবং অবদানের কথা তুলে ধরতে হবে। তাতে তাঁরা উৎসাহ পাবে।"
এই নির্দেশ দেওয়ার পরে প্রধান বিচারপতি জাতীয় ফিল্ম সার্টিফিকেশন সংস্থা সিবিএফসি-কে নির্দেশ দিয়েছেন, এই ধরনের যে কোনও ছবির প্রদর্শনের আগে সিবিএফসি'র উচিত বিশেষজ্ঞদের থেকে মতামত নেওয়া।