নয়াদিল্লি, 27 মার্চ: কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জম্মু ও কাশ্মীর থেকে সশস্ত্র বাহিনীর (বিশেষ ক্ষমতা) আইন 'আফস্পা' প্রত্যাহার করার ইঙ্গিত দিয়েছেন ৷ জম্মু ও কাশ্মীরের একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তিনি জানান যে, সরকার কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল (ইউটি) থেকে সেনা প্রত্যাহার করার পাশাপাশি জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের উপরেই সেখানকার আইনশৃঙ্খলাল রক্ষার ভার ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে।
তিনি বলেন, "আমাদের সেনা প্রত্যাহার করার পাশাপাশি জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের হাতে আইন-শৃঙ্খলা ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। আগে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের উপর ভরসা করা হত না ৷ কিন্তু বর্তমানে তারা একাধিক অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছে৷" বিতর্কিত AFSPA প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, "আমরা আফস্পা প্রত্যাহার করার কথাও ভাবছি।"
প্রসঙ্গত, 'আফস্পা' আইনটি সেনা-বাহিনিকে, অশান্ত এলাকায় শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনে তল্লাশি, গ্রেফতার এবং গুলি চালানোর অবাধ ক্ষমতা দেয় ৷ সশস্ত্র বাহিনীর অভিযানের সুবিধার্থে একটি এলাকা বা জেলাকে 'আফস্পা'-এর অধীনে বিঘ্নিত হিসাবে ঘোষণা করা হয়।
এর আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, "উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলির 70 শতাংশ এলাকায় 'আফস্পা' সরানো হয়েছে৷ যদিও এই আইন জম্মু ও কাশ্মীরে এখনও কার্যকর রয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীর এবং উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলির বিভিন্ন সংস্থা এবং ব্যক্তিদের কাছ থেকেই 'আফস্পা' প্রত্যাহার করার দাবি উঠেছে। অমিত শাহ জানিয়েছিলেন যে, সেপ্টেম্বরের আগে জম্মু-কাশ্মীরে বিধানসভা নির্বাচন হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, "জম্মু ও কাশ্মীরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতিশ্রুতি এবং এটি পূরণ করা হবে। তবে, এই গণতন্ত্র শুধুমাত্র তিনটি পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না এবং এটি হবে জনগণের গণতন্ত্র।" সেপ্টেম্বরের আগে সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিধানসভা ভোট করার নির্দেশ দিয়েছিল।
এসসি, এসটি এবং ওবিসিদের সংরক্ষণের পাশাপাশি যে বিষয়গুলি উত্থাপিত হয়েছে সে বিষয়ে শাহ বলেছেন, প্রথমবারের মতো, জম্মু-কাশ্মীরে ওবিসিদের মোদী সরকার সংরক্ষণ দিয়েছে এবং মহিলাদের এক-তৃতীয়াংশ সংরক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, "পঞ্চায়েত এবং শহুরে স্থানীয় সংস্থাগুলিতে ওবিসি সংরক্ষণ করা হয়েছে। আমরা এসসি এবং এসটিদের জন্য জায়গা তৈরি করেছি। গুজ্জর এবং বাকরওয়ালদের ভাগ না কমিয়ে, পাহাড়িদের 10 শতাংশ সংরক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং এর জন্য বিশেষ বিধান রয়েছে। পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীর থেকে বাস্তুচ্যুত লোকদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।" তিনি জানান, এই সুবিধাগুলি তৃণমূল স্তরে ছড়িয়ে দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে কেন্দ্র বদ্ধপরিকর৷ অমিত শাহের দাবি, ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি) নেতা ফারুক আবদুল্লাহ এবং পিডিপি প্রধান মেহবুবা মুফতি এই সংরক্ষণগুলির বিরুদ্ধে চাপ তৈরি করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলেন৷ কিন্তু মানুষ এখন তাদের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরেছে।
কেন কংগ্রেস গত 75 বছরে এই সংরক্ষণগুলি করেনি? প্রশ্ন তোলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷ তিনি দাবি করেন, সন্ত্রাসবাদ যখন চরমে তখন ফারুক আবদুল্লাহ ইংল্যান্ডে চলে গিয়েছিলেন। ফারুক আব্দুল্লাহ এবং মেহবুবা উভয়েরই তাই এই বিষয়ে কথা বলার অধিকার নেই। অমিত শাহ বলেন, "তাদের আমলে যে পরিমাণ ভুয়ো এনকাউন্টার হয়েছিল তা অন্য কোনও সরকারের জামানায় হয়নি। গত পাঁচ বছরে একটিও ভুয়ো এনকাউন্টার হয়নি। বরং জাল এনকাউন্টারে জড়িতদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে৷"
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, "আমরা কাশ্মীরের যুবকদের সঙ্গে আলোচনা করব, পাকিস্তানে শিকড় আছে এমন সংগঠনের সঙ্গে নয়। তারা 40,000 যুবকের মৃত্যুর জন্য দায়ী।" তিনি জানান, মোদি সরকার সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে জড়িত থাকার জন্য 12টি সংস্থাকে নিষিদ্ধ করেছে, 36 জনকে জঙ্গি হিসাবে ঘোষণা করেছে, সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে অর্থায়ন বন্ধ করতে 22টিরও বেশি মামলা নথিভুক্ত করেছে এবং 150 কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে। এছাড়াও, 90টির মতো সম্পত্তিও এই তালিকায় সংযুক্ত করা হয়েছে এবং 134টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়েছে৷ তিনি বলেন, "আমরা শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছি এবং শান্তি কেনা যায় না। যারা আলোচনা করতে চায় তাদের সংবিধানের আওতার মধ্যেই তা করতে হবে৷" তিনি জানান, আলোচনা প্রক্রিয়ায় হুররিয়াত কনফারেন্সের কোনও স্থান নেই। তিনি আরও স্পষ্ট করেন যে, বিজেপি এবং সমগ্র সংসদ বিশ্বাস করে যে পিওকে ভারতের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, "মুসলিম ভাইরাও ভারতীয় এবং পিওকেতে বসবাসকারী হিন্দু ভাইরাও ভারতীয় এবং পাকিস্তান যে জমিটি অবৈধভাবে দখল করেছে তাও ভারতের। এটি ফিরে পাওয়া প্রতিটি ভারতীয়, প্রতিটি কাশ্মীরীর লক্ষ্য।" তিনি জানান, 2010 সালে পাথর ছোড়ার 2564টি ঘটনা ঘটেছিল যা এখন শূন্য।
অমিত শাহ জানান, 2004 থেকে 2014 পর্যন্ত, 7217 সন্ত্রাসবাদী ঘটনা ঘটেছে। 2014 থেকে 2023 সাল পর্যন্ত তা 2227-এ নেমে এসেছে৷ অর্থাৎ, সন্ত্রাসবাদী ঘটনা প্রায় 70 শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। তিনি জানান, 2004 থেকে 2014 পর্যন্ত মোট মৃত্যুর সংখ্যা ছিল 2829 যা 2014-2023 সালের মধ্যে 915-এ নেমে এসেছে৷ অর্থাৎ, এই সংখ্যাও 68 শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। সাধারণ মানুষের মৃত্যু ছিল 1770 যা এখন কমে 341 হয়েছে৷ অর্থাৎ, মৃত্যু 81 শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। তিনি জানান, নিরাপত্তা বাহিনীর মৃত্যু 1060 থেকে কমে 574 হয়েছে, যা 46 শতাংশ কমেছে। বিজেপি শীর্ষনেতা জানান, জনগণের সমর্থন ছাড়া এমন ব্যাপক পরিবর্তন কখনওই ঘটতে পারে না।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, "যারা ইসলামের কথা বলে তাদের জানা উচিত যে নিহতদের 85 শতাংশই আমাদের মুসলিম ভাই ও বোন।" তিনি জম্মু-কাশ্মীরের যুবকদের পাকিস্তানের ষড়যন্ত্র থেকে দূরে থাকতে বলেছেন। তিনি বলেন, "আজ পাকিস্তান ক্ষুধা ও দারিদ্রের কবলে পড়েছে৷ সেখানকার মানুষও কাশ্মীরকে স্বর্গ হিসেবে দেখে। আমি সবাইকে বলতে চাই যে কাশ্মীরকে যদি কেউ বাঁচাতে পারেন, তিনি হলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি৷"
আরও পড়ুন:
- জম্মু-কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্টকে নিষিদ্ধ ঘোষণা কেন্দ্রের, সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে আপোস নয়, কড়া বার্তা শাহের
- 'পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের হিন্দু-মুসলিমরা ভারতীয়', সিএএ চালুর পর মন্তব্য শাহের
- 'সিএএ নিয়ে কংগ্রেসের অবস্থান জনসমক্ষে স্পষ্ট করুন', রাহুলকে খোঁচা শাহের