নয়াদিল্লি, 9 ডিসেম্বর: ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ দেওয়া সম্ভব নয়। এমনই মন্তব্য করল সুপ্রিম কোর্ট । বিচারপতি বিআর গভাই এবং বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথনের ডিভিশন বেঞ্চ সোমবার পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটি মামলার শুনানির সময় এই মন্তব্য করেছে। ওবিসি সংশাপত্র বাতিল সংক্রান্ত মামলা শুনছিল সুপ্রিম কোর্ট ।
ওবিসির মধ্যে 77টি জনজাতিকে অন্তর্ভুক্ত করেছে রাজ্য। তার বেশিরভাগই মুসলমান সম্প্রদায়ের। মামলার শুনানিতে রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিবাল বলেন, "রাজ্য সরকার এ বছর থেকে এরকম কিছু করবে না । শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি বা চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে এই সংরক্ষণের কোনও ভূমিকা নেই ।" পাশাপাশি তাঁর আরও দাবি, ধর্মের ভিত্তিতে নয়, পিছিয়ে পড়া জনজাতির কথা মাথায় রেখেই এই সংরক্ষণ করা হয়েছিল ।
এখানই বিচারপতি গভাইয়ের পর্যবেক্ষণ, ধর্মকে ভিত্তি করে সংরক্ষণ দেওয়া সম্ভব নয়। পাল্টা সিবাল ফের দাবি করেন, এই সংরক্ষণের ভিত্তি ধর্ম নয় । হিন্দুদের মধ্যেও পিছিয়ে পড়া জনজাতি আছে। সেই বিষয়টাও মাথায় রেখেছিল রাজ্য প্রশাসন । এরপর শুনানির সময় আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে আসে ।
প্রথমেই আসে রঙ্গনাথ কমিশনের সুপারিশের বিষয়টি । তিনিও এই পদ্ধতিতেই ওবিসি সংরক্ষণের পক্ষে । তাছাড়া যে 77টি জনজাতি নিয়ে চর্চা হচ্ছে তার অনেকগুলি কেন্দ্রীয় তালিকাতেও আছে। পাশাপাশি অন্ধ্রপ্রদেশের একটি মামলার কথাও সুপ্রিম কোর্টে তুলে ধরেন সিবাল। সেই মামলায় সংশ্লিষ্ট হাইকোর্ট মুসলমানদের ওবিসি সংরক্ষণ দেওয়ার বিষয়টি খারিজ করে দিয়েছিল। পরে সুপ্রিম কোর্ট এই মামলায় স্থগিতাদেশ দেয়। মামলায় এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি ।
বিরোধী পক্ষের হয়ে সওয়াল করেন আরও এক প্রবীণ আইনজীবী পিএস পাতওয়ালা। তিনি দাবি করেন, রাজ্য সরকার অনগ্রসর শ্রেণি সংক্রান্ত কমিশনের সঙ্গে কথা না বলেই সংরক্ষণ করেছে। সিবাল দাবি করেন, কমিশনের তথ্যও এই সংরক্ষণকে সমর্থন করে। 2012 সালে রাজ্য সরকার সংরক্ষণ সংক্রান্ত একটি আইন করে। সেটির 12 নম্বর ধারায় ওবিসির মধ্যে 77টি জনজাতিকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি স্থান পায়। হাইকোর্ট তা খারিজ করে দেয় । ঠিক কোন যুক্তিতে কলকাতা হাইকোর্ট এমন পদক্ষেপ নিল তা নিয়ে চর্চা হয় শীর্ষ আদালতে ।
বেঞ্চ বলে মণ্ডল কমিশন সংক্রান্ত রায়ের সময় থেকেই স্পষ্ট করে বলা হয়েছিল সংরক্ষণের মধ্যে কাকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার প্রশাসনের, বিচার বিভাগের নয়। কিন্তু কলকাতা হাইকোর্ট যা করেছে সেটা এই ভাবনার পরিপন্থী । দু'পক্ষের সওয়াল শোনার পর সর্বোচ্চ আদালত জানায় 7 জানুয়ারি মামলার শুনানি হবে ।