কলকাতা, 14 অগস্ট: স্বাধীনতা দিবসের আবহে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে আসছে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের গল্প অবলম্বনে পরিণীতা সিরিজ ৷ মুখ্যচরিত্রে দেখা যাবে গৌরব চট্টোপাধ্যায় ও দেবচন্দ্রিমা সিংহ রায়কে ৷ এই মুহূর্তে বাংলার পাশাপাশি হিন্দি ধারাবাহিকেও নজর কেড়েছেন দেবচন্দ্রিমা ৷ হইচইয়ের ওয়েব সিরিজে দেবচন্দ্রিমার শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'ললিতা' হয়ে ওঠার কাহিনি শুনল ইটিভি ভারত।
ইটিভি ভারত: 'পরিণীতা' পড়া ছিল?
দেবচন্দ্রিমা: ক্লাস এইটে প্রথম পড়েছিলাম। যখন সবাই বলত ওটা বড়দের গল্প। এখনও পড়ার সময় হয়নি। তখন নিছকই আগ্রহের বশে পড়েছিলাম আমি আর আমার বন্ধু। তখন প্রেম, ভালোবাসা কিছুই অত বুঝতাম না। ললিতাকে গিরিনের কাছে মামার বিক্রি করে দেওয়া এসব কথার মানেই বোঝা সম্ভব ছিল না। তখনই পড়ে ফেলেছিলাম। আর এবার পড়লাম বোঝার জন্য।
ইটিভি ভারত: তার মানে আপনি সাহিত্যপ্রেমী?
দেবচন্দ্রিমা: পাগলপ্রেমী নই। কোনওকিছু নিয়েই আমার বাড়াবাড়ি নেই। ইংরেজি, বাংলা সব সাহিত্যই পড়ি। আজকাল হিন্দি সাহিত্যও পড়ছি। সবই জানার জন্য। না পড়লে একদিনও চলবে না, তেমনটা নয়।
'যাঁরা অন্যের অভিমান ভাঙাতে পারেন তাঁরা নিজেরাও ফের জুড়ে যান'; যীশু-নীলাঞ্জনাকে নিয়ে মুখ খুললেন কাছের মানুষ
ইটিভি ভারত: ললিতার চরিত্রটা চ্যালেঞ্জিং মনে হয়নি?
দেবচন্দ্রিমা: অবশ্যই মনে হয়েছে। এরকম চরিত্র আগে করিনি। ললিতার হাঁটাচলা, বাংলা কথা বলার ধরন, শাড়ি পরার ধরন রপ্ত করতে সময় লেগেছে। কাজটা পাওয়ার পর আনন্দ তো পেয়েইছি, ভয়টাও ছিল অনেক। এতগুলো মানুষ আমার উপর ভরসা করেছেন, মান রাখতে পারব তো? এই ভেবে বেশ চিন্তায় ছিলাম। বারবার পরিচালক অদিতি দি (রায়), চিত্রনাট্যকার শর্বরী দি'র সঙ্গে কথা বলে জানতে চেয়েছি ওঁরা কী চান। ওঁদের কথা মতোই কাজ করে গিয়েছি।
ইটিভি ভারত: হোম ওয়ার্ক কী রকম ছিল?
দেবচন্দ্রিমা : বাড়িতে স্ক্রিপ্ট নিয়ে এসেছিলাম। 20-25 দিন নিয়মিত পড়তে পড়তে মুখে বসে গিয়েছিল সংলাপ। আমার বাড়িতে আমার সঙ্গে সবসময় যিনি থাকেন তাঁর থেকে শাড়ি নিয়ে আটপৌরে কায়দায় শাড়ি পরে হাঁটা প্র্যাকটিস করতাম। কারোর সঙ্গে দেবচন্দ্রিমা হয়ে কথা বলিনি তখন। বাইরে বেশি বেরোইনি। এগুলোই ছিল হোম ওয়ার্ক।
ইটিভি ভারত: শুটিং কোথায় হয়েছিল?
দেবচন্দ্রিমা : মেদিনীপুরের চন্দ্রকোণায়, উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতায়।
ইটিভি ভারত: 'পরিণীতা' আপনার কেরিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট বলতে পারি?
দেবচন্দ্রিমা: একশোবার। এরকম গল্প নিয়ে কাজ খুব কম হয়। কাজ হল, আর সেখানে আমি ললিতা ৷ স্বপ্নের একটা চরিত্র বলতে পারেন। আজ যদি 'পথের পাঁচালি' হয় আর কেউ যদি আমাকে অফার দেয় আমি লুফে নেব। এই সব কাল্ট ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ কেউ ছাড়ে? আর এগুলোই কেরিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট হয়ে থেকে যায়।
ইটিভি ভারত: পরিচালক হিসেবে অদিতির সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
দেবচন্দ্রিমা: অদিতি দি জলের মতো। যে পাত্রে দেবেন সেই পাত্রের আকার ধারণ করবে। একবারও রাগ করতে দেখিনি। কত আস্তে কথা বলেন। কত শান্তভাবে ইউনিট সামলান। আর সবাই শোনে ওঁর কথা। আমি ওঁর ঠিক বিপরীত। হঠাৎ করে রেগে যাই। তবে, আগের থেকে অনেক কমিয়েছি রাগ।
ইটিভি ভারত: অনেক দূর থেকে এসে কলকাতায় থাকছেন। কখনও নিরাপত্তাহীন মনে হয়নি?
দেবচন্দ্রিমা: না। ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছি। মা আমাদের দুই বোনকে শিখিয়েছেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে নিজের জন্য। প্রয়োজনে অন্যকে সাহায্য করতে হবে। এখানে এসে লেখাপড়া এবং অভিনয় সবই সামলাচ্ছি। আর্থিক অসুবিধা আজও হয়নি। সেরকম পরিস্থিতি এলে সামলে নেব। এর বাইরে রাস্তাঘাটে বা অন্য কোনও নিরাপত্তাহীনতার কথা যদি বলেন সেটারও সম্মুখীন হইনি। আর যদি হইও তার জন্যও প্রস্তুত। আমি এমন একজন মানুষ, কথার আগে হাত চলে। সেরকম পরিস্থিতির আভাস পেলে আমি সেভাবেই নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করব। এই প্রসঙ্গে আমি নিজের ব্যাপারে একটা কথা বলতে চাই। আমার মুখের কোনও রি-অ্যাকশন নেই। সবাই এর জন্য আমাকে খুব রূঢ় মনে করেন। রাগী ভাবে। কিন্তু আমি এরকমই।
উল্লেখ্য, এই মুহূর্তের ব্যস্ত নায়িকাদের মধ্যে অন্যতম দেবচন্দ্রিমা সিংহ রায়। হিন্দি ধারাবাহিক 'সুহাগন চুড়েল'-এ তিনটি মুখ্য চরিত্রের মধ্যে একটিতে তিনি। 'বুমেরাং'-এ সৌরভ দাসের সঙ্গে জুটিতেও ছিলেন দেবচন্দ্রিমা। পাশাপাশি নিজের চেনা ইমেজ ভেঙে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'পরিণীতা'র ললিতা হয়ে উঠেছেন সিঙুরের মেয়ে দেবচন্দ্রিমা। পড়াশুনার কারণে কলকাতায় আসা তাঁর। পড়াশুনার পাশাপাশি অভিনয়। অভিনয়েও বেশ ভালো সাড়া ফেলেছেন তিনি। 'কাজল লতা' থেকে 'সাঁঝের বাতি', 'সাহেবের চিঠি' দেবচন্দ্রিমার বাংলা ধারাবাহিকের তালিকা ছয় বছরে নেহাত কম নয়।