কলকাতা, 16 অগস্ট: আরজি কর হাসপাতালে ডাক্তারি পড়ুয়ার ধর্ষণ ও খুনের মামলায় সরব হলেন বলিউড তারকা হৃতিক রোশন ৷ নিরাপদ ও সভ্যসমাজ গড়ে তোলার বার্তা দিলেন তিনি ৷ কলকাতার এই ঘটনায় নারী সুরক্ষা ও ধর্ষকদের আইনের কঠোরতম সাজার পক্ষে সওয়াল করেছেন ভারতী মহিলা ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক মিতালি রাজ ৷ কেকেআর অধিনায়ক শ্রেয়স আইয়ার তাঁর সোশাল মিডিয়া পোস্টে আরজি কর-কণ্ডে মৃত নির্যাতিতার সুবিচারের দাবি জানিয়েছেন ৷ নীরবতা ভাঙার ডাক দিলেন কবি প্রীতিশ নন্দী ৷
আরজি করের মৃত নির্যাতিতার সুবিচার এবং অভিযুক্তদের আইনের সর্বোচ্চ সাজার দাবিতে সরব সমগ্র বাংলা ৷ খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর হতে বার্তা দিয়েছেন সব রাজ্য সরকারকে ৷ তেমনি আরজি করের ডাক্তারি পড়ুয়ার সুবিচার ও নারী সুরক্ষার দাবি উঠেছে বিবিধ ক্ষেত্রে দেশের প্রতিষ্ঠিত মুখগুলির তরফে ৷ গতকালই বলিউড তারকা আয়ুষ্মান খুরানা, আলিয়া ভাট আরজি কর-কাণ্ডে দেশের নারী সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ৷ 2012 সালের দিল্লির নির্ভয়াকাণ্ডের প্রসঙ্গও তুলে ধরেছিলেন ৷
শ্রেয়স আইয়ারের ইনস্টাগ্রাম স্টোরি (ইনস্টাগ্রাম স্টোরি) এবার সোশাল মিডিয়ায় মহিলাদের জন্য সুরক্ষিত সমাজের দাবিতে সরব হলেন হৃতিক রোশন ৷ এক্স হ্যান্ডেলে হৃতিক লেখেন, "হ্যাঁ আমাদের এমন একটি সমাজে গড়ে তুলতে হবে, যেখানে আমরা সবাই সমানভাবে নিরাপদ বোধ করব ৷ কিন্তু, তাতে কয়েক দশক লেগে যাবে ৷ আশা করি আমাদের ছেলে-মেয়েদের সংবেদনশীল ও ক্ষমতায়নের মাধ্যমে তা ঘটবে ৷ আগামী প্রজন্ম অনেক বেশি সভ্য হবে ৷ আমাদের সেখানে পৌঁছতেই হবে ৷"
তবে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, "কিন্তু, এর মাঝের সময়ে কী হবে ? এখন ন্যায়বিচারের মধ্যে দিয়ে এই ধরনের নৃশংসতা কঠোরভাবে বন্ধ হোক ৷ আর তা করার একমাত্র উপায়, এতটাই কঠোর শাস্তি দেওয়া, যার ফলে এই ধরনের অপরাধীরা দিনের আলোয়র বেঁচে থাকতে ভয় পাবে ৷ আর সেটাই আমরা চাই ৷" আরজি কর হাসপাতালের মৃত নির্যাতিতার পরিবারের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন হৃতিক ৷ সেই সঙ্গে স্বাধীনতা দিবসের রাতে আরজি কর হাসপাতালে দুষ্কৃতি হামলার ঘটনার নিন্দা করেছেন তিনি ৷ সুবিচার ও নিরাপত্তার দাবি আন্দোলনরত চিকিৎসকদের সমর্থন জানিয়েছেন বলিউড তারকা ৷
আরজি করের ঘটনায় অভিযুক্তদের শনাক্ত করে কঠোর শাস্তির দাবি তুললেন ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক মিতালি রাজ ৷ তিনি সোশাল মিডিয়ায় লেখেন, "কলকাতায় ডাক্তারের নৃশংস ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা আমাদের বুঝিয়ে দিল, যাঁরা দিনরাত এক করে আমাদের সেবা করছেন ও জীবন ফেরাচ্ছেন, তাঁরাও এই ধরনের ভয়াবহ হিংস্রতার থেকে মুক্ত নয় ৷ এতটাই দুঃখজনক, যিনি অন্যদের সুরক্ষা এবং যত্ন নেওয়ার প্রতিশ্রুতি নিচ্ছেন ৷ তিনিই এমন একটি জঘন্য ঘটনার শিকার হচ্ছেন ৷ ধর্ষকদের আইনের পূর্ণ শক্তিকে ব্যবহার করে কঠোর শাস্তি দিতে হবে ৷ নিরাপত্তা, স্বাধীনতা এবং সম্মান প্রত্যেক মহিলার অধিকার ৷"
কবি প্রীতিশ নন্দী আরজি কর-কাণ্ড ও তাকে কেন্দ্র করে কলকাতায় ঘটে যাওয়া একের পর এক ঘটনার নিন্দা করেছেন ৷ তিনি লেখেন, "আমি কলকাতাকে ভালোবাসি ৷ 40 বছর আগে মুম্বইয়ে চলে আসার আগে আমার জীবনের সুন্দর ও সেরা মুহূর্তগুলি আমি এই শহরে কাটিয়েছি ৷ যখনই প্রয়োজন পড়ে ও সম্ভব হয় আমি কলকাতা (এবং বাংলা)-র সবকিছুর পক্ষে কথা কথা বলি ৷ কিন্তু, এবার আর চুপ থাকতে পারলাম না ৷ আরজি কর হাসপাতালে যে ঘটনা ঘটেছে (দুই মেয়ের বাবা হিসেবে, বর্ণনা দিতেও কেঁপে উঠছি আমি), তা আমাদের কাছে লজ্জার ৷ আরও যেটা আমাকে লজ্জিত করছে (ঘটনার পর হাসপাতালে ঢুকে ভাঙচুর ও প্রমাণ নষ্ট করার চেষ্টা হচ্ছে ৷ যা অপরাধীকে সাহায্য করবে), তা হল যে নিষ্ঠুরতার সঙ্গে কর্তৃপক্ষ এই ঘটনাটিকে নিয়ন্ত্রণ করছে ৷"
প্রীতিশ নন্দীর মতে, বাংলার সেই সংস্কৃতি আজ ধ্বংস হয়ে গিয়েছে ৷ যে সংস্কৃতি মহিলাদের সম্মান করতে শেখায় ৷ তাই তিনি উল্লেখ করেছেন, "আমি দুঃখিত ! আমি লজ্জিত ! যে সংস্কৃতি সর্বদা নারীসমাজকে সম্মান করতে শিখিয়েছে, আজ তা অবশেষে ধ্বংস হল ৷ না, এটা সেই কলকাতা নয়, যাকে আমি চিনতাম ও ভালোবাসতাম ৷"