বারাসত ও কলকাতা, 7 ফেব্রুয়ারি: কল্যাণীর বেআইনি বাজি কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে চারজনের ঝলসে মৃত্যু হয়েছে ৷ সেই ঘটনা নিয়ে বিরোধীরা কাঠগড়ায় তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই ৷ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম থেকে বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ মমতার সমালোচনাতেই সরব হয়েছেন ৷
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের বক্তব্য: শুক্রবার বিকেলে বারাসতের রবীন্দ্রভবনে সিপিএমের উত্তর 24 পরগনা জেলা সম্মেলনের ফাঁকে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সেলিম বলেন, "মুখ্যমন্ত্রীর বদন্যতায় রাজ্যে বেআইনি বাজি কারবার ফুলেফেঁপে উঠেছে । কোনও ঘটনা ঘটলেই প্রথমে তিনি বলে দেন, ওটা সাধারণ বাজি ছিল । বিয়ে বাড়ির জন্য তৈরি হচ্ছিল । নতুবা তিনি বলে দেন, সেরকম কোনও ঘটনাই ঘটেনি । ছোট ঘটনা বলে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে সবসময় তৎপর মুখ্যমন্ত্রী ।"
এরপরই মহম্মদ সেলিম এই বিস্ফোরণের পিছনে স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের যোগ রয়েছে বলে চাঞ্চল্যকর দাবি করেন ৷ সিপিএমের ওই নেতার মতে, "বেআইনি বাজি বিস্ফোরণের পিছনে তৃণমূলের যোগ রয়েছে । বেআইনি বাজি কারবার থেকে তোলাবাজি করেন তৃণমূল নেতারা । তার একটা ভাগ যায় পুলিশের কাছেও । যার ফলে কোনও পদক্ষেপ করা হয় না । মৃত্যু নিয়ে কারবার করছে শাসকদলের নেতারা । যার ফল ভুগতে হচ্ছে রাজ্যের সাধারণ মানুষকে ।"
সেলিমের কথায়, "রাজ্যের যত জায়গায় বাজি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে । সেখানে আজ অবধি কোনও শাস্তির ব্যবস্থা হয়নি । এই বেআইনি কারবার বন্ধ করতেও কোনও উদ্যোগ নেয়নি পুলিশ । কেন পুলিশ কোনও শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারে না ? কেনই বা এই বেআইনি কারবার বন্ধ করা যায় না ? একটা ঘটনা ঘটবে, আর মুখ্যমন্ত্রী বলবেন, এই তো বেআইনি কারবার বন্ধ করে দিলাম । তার পরক্ষণেই অন্য একজনকে বলবেন, তুই বেআইনি বাজি কারবার চালিয়ে যা, কেউ টিকিও ছুঁতে পারবে না । গোটা রাজ্যটাকে মৃত্যুপুরি বানিয়ে ফেলেছেন উনি । কারও কোনও নিরাপত্তা নেই । বোমা আর বাজির মধ্যে গুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে ।"
বিজেপির দিলীপ ঘোষের বক্তব্য: এদিনের বিস্ফোরণ নিয়ে দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘বিস্ফোরণ, বোমা, বন্দুক, আমাদের রাজ্যে নতুন কিছু নয় । এমন কোনও জেলা আছে, যেখানে বিস্ফোরণ হচ্ছে না ! বাজির কারখানা বলে চালানো হচ্ছে । আর এই ধরনের ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ হচ্ছে যে পাঁচ জন সাত জন দশজন মারা যাচ্ছেন । এগরায় যাঁরা মারা গিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে ছয়জন মহিলা ছিলেন ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘গরিব পরিবারগুলো পেটের দায়ে এসে কাজ করছে, তাই তাদের দিয়ে অবৈধ কাজ করানো হচ্ছে । এই ধরনের ভয়ঙ্কর সব বিস্ফোরক বানানো হচ্ছে। বাজিগুলো এখান থেকে ওড়িশা, বিহার, ঝাড়খণ্ড এবং বাংলাদেশে পর্যন্ত পাঠানো হচ্ছে । এই ধরনের অভিযোগ উঠছে ।’’
দিলীপের আরও বক্তব্য, ‘‘পশ্চিমবঙ্গটা কি পুরোটাই বোমার কারখানা হয়ে যাবে ? কারাই এগুলো করছে বা করাচ্ছে ? পুলিশই বা কী করছে ? কিছুদিন সংবাদমাধ্যম দেখাবে ? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটা স্টেটমেন্ট দেবেন, পুলিশকে ধমকে দেবেন, আবার তারপর শুরু হবে এসব । আসলে বারুদের স্তূপের উপর পশ্চিমবঙ্গ বেঁচে আছে ।’’
আরজি কর মামলায় সঞ্জয় রায়ের ফাঁসি চেয়ে রাজ্য সরকারের আবেদন খারিজ নিয়ে কটাক্ষ সেলিমের: মহম্মদ সেলিম বলেন, "কে বলেছিল রাজ্য সরকারকে আপিল করতে ? সরকারের কী কোনও পরামর্শদাতা নেই ? যাঁরা রাজ্য সরকারকে ভালো মন্দের উপদেশ দেবেন । কোটি কোটি টাকা খরচ করে সুপ্রিম কোর্টে ভাড়াটে আইনজীবীদের দাঁড় করানো হচ্ছে !’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘প্রথমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘সঞ্জয় রায়কে ফাঁসি দেওয়া উচিত । তার পর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলে দিলেন ওকে এনকাউন্টার করে মেরে দেওয়া উচিত । শিয়ালদা কোর্ট যখন সঞ্জয়কে যাবজ্জীবন সাজা দিল, তখনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওর ফাঁসির পক্ষে সওয়াল করেছিলেন । এত টাকা খরচ করে আদালতে গিয়ে সরকারের শুধু মুখ পোড়েনি । গোটা রাজ্যের মুখ পুড়েছে । আসলে সরকার সত্য সামনে আনার বদলে একজনকে শিখণ্ডি বানিয়ে গোটা ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে চাইছে ।"