বাঁকা, 16 নভেম্বর: বিষ খেয়ে মৃত্যু হল একই পরিবারের তিন সদস্যের ৷ বাকি দু'জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক ৷ ঘটনাটি ঘটেছে বিহারের বাঁকা জেলার অমরপুর থানা এলাকার বালুয়া গ্রামে ৷ ঝণ-সমস্য়ায় জর্জরিত ছিলেন পরিবারের সদস্যরা। তাঁদের ঘণিষ্ঠদের অনুমান, আর্থিক অনটনের জন্যই এমন চরম সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন পাঁচ জন ৷
শনিবার ভোররাতে পরিবারের কর্তা কানহাইয়া মহতো (40) এবং তাঁর স্ত্রী গীতা দেবী (35) এবং তাঁদের এক সন্তান ধীরাজ কুমারের (12) চিকিৎসা চলাকালীন মৃত্যু হয় ৷ বাকি দুই সন্তান সবিতা কুমারী (16) ও রাকেশ কুমারের (8) অবস্থা সঙ্কটজনক ৷ ভাগলপুরে জওহরলাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা চলছে ৷
কানহাইয়া মহতো পেশায় অটো চালক ছিলেন ৷ তিনি পরিবারের আর্থিক দুর্দশা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন বলে জানা গিয়েছে ৷ সম্ভবত সেই কারণেই এমন চরম পন্থা বেছে নিয়েছিলেন ৷ ভাগলপুরের এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, "তাঁরা একাধিক বেসরকারি ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন ৷ সেই পাওনা টাকা আদায়ে বারংবার ব্যাঙ্কের কর্মচারীরা তাঁদের বাড়ি আসছিলেন ৷ সুতরাং, দেনার চাপে পরিবারটি এই রকম কাণ্ড করে বসে ৷"
মৃতের মেয়ে সবিতা কুমারী বলেন, "আমার বাবার অনেক টাকা দেনা হয়ে গিয়েছিল ৷ বকেয়া টাকা চেয়ে ব্যাঙ্কগুলি আমাদের লাগাতার তাগাদা দিচ্ছিল, হয়রান করছিল ৷ আমার বাবা-মা বলছিলেন পরিবারের নামে বদনাম রটে গিয়েছে ৷ আমরা আর বাঁচতে চাই না ৷ প্রথমে আমার দুই ভাই, তারপর আমায় এবং সবশেষে বাবা-মা একটি ট্যাবলেট খেয়ে ফেলেন ৷ ওই ট্যাবলেট সবজিতে দেওয়া হয় ৷ আমার ছোট ভাই রাকেশ ট্যাবলেটটি মুখে নিয়ে পরে ফেলে দেয় ৷"
কানহাইয়া মহতোর বউদি বীণা দেবী বলেন, "দেনার দায়ে জর্জরিত হয়ে আমার দেওর, তাঁর বউ এবং তাঁদের সন্তানেরা বিষ খেয়ে ফেলেন ৷ আমার ছোট দেওর আমায় খবর দেয় ৷ তারপর আমরা সবাই মিলে ওদের অমরপুরের হাসপাতালে নিয়ে যাই ৷" পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে যে তাঁরা শুক্রবার রাতে সালফার ট্যাবলেট খেয়েছিলেন ৷ মধ্যরাতের পর তাঁদের সবার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে তাকে ৷ রাত 2.30 মিনিট নাগাদ কানহাইয়ার ছোট ভাই পরিবারের সদস্যদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় ৷
অমরপুর থানার পুলিশ আধিকারিক পঙ্কজ কুমার ঝা বলেন, "এই ঘটনার খবর পেয়ে আমরা সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের একটি দলকে ঘটনাস্থলে পাঠাই ৷ ওই দলের সদস্যরা সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের অমরপুর রেফারেল হাসপাতালে নিয়ে যায় ৷ সেখান থেকে আরও ভালো চিকিৎসার জন্য তাঁদের ভাগলপুর হাসপাতালে পাঠানো হয় ৷ রাস্তাতেই পরিবারের স্বামীর মৃত্যু হয় ৷ কিছুক্ষণ পর স্ত্রীরও মৃত্যু হয় ৷ আরও পরে প্রাণ যায় এক সন্তানেরও।"