কলকাতা, 26 অক্টোবর: সামনেই দীপাবলি, আলোর উৎসব ৷ আবার এই সময়ে ধনতেরাস উপলক্ষে গয়না কেনেন না এমন নারী হাতে গোনা। তবে, এখন সোনার বাজার আগুন ৷ হাত দিলেই লাগছে ছ্যাঁকা ৷ 29 তারিখ ধনতেরাস ৷ সোনার আকাশছোঁয়া দাম কি প্রভাব ফেলছে কেনাবেচায়? কী বলছেন নানা পেশার নামজাদা নারীরা? কেমন গয়না ভালবাসেন তাঁরা? ধনতেরাসে গয়না কেনেন? খোঁজ নিল ইটিভি ভারত।
অপরাজিতা আঢ্য (অভিনেত্রী): গয়না পরতে ভীষণ ভালোবাসি। সেই জন্য আমার শাশুড়ি মা আমাকে মণিহারা ডাকেন ৷ কিন্তু বহু বছর হল গয়না কেনা ছেড়ে দিয়েছি। যেদিন থেকে সোনার এরকম আকাশছোঁয়া দাম সেদিন থেকেই বন্ধ। তবে, কখনও মনে হলে এক্সচেঞ্জ করি। কোনওটা অনেক পুরনো হয়ে গিয়েছে মনে হলে তার বদলে সম-পরিমাণ ওজনেরই গয়না নিয়ে আসি। যেদিন থেকে 28 হাজারের উপরে দাম চলে গিয়েছে সেদিন থেকেই সোনা কেনা বন্ধ করে দিয়েছি। আগে ধনতেরাস মানেই কিনতে হবে এমন উদ্যোগ ছিল। এখন সেই উদ্যোগ আর সাহস কিছুই নেই। তার উপরে এখন যা কাজকর্মের অবস্থা তাতে কাজের কোনও নিশ্চয়তা নেই। হয়ত নিয়মিত কাজ করছি কিন্তু সেই পরিমাণে হচ্ছে কই? তাই নতুন গয়না কেনার সাহস পাই না আর। তবে, গয়নার মধ্যে পছন্দের তালিকায় রয়েছে সীতাহার, গোলাপ পাতা হার, বেলকুড়ি মালা, মান্তাসা, চুড়, নেকলেস, মাথার মুকুট, ফারপো বালা, মকরমুখ বালা।
পৌষালি বন্দ্যোপাধ্যায় (গায়িকা): গয়না পরতে যে খুব ভালো লাগে তেমনটা নয়। তবে, হালকা একটা ঝোঁক আছে গয়নার প্রতি। গয়না পরলেও খুব ভারী গয়না আমি পরি না। আমার ভালো লাগে না। বরং হালকা গয়না পরতেই বেশি পছন্দ করি আমি। আর ধনতেরাসে গয়না কিনতেই হবে এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই আমার।
ডা. রূপালি বসু (চিকিৎসক): গয়না পরতে অবশ্যই ভালোবাসি। গয়নার তো একটা আলাদা ভ্যালু আছে। যে কোনও সাজের সঙ্গে গয়না মাস্ট। তবে, এমনটাও নয় যে মেকআপ বা গয়না না হলে চলবে না। কিন্তু আমি জামাকাপড়ের সঙ্গে ম্যাচিং জুতো পরি, ম্যাচিং গয়না পরি, ব্যাগ নিই, মেকআপ করি সবসময়। যেটাই করি সেটাই যেন নিজের পোশাক এবং অভিব্যক্তির সঙ্গে মানানসই হয় সেদিকে খেয়াল রাখি। স্পেশাল অকেশনে বড় জাঙ্ক গোল্ড পরি। পুরনো গোল্ড জুয়েলারি, বড় পোলকির ডায়মন্ড মানে আনকাট ডায়মন্ড আমার খুব পছন্দের। বাঙালির হাতে গড়া পুরনো ডিজাইন খুব পছন্দ করি। গোল্ডের সঙ্গে পাথর সেটিং-ও আমার পছন্দের তালিকায়। নবরত্ন বসানো জুয়েলারিও আমার পছন্দ। ট্রাভেলের সময়ে আর্ট জুয়েলারি পরি। রজনীগন্ধা, পুরনো ঘড়ি, আমপাতা দিয়ে ডিজাইনাররা নানান ধরনের গয়না রয়েছে। ওগুলোও পরি। সাজগোজে ভিতরের ভালোবাসাটা জরুরি। একইসঙ্গে কী ধরনের ফিলোজফিতে আপনি বিশ্বাস করেন।
ধনতেরাসে অনেকেই গয়না কেনেন। আমার সেই দৌড় নেই। আমার মধ্যে ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা নেই। আমি ভ্যালুতে বিশ্বাসী। স্পিরিচুয়ালিজমের মধ্যে চলি। তবে, বন্ধুরা মিলে ওইদিনে কিনতে গেলে যাই। গেলে ভালোলাগবে বলে যাই। তবে এবার যাব না। এবারটা অন্যরকম। অনেক প্রশ্ন আমাদের। যার উত্তর খুঁজছি এখনও।
শান্তি দাস বসাক (অ্যাডিশনাল সুপারিন্টেন্ডেন্ট অফ পুলিশ, পশ্চিমবঙ্গ): আমার গয়নার প্রতি প্রেম নেই, ভাবনাও নেই। ভাবনা বেশি জামাকাপড় নিয়েই। আমি গয়না বানিয়ে দেখেছি, পরাই হয় না। পড়ে থাকে। পার্টি, প্রোগ্রাম কোথাও গেলেও ওই সবসময় যেটা পরে থাকি ওটা পরেই চলে যাই। সেই জন্যই দু'চার বছর পর পর ডিজাইন গুলো চেঞ্জ করিয়ে নিই। তাতেই অন্যরকম লাগে। তবে, আমার বান্ধবীদের মধ্যে গয়না নিয়ে উন্মাদনা দেখেছি, পুলিশ অফিসার মহিলাদের মধ্যেও রয়েছে এই উন্মাদনা। ধনতেরাসে গয়না কেনা একটা রেওয়াজ। আমি সেই রেওয়াজে নেই।
আমি তো এটাও অবজার্ভ করে উঠতে পারি না যে আমার কোনও বান্ধবী কোনও নতুন গয়না পরেছে কি না। ফলে, তাকে বলতেও পারি না যে "তোর গয়নাটা সুন্দর"। আর আমার পছন্দ বলতে স্লিক, স্মার্ট ডিজাইনের হালকা গয়না। যেটা আমার পোশাকের সঙ্গে মানানসই।
মল্লিকা বন্দ্যোপাধ্যায় (অভিনেত্রী): সোনার গয়নার প্রতি আমার খুব আগ্রহ। আমার ডায়মন্ড বা প্ল্যাটিনামে আগ্রহ নেই। সম্ভব হলে টাকা জমিয়ে সোনা'ই কিনি। নচেৎ নয়। তবে, ধনতেরাসে গয়নাই কিনতে হবে এমনটা বাধ্যবাধকতা নেই। বাড়ির জন্য নতুন কিছু কিনে আনি। যেমন ঠাকুরের জন্য পিতলের বাটি কিংবা কোনওবার একটা প্রদীপ। সোনার দাম যে হারে বেড়েছে তাতে সোনা কিনতে ভয়ই লাগে। আর বিভিন্ন দোকানে যে পুরনো গয়নার বদলে নতুন গয়না দেওয়ার প্রলোভন দেখায়, আখেরে তাতে লাভ নেই। পাঁচ ভরির গয়না এক্সচেঞ্জ করতে গেলে আজ তার বদলে দু'ভরির গয়না হাতে ধরিয়ে দেবে। কেন না সোনার আজ আকাশছোঁয়া দাম।