থানে, 19 জানুয়ারি:অভিনেতা সইফ আলি খানের উপর হামলার ঘটনায় মহম্মদ শরিফুল ইসলাম শেহজাদ নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে মুম্বই পুলিশ ৷ সে বাংলাদেশি বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা ৷ যদিও অভিযুক্তের আইনজীবী দাবি করেছেন, পুলিশের কাছে এমন কোনও নথি নেই, যাতে প্রমাণিত হয় সে বাংলাদেশের বাসিন্দা ৷ রবিবার ভোররাতে গ্রেফতারের পর তাকে মুম্বইয়ের বান্দ্রা হলিডে কোর্টে পেশ করা হয় ৷ আদালত তাকে 5 দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে ৷
মুম্বই পুুলিশের জোন 9-এর ডিসিপি দীক্ষিত গেদাম বলেন, "16 অক্টোবর রাত 2টোর সময় সইফ আলি খানের বাড়িতে ঢুকে তাঁর উপর হামলা করা হয় ৷ এই ঘটনায় এফআইআর দায়ের করা হয় এবং এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ ধৃতের নাম মহম্মদ শরিফুল ইসলাম শেহজাদ ৷ বয়স 30 বছর ৷ সে ডাকাতির উদ্দেশে অভিনেতার বাড়িতে ঢুকেছিল ৷"
শরিফুলের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রসঙ্গে পুলিশ আধিকারিক বলেন, "প্রাথমিকভাবে আমরা যে প্রমাণ পেয়েছি, তাতে মনে হচ্ছে সে বাংলাদেশের নাগরিক ৷ তার কাছে ভারতে থাকার কোনও বৈধ নথিপত্র নেই ৷ আমরা কিছু নথি তার কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত করেছি । তা থেকে মনে করা হচ্ছে সে বাংলাদেশি ৷ এখনও পর্যন্ত তদন্তে আমরা যা বুঝতে পেরেছি তা থেকে এটুকু মনে হচ্ছে ওই ব্যক্তি এই প্রথম সইফ আলি খানের বাড়িতে প্রবেশ করেছিল ৷" তিনি আরও জানান, 5-6 মাস আগে অভিযুক্ত শরিফুল বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে ভারতে ঢোকে এবং নিজের নাম বদল করে ৷ শরিফুল প্রথম দিকে নিজেকে বিজয় দাস বলে পরিচয় দিত ৷ সে একটি হাউজকিপিং এজেন্সিতে কাজ করছিল ৷
এদিকে মুম্বই পুলিশের বাংলাদেশি তত্ত্ব খারিজ করে অভিযুক্ত মহম্মদ শরিফুল ইসলাম শেহজাদের আইনজীবী দীনেশ প্রজাপতি বলেন, "পুলিশ যে প্রমাণের ভিত্তিতে তার (অভিযুক্ত মহম্মদ শরিফুল ইসলাম শেহজাদ) হেফাজত চেয়েছে, তা যথেষ্ট নয় ৷ সে যে বাংলাদেশি নাগরিক, তার সমর্থনে পুলিশ কোনও তথ্য প্রমাণ পেশ করতে পারেনি ৷ আদালত তাকে 5 দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে ৷"
অভিযুক্তের তরফে আরেক আইনজীবী সন্দীপ শেখানে বলেন, "প্রথমত, সইফ আলি খান কখনও এমন কোনও বিবৃতি দেননি, যাতে বাংলাদেশ বা বিশ্বের অন্য কোনও দেশ তাঁর জীবনের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে ৷ তাঁর কোনও আন্তর্জাতিক মামলা নেই ৷ পুলিশ বিষয়টিকে ঘুরিয়ে দিয়েছে ৷ সে আগে বাংলাদেশে থাকত ৷ কিন্তু এখন থাকে না ৷ পুলিশ বলছে গত 6 মাস ধরে সে মুম্বইয়ে রয়েছে ৷ এটা মিথ্যা ৷ তার পরিবার 7 বছর ধরে মুম্বইয়ে রয়েছে ৷ এই ঘটনায় ঠিকঠাক তদন্ত হচ্ছে না ৷" তিনিও জোর দিয়ে জানান, পুলিশের কাছে এমন কোনও প্রমাণ নেই যে অভিযুক্ত শরিফুল বাংলাদেশের নাগরিক ৷
এদিকে, পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত অভিনেতা সইফ আলি খানের উপর হামলার ঘটনায় শনিবার দুপুরে ছত্তিশগুড়ের দুর্গ স্টেশন থেকে এক সন্দেহভাজনকে আটক করে রেল পুলিশ ৷ মুম্বই পুলিশের দেওয়া ছবি এবং গোপন সূত্রে খবর পেয়ে আরপিএফ মুম্বই-হাওড়া জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসে তল্লাশি চালায় ৷ সন্দেহভাজন ব্যক্তি ওই ট্রেনের জেনারেল বগিতে যাত্রা করছিলেন ৷ দুর্গে ট্রেনটি আসার পর বেলা 2টো নাগাদ তাকে হাতেনাতে ধরে রেল পুলিশ ৷ পরে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয় ৷
এই ঘটনা প্রসঙ্গে সাব-ইনস্পেক্টর প্রদীপ ফুডে দুর্গ রেল স্টেশন থেকেই সাংবাদিকদের বলেন, "শনিবার দুপুরে মুম্বই এলটিটি-কলকাতা শালিমার জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস থেকে এক ব্যক্তিকে আটক করা হয় ৷ জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ৷ তাঁকে সারারাত দুর্গ স্টেশনে আরপিএফ পোস্টে রাখা হয়েছিল ৷ রবিবার সকালে ছেড়ে দেওয়া হয় ৷"
অন্যদিকে, গত 16 জানুয়ারি, গভীর রাতে মুম্বইয়ের অভিজাত বান্দ্রা এলাকায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতার অ্যাপার্টমেন্টে এক দুষ্কৃতী ঢুকে পড়ে ৷ পরিবার ও বাড়ির অন্যদের বাঁচাতে সিনেমার হিরোর মতোই দুষ্কৃতীর সঙ্গে লড়াই করেন সইফ ৷ তাকে ছ'বার কুপিয়েছে দুষ্কৃতী ৷ এরপর রক্তাক্ত অবস্থায় গুরুতর জখম অভিনেতাকে লীলাবতী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ তিনি এখন সেখানেই চিকিৎসাধীন এবং বিপন্মুক্ত ৷ তাঁর বেশ কয়েকটি অস্ত্রোপচার হয়েছে ৷ হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁর শারীরিক অবস্থা আগের থেকে স্থিতিশীল ৷