পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

প্রৌঢ়াকে পিঠে চাপিয়ে হাঁটা দিলেন আশা কর্মী, ঘূর্ণিঝড়ের ত্রাতাকে কুর্নিশ মুখ্যমন্ত্রীর

তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে অনিশ্চিত জীবনের মাঝে আশা কর্মী শিবানী মণ্ডল যেন গ্রামের ত্রাতা ৷ মুখ্যমন্ত্রী মোহন মাঝি ফোনে তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ৷

Cyclone Dana
ত্রাতা শিবানীকে ঘিরে রয়েছেন প্রৌঢ়ারা (ইটিভি ভারত)

By ETV Bharat Bangla Team

Published : 6 hours ago

ভুবনেশ্বর ও কেন্দ্রাপাড়া, 25 অক্টোবর: তীব্র ঘূর্ণিঝড় দানার তাণ্ডবে জীবন তছনছ হবে, তা তখন প্রায় নিশ্চিত ৷ ওড়িশার কেন্দ্রাপাড়ায় দুপুর থেকেই ঝোড়ো হাওয়া বইতে শুরু করেছে ৷ কালো মেঘে ঢেকে যাচ্ছে আকাশ ৷ অন্ধকার হয়ে আসছে চারদিক ৷ তিনি বুঝতে পারছিলেন হাতে সময় বেশি নেই ৷ এবার যা করার তাঁকেই করতে হবে ৷ তাই তড়িঘড়ি এক মহিলাকে নিজের পিঠে নিয়েই দ্রুতগতিতে হাঁটতে শুরু করলেন পেশায় আশা কর্মী শিবানী মণ্ডল ৷

বাস্তবে ঝড়ের রাতে তিনিই ত্রাতা, বিশেষত কেন্দ্রাপাড়া জেলার তালাচুয়া সার্কেলের খাসমুণ্ডা গ্রামের প্রবীণ অসহায় মহিলাদের কাছে ৷ গ্রামের বৃদ্ধারা তাঁদের ভাঙাচোরা ঘরের মায়া কাটিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে চাইছিলেন না ৷ তাঁরা ঠিকই করেছিলেন মরতে হলে ওই খড়কুটোর ঘরেই মরবেন ৷ 42 বছরের শিবানী প্রৌঢ়াদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের বোঝান ৷ ত্রাণশিবিরে নিরাপদে রাতটা কাটানোর জন্য রাজি করান ৷

এমন 7 জনকে বুঝিয়ে তাঁদের ত্রাণ শিবিরে নিয়ে যান তিনি ৷ সাত জনের মধ্যে একজনকে তো শিবানী নিজের পিঠেই বয়ে নিয়ে ত্রাণ শিবিরে পৌঁছে দিয়েছেন ৷ ঘূর্ণিঝড় চলে গিয়েছে ৷ স্বস্তি ফিরেছে তাঁদের জীবনে ৷ তাঁর এই প্রাণপাত করে অন্যের জীবন রক্ষার খবর পৌঁছেছে ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহন মাঝির কানে ৷ শুক্রবার ঘূর্ণিঝড় দানার পর্যালোচনামূলক বৈঠক থেকে আশা কর্মী শিবানীর প্রশংসা করেন তিনি ৷

শিবানী কিন্তু এসব জানেন না ৷ তিনি কখনও জরুরি ফোন ধরে কথা বলছেন ৷ কখনও ত্রাণ শিবিরে কোথায় কার কী দরকার, তার খবর নিচ্ছেন ৷ এমন ব্যস্ততার মাঝেই ইটিভি ভারতের প্রতিনিধির সঙ্গে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা ভাগ করে নিলেন শিবানী ৷ তিনি বলেন, "আমি একজন আশা কর্মী হিসেবে নিজের কর্তব্য করেছি মাত্র ৷ আমার গ্রামটা আমার কাছে পরিবার ৷ আমি ঠিকই করেছিলাম, এই বিপদের মধ্যে গ্রামের একজনও যেন না থাকে ৷"

2006 সাল থেকে রাজনগর গ্রুপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আশা কর্মী হিসেবে কাজ করে চলেছেন তিনি ৷ গ্রামের সকলে কর্তব্যবোধের জন্য তাঁকে সম্মান করেন ৷ বিপদে-আপদে শিবানী তাঁদের পাশে থাকবেন, এই বিশ্বাস রয়েছে মানুষের মনে ৷ শিবানী বলেন, "ফণী ঘূর্ণিঝড়ের সময়েও আমি একইভাবে কাজ করেছি ৷ গ্রামের কেউ যেন সমস্যায় না পড়ে ৷ আমি নিরন্তর আমার কাজ করে চলেছি ৷ সেটা স্বাস্থ্যজনিত কোনও জরুরি ব্যাপার হোক বা অন্য কোনও ইস্যু ৷ আমার এলাকায় কিছু হলে আমি সেখানে সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যাই ৷"

শুক্রবার দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী মোহন মাঝি শিবানীকে ফোন করেন তাঁর এই সাহসিকতার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ৷ আশা কর্মী শিবানীকে তিনি বলেন, "সরকার এবং আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে আপনার কাজে খুব খুশি হয়েছি ৷ ভগবান জগন্নাথ আপনাকে আশীর্বাদ করুন ৷" যে শিবানী অন্যকে নিরাপদে আশ্রয়ে নিয়ে যান নিজের পিঠে চাপিয়ে, তাঁরই নিজের কোনও ঘর নেই ৷ এই সমস্যার সমাধানে মুখ্যমন্ত্রী রাজনগর প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন যেন দ্রুত তাঁর ঘরের বন্দোবস্ত করে দেওয়া হয় ৷ এছাড়া অন্যান্য যে কোনও প্রয়োজনে প্রশাসনিক কর্তারা যেন শিবানীর পাশে থাকেন ৷

যে 7 জন মহিলাকে শিবানী উদ্ধার করে ত্রাণ শিবিরে নিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে একজন বলেন, "আশা দিদি শিবানী আমাকে বাঁচিয়েছেন ৷ না হলে হয়তো মরেই যেতাম ৷ আমার ঝুপড়িটার অবস্থা খুবই খারাপ ৷ কিন্তু আমার বাড়িটা ছেড়ে আসার সাহস ছিল না ৷ তিনি আমায় বুঝিয়েছিলেন ৷" এই সাতজনের মধ্যে একজন সদ্য মা হয়েছেন ৷ তিনি তার আগের দিন অর্থাৎ বুধবার সন্তানের জন্ম দিয়েছেন ৷ আরেকজনের ছেলে গ্রামে নেই ৷ অন্যদেরও অবস্থা একই রকম ৷ ভাঙাচোরা ঘর যে কোনও মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে ৷ এই প্রসঙ্গে শিবানীর কথায়, "যখন আমি কারও দায়িত্ব নিই, তখন এটা নিশ্চিত যে তিনি প্রাথমিক প্রয়োজনগুলি থেকে বঞ্চিত হবেন না ৷"

মহিলাদের নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যেতে তিনি গ্রামবাসীদের সাহায্য নিয়েছিলেন ৷ শুধু একজন মহিলাকে নিজেই বহন করেন ৷ তখন চারদিক অন্ধকার হয়ে আসছিল ৷ আর দেরি করলে অনেকটা দেরি হয়ে যেত ৷ আশা কর্মী বলেন, "আমি যদি গ্রামের কারও সাহায্যের জন্য অপেক্ষা করতাম, তাহলে দেরি হয়ে যেত ৷" এর জন্য কী পুরস্কার চান শিবানী ? আবেগঘন গলায় শিবানী বলেন, "আমি টাকার জন্য কাজ করি না ৷ আমি কাজ করি কারণ তাঁরা আমার নিজেদের লোক ৷ আমি কাউকে কষ্ট পেতে দেখতে পারব না ৷"

ABOUT THE AUTHOR

...view details