ETV Bharat / state

নজর ছিল লেডি গভর্নরের ! 24 বছর মাটি চাপা জার্মান অ্যাডলার চড়েছিলেন শিবরামও - VINTAGE GERMAN ADLER

উচ্চমাধ্যমিক পাশের পর গাড়ির চাবি পেয়েছিলেন গদাইচন্দ্র দে ৷ বরানগরের বাগান বাড়ি থেকে মাটি খুঁড়ে বের করেছিলেন জার্মান অ্যাডলারটি ৷

VINTAGE GERMAN ADLER
প্রাক্তন পুলিশকর্তা গদাইচন্দ্র দে’র জার্মান অ্যাডলার ৷ (নিজস্ব ছবি)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jan 19, 2025, 9:03 PM IST

কলকাতা,10 জানুয়ারি: সালটা 1965 ৷ কোদাল-বেলচা নিয়ে মাটি খুঁড়তেই বেরিয়ে এল আস্ত গাড়ি ৷ একনজরে দেখে মাটির ঢেলা ছাড়া আর কিছুই মনে হয়নি । তবে মাটির আস্তরণ সরাতেই বেরিয়ে আসে ব্রিটিশ আমলের জার্মান অ্যাডলার ৷ লাল রঙের সেই গাড়ি এখন প্রাক্তন পুলিশকর্তা গদাইচন্দ্র দে’র গ্যারাজে ৷ গত 12 এবং 19 জানুয়ারি কলকাতায় আয়োজিত ভিন্টেজ কার ব়্যালিতে অংশ নিয়েছে জার্মান অ্যাডলারটি ৷

উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর বাবার থেকে এই গাড়িটি উপহার পেয়েছিলেন গদাইচন্দ্র দে ৷ বাবা কিনেছিলেন তারও তিরি দশক আগে 1938 সালে ৷ জার্মানি থেকে ইম্পোর্ট করিয়েছিলেন ৷ এই গাড়ির নানা কাহিনী ইটিভি ভারতের সঙ্গে ভাগ করে নিলেন কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার গদাইচন্দ্র দে ৷

প্রাক্তন পুলিশ কর্তার সংগ্রহে আছে এই জার্মান অ্যাডলার (ইটিভি ভারত)

বছর ষোলো আগে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার হিসেবে অবসর নিয়েছেন ৷ এখন 76 বছরের বৃদ্ধের দিন কাটে ভিন্টেজ গাড়ি নিয়েই ৷ আর নিজে চড়েন ছোট্ট একটি গাড়ি ৷ কিন্তু, অমন একখানা আস্ত গাড়ি মাটির তলায় গেল কীভাবে ?

তিনি বলেন, "উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর বাবার হাত থেকে উপহার পেয়েছিলাম একটা চাবি ৷ তারপরের গল্পটা অনেকটা রোমহর্ষক। গুপ্তধনের সন্ধানের মতো ৷ সেই চাবি নিয়ে বরানগরের বাগান বাড়িতে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বাবা ৷ সেখানে অপেক্ষা করছিলেন মালি ঘনশ্যাম ৷ মালির নির্দেশ, 'চাঁপা ফুলের গাছের পাশে দেখো, একটা গাড়ি আছে ৷' কিন্তু, কোথায় কী ! এ-তো পুরো মাঠ ! তারপর মালির সহযোগিতায় কোদাল-বেলচা নিয়ে মাটি খুঁড়তেই বেরিয়ে আসে সেই জার্মান অ্যাডলার ৷"

VINTAGE GERMAN ADLER
ব্রিটিশ বাংলার গভর্নরের হাত থেকে বাঁচাতে জার্মান অ্যাডলারটি মাটি চাপা দেওয়া হয়েছিল ৷ (নিজস্ব ছবি)

প্রথমে গাড়িটি তুলে গদাইচন্দ্র দে ভেবেছিলেন, "এ-তো মাটির ড্যালা ছাড়া আর কিছুই নয় ৷ মালির কথায় জল দিয়ে মাটি ধুয়ে ফেলি ৷ দেখি ইঞ্জিনে কিছু হয়নি ৷ উপরে একটা ঢাকা আছে ৷ তখন সাদা রং ছিল ৷ বাবার নির্দেশে সেই গাড়ি নিয়ে আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার উল্টো দিকের গ্যারাজে যাই ৷ দু’দিনের মেরামতির পর সোজা বালিগঞ্জের বাড়িতে ৷" তারপর থেকে লাল রঙের জার্মান অ্যাডলার গদাইয়ের গ্যারাজ আলো করে রয়েছে ৷ সঙ্গে প্রচুর ইতিহাস ৷

সেই ইতিহাস নিয়ে গদাইচন্দ্র জানালেন, এই গাড়িতেই নজর পড়েছিল নজর পড়েছিল ব্রিটিশ আমলের লেডি গভর্নরের ৷ কলেজ স্ট্রিটে বইয়ের দোকান গদাইবাবুদের। তাঁর বাবা প্রয়াত হরিমোহন দে 1938 সালে এই গাড়িটা কিনেছিলেন ৷ জার্মানি থেকে গাড়িটা আনিয়েছিলেন ৷

VINTAGE GERMAN ADLER
জার্মান অ্যাডলারের সঙ্গে প্রাক্তন পুলিশকর্তা গদাইচন্দ্র দে ৷ (নিজস্ব ছবি)

গদাইচন্দ্র দে বলেন, "1941-42 সালে তৎকালীন গভর্নর, তাঁর স্ত্রী-র অনুরোধে এই গাড়িটা নিয়ে নিতে চেয়েছিলেন ৷ পুলিশকে নির্দেশও দেন ৷ কিন্তু, গাড়ি বাজেয়াপ্ত হবে, সেই খবর আগেই আমার বাবা পেয়ে যান ৷ দেরি না-করে গাড়িটা নিয়ে বরানগরের বাগানবাড়িতে মাটি চাপা দিয়ে দেন ৷ তারপর 1965 সালে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর গাড়িটি উপহারে আমি পাই ৷ এখন পার্টস পাওয়া খুবই কঠিন ৷ নিজেরাই তৈরি করিয়ে নিই ৷"

এই গাড়ি চড়ে ছিলেন সাহিত্যিক শিবরাম চক্রবর্তীও ৷ তাঁর লেখা বিখ্যাত 'গদাইয়ের গাড়ি' এই লাল জার্মান অ্যাডলারকে নিয়েই ৷ আর সেই গদাই হলেন স্বয়ং কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের প্রাক্তন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার গদাইচন্দ্র দে ৷ তাঁর কাছে আরও তিনটি ভিন্টেজ গাড়ি রয়েছে ৷ যার মধ্যে অন্যতম হল, সাদা রঙের স্ট্যান্ডার্ড লিটল নাইন ৷ চোর ধরতে গিয়ে গাড়িটি পেয়েছিলেন ৷ অব্যবহারে ধুলো পড়ে গিয়েছিল ৷ গাড়ির মালকিনের থেকে গাড়িটি কিনে এনেছিলেন ৷ এছাড়াও মরিস এইচ ও অস্টিনের মতো গাড়িও রয়েছে তাঁর গ্যারাজে ৷ সেগুলিকে নিয়েই দিন কাটে গদাইচন্দ্র দে-র ৷

কলকাতা,10 জানুয়ারি: সালটা 1965 ৷ কোদাল-বেলচা নিয়ে মাটি খুঁড়তেই বেরিয়ে এল আস্ত গাড়ি ৷ একনজরে দেখে মাটির ঢেলা ছাড়া আর কিছুই মনে হয়নি । তবে মাটির আস্তরণ সরাতেই বেরিয়ে আসে ব্রিটিশ আমলের জার্মান অ্যাডলার ৷ লাল রঙের সেই গাড়ি এখন প্রাক্তন পুলিশকর্তা গদাইচন্দ্র দে’র গ্যারাজে ৷ গত 12 এবং 19 জানুয়ারি কলকাতায় আয়োজিত ভিন্টেজ কার ব়্যালিতে অংশ নিয়েছে জার্মান অ্যাডলারটি ৷

উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর বাবার থেকে এই গাড়িটি উপহার পেয়েছিলেন গদাইচন্দ্র দে ৷ বাবা কিনেছিলেন তারও তিরি দশক আগে 1938 সালে ৷ জার্মানি থেকে ইম্পোর্ট করিয়েছিলেন ৷ এই গাড়ির নানা কাহিনী ইটিভি ভারতের সঙ্গে ভাগ করে নিলেন কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার গদাইচন্দ্র দে ৷

প্রাক্তন পুলিশ কর্তার সংগ্রহে আছে এই জার্মান অ্যাডলার (ইটিভি ভারত)

বছর ষোলো আগে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার হিসেবে অবসর নিয়েছেন ৷ এখন 76 বছরের বৃদ্ধের দিন কাটে ভিন্টেজ গাড়ি নিয়েই ৷ আর নিজে চড়েন ছোট্ট একটি গাড়ি ৷ কিন্তু, অমন একখানা আস্ত গাড়ি মাটির তলায় গেল কীভাবে ?

তিনি বলেন, "উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর বাবার হাত থেকে উপহার পেয়েছিলাম একটা চাবি ৷ তারপরের গল্পটা অনেকটা রোমহর্ষক। গুপ্তধনের সন্ধানের মতো ৷ সেই চাবি নিয়ে বরানগরের বাগান বাড়িতে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বাবা ৷ সেখানে অপেক্ষা করছিলেন মালি ঘনশ্যাম ৷ মালির নির্দেশ, 'চাঁপা ফুলের গাছের পাশে দেখো, একটা গাড়ি আছে ৷' কিন্তু, কোথায় কী ! এ-তো পুরো মাঠ ! তারপর মালির সহযোগিতায় কোদাল-বেলচা নিয়ে মাটি খুঁড়তেই বেরিয়ে আসে সেই জার্মান অ্যাডলার ৷"

VINTAGE GERMAN ADLER
ব্রিটিশ বাংলার গভর্নরের হাত থেকে বাঁচাতে জার্মান অ্যাডলারটি মাটি চাপা দেওয়া হয়েছিল ৷ (নিজস্ব ছবি)

প্রথমে গাড়িটি তুলে গদাইচন্দ্র দে ভেবেছিলেন, "এ-তো মাটির ড্যালা ছাড়া আর কিছুই নয় ৷ মালির কথায় জল দিয়ে মাটি ধুয়ে ফেলি ৷ দেখি ইঞ্জিনে কিছু হয়নি ৷ উপরে একটা ঢাকা আছে ৷ তখন সাদা রং ছিল ৷ বাবার নির্দেশে সেই গাড়ি নিয়ে আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার উল্টো দিকের গ্যারাজে যাই ৷ দু’দিনের মেরামতির পর সোজা বালিগঞ্জের বাড়িতে ৷" তারপর থেকে লাল রঙের জার্মান অ্যাডলার গদাইয়ের গ্যারাজ আলো করে রয়েছে ৷ সঙ্গে প্রচুর ইতিহাস ৷

সেই ইতিহাস নিয়ে গদাইচন্দ্র জানালেন, এই গাড়িতেই নজর পড়েছিল নজর পড়েছিল ব্রিটিশ আমলের লেডি গভর্নরের ৷ কলেজ স্ট্রিটে বইয়ের দোকান গদাইবাবুদের। তাঁর বাবা প্রয়াত হরিমোহন দে 1938 সালে এই গাড়িটা কিনেছিলেন ৷ জার্মানি থেকে গাড়িটা আনিয়েছিলেন ৷

VINTAGE GERMAN ADLER
জার্মান অ্যাডলারের সঙ্গে প্রাক্তন পুলিশকর্তা গদাইচন্দ্র দে ৷ (নিজস্ব ছবি)

গদাইচন্দ্র দে বলেন, "1941-42 সালে তৎকালীন গভর্নর, তাঁর স্ত্রী-র অনুরোধে এই গাড়িটা নিয়ে নিতে চেয়েছিলেন ৷ পুলিশকে নির্দেশও দেন ৷ কিন্তু, গাড়ি বাজেয়াপ্ত হবে, সেই খবর আগেই আমার বাবা পেয়ে যান ৷ দেরি না-করে গাড়িটা নিয়ে বরানগরের বাগানবাড়িতে মাটি চাপা দিয়ে দেন ৷ তারপর 1965 সালে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর গাড়িটি উপহারে আমি পাই ৷ এখন পার্টস পাওয়া খুবই কঠিন ৷ নিজেরাই তৈরি করিয়ে নিই ৷"

এই গাড়ি চড়ে ছিলেন সাহিত্যিক শিবরাম চক্রবর্তীও ৷ তাঁর লেখা বিখ্যাত 'গদাইয়ের গাড়ি' এই লাল জার্মান অ্যাডলারকে নিয়েই ৷ আর সেই গদাই হলেন স্বয়ং কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের প্রাক্তন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার গদাইচন্দ্র দে ৷ তাঁর কাছে আরও তিনটি ভিন্টেজ গাড়ি রয়েছে ৷ যার মধ্যে অন্যতম হল, সাদা রঙের স্ট্যান্ডার্ড লিটল নাইন ৷ চোর ধরতে গিয়ে গাড়িটি পেয়েছিলেন ৷ অব্যবহারে ধুলো পড়ে গিয়েছিল ৷ গাড়ির মালকিনের থেকে গাড়িটি কিনে এনেছিলেন ৷ এছাড়াও মরিস এইচ ও অস্টিনের মতো গাড়িও রয়েছে তাঁর গ্যারাজে ৷ সেগুলিকে নিয়েই দিন কাটে গদাইচন্দ্র দে-র ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.