চণ্ডীগড়, 27 ডিসেম্বর: 92 বছর বয়সে প্রয়াত হলেন ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ৷ বৃহস্পতিবার রাতে দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সে (AIIMS) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ৷ ব্যবহারে নম্রতা এবং তীক্ষ্ণ বুদ্ধির জন্য পরিচিত মনমোহন সবসময় ভারতের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গিয়েছেন। আর এই সফরে মনমোহন সিংয়ের প্রথম প্রেম ছিল পঞ্জাব। তিনি সেখান্ইে জন্মগ্রহণ করেন । পঞ্জাবের মাটিতেই শিক্ষা লাভ করেন।
পঞ্জাবের মাটির শক্তিই তাঁকে দেশের প্রথম শিখ প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছিল। অমৃতসরের সঙ্গে তাঁর আবেগঘন সম্পর্ক। মনমোহন সিংয়ের পঞ্জাবের সঙ্গে বিশেষ করে অমৃতসরের সঙ্গে মানসিক সংযোগ ছিল। তিনি 1932 সালের 26 সেপ্টেম্বর পঞ্জাবের (বর্তমানে পাকিস্তানে) গাহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মনমোহন। তাঁর বয়স যখন মাত্র 14 বছর, তখনই দেশে ভাগ হয়েছিল।
৷ পঞ্জাব বিভাজনের শোক তিনি সর্বদা অনুভব করতেন। তিনি যখন ছোট ছিলেন তখন তাঁর মায়ের মৃত্যু হয় ৷ ঠাকুমার কাছেই বেড়ে ওঠেন। দেশভাগের পর তাঁর পরিবার পাকিস্তান ছেড়ে অমৃতসরে ঘর বাঁধে। স্ত্রী গুরশরণ কৌরও অমৃতসরের বাসিন্দা। তাঁদের তিন কন্যা- উপিন্দর কৌর, দমন কৌর এবং অমৃত কৌর। প্রয়াত নেতা অমৃতসরে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে 1948 সালে হিন্দু কলেজ থেকে স্নাতক পাশ করেন। অর্থনীতিতে বিএ নিয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে শীর্ষস্থানও পেয়েছিলেন ৷
প্রায় সাত দশক পর, 2018 সালে, হিন্দু কলেজে গিয়ে তিনি তাঁর পুরোনো মুহূর্তগুলি স্মরণ করে বলেছিলেন, "এই কলেজটি আমাকে আজকের আমি হিসেবে তৈরি করেছে।" 6 বোন এবং তিন ভাই সুরিন্দর সিং কোহলি, সুরজিত সিং কোহলি এবং দলজিৎ সিং কোহলি-সহ তাঁর অনেক আত্মীয় এখনও অমৃতসরে থাকেন। সুরজিত ও দলজিৎ দু'জনেই অমৃতসরে পোশাকের ব্যবসায় রয়েছেন। তাঁদের একটি কারখানা রয়েছে যা অটো যন্ত্রাংশ তৈরি করে।
অমৃতসর শহরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে, কংগ্রেস তাঁকে 2009 এবং 2019 লোকসভা নির্বাচনে অমৃতসর থেকে টিকিট দেওয়ার কথা বিবেচনা করেছিল, কিন্তু তিনি স্বাস্থ্যের কারণ উল্লেখ করে উভয় সময়ই প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর মেয়াদকালে, মনমোহন সিং 2006 সালের মার্চ মাসে অমৃতসর থেকে নানকানা সাহিব পর্যন্ত "পঞ্জ-আব" বাস সার্ভিস চালু করেছিলেন ৷ যা শিখদের সবচেয়ে শ্রদ্ধেয় দুটি মন্দিরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেছিল। দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্কের কারণে পরে বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
মনমোহন সিংয়ের হৃদয়ে পঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। চণ্ডীগড়ের মর্যাদাপূর্ণ পঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় মনমোহন সিং-এর অ্যাকাডেমিক যাত্রায় একটি বিশেষ স্থান ধারণ করে, যেখানে তিনি অধ্যয়ন করেছেন এবং অধ্যাপক হিসেবে ছাত্রদের পড়িয়েছেন। 2018 সালে পঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার সময় তাঁর পুরনো দিনের কথা স্মরণ করে তিনি জানিয়েছিলেন, তিনি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছিলেন এবং পড়াতেন সেই সময়টি ছিল তাঁর জীবনের সবচেয়ে আনন্দের সময়।
1957 থেকে 1966 সাল পর্যন্ত তিনি সেখানে অধ্যাপক হিসেবে সময় কাটিয়েছিলেন। মনমোহন সিং বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরু তেগ বাহাদুর রিডিং হলের জন্য 3500টি বইও দান করেছিলেন। 1967 সালে বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করার পর, মনমোহন সিং দু'বার পঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন ৷ তিনি দীর্ঘদিন চণ্ডীগড়ের সেন্টার ফর রিসার্চ ইন রুরাল অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট (CRRID)-এর গভর্নিং বডির সদস্য ছিলেন।