আসানসোল, 20 নভেম্বর: এক কালে যাঁদের কথায় এলাকার লোকজন উঠত বসত সেই জমিদারদের বর্তমান অবস্থা জানলে অবাক হবেন ৷ ভাগ্যের পরিহাসে আজ তারা সর্বশান্ত ৷ এখন আবাস যোজনার বাড়ি ও সরকারি সুযোগ-সুবিধার দিকে তাকিয়ে জমিদার রায়'রা ৷
প্রায় 400 বছর আগে আসানসোলের সালানপুরের জমিদার ছিল রায় পরিবার । কালের গ্রাসে সেই জমিদারি আর নেই । বর্তমান প্রজন্মের মনোরঞ্জন রায় স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে দিনমজুরি করে কোনওমতে সংসার চালান । সুবিশাল অট্টালিকা ছিল একসময় । আজ সেই ধ্বংসপ্রাপ্ত অট্টালিকাই যেন রায় পরিবারের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে । বিপজ্জনক সেই বাড়িটিতে আর থাকা যায় না । অথচ বাড়ি করার টাকাও নেই । তাই অগত্যা থাকতে হচ্ছে ত্রিপল খাটিয়ে ।
সরকারি আবাস যোজনায় নাম নথিভুক্ত হচ্ছে না মনোরঞ্জনবাবুর । কারণ পারিবারিক সূত্রে তাঁর নাকি বিরাট অট্টালিকা রয়েছে । পরিবারটির দুর্দশার কথা জেনে বারাবনির বিধায়ক বিধান উপাধ্যায় তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন । চেষ্টা করছেন যাতে কোনওভাবে যদি মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই করে দিতে পারেন ।
সালানপুর ব্লকের কল্যা গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত কল্যা সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সামনে আজও দাঁড়িয়ে রায়দের জমিদারির নিদর্শন । প্রাচীন ভগ্নপ্রায় অট্টালিকা । জানা যায়, একসময় এই রায় পরিবারের জমিতেই এলাকায় হাসপাতাল, স্কুল, মন্দির গড়ে উঠেছে । বর্তমানে সেই পরিবারের লোকেরাই রয়েছেন ত্রিপল খাটিয়ে ।
সুবিশাল দালান ঘর থাকলেও তা আর বাসযোগ্য নয় । অট্টালিকা যে বিপজ্জনক তা আগেই ঘোষণা করা হয়েছে । অথচ এই দালান বাড়ির কারণেই মনোরঞ্জনবাবুর নাম আবাস যোজনায় নথিভুক্ত হচ্ছে না । সরকারি নিয়মে কারও নামে পাকা বাড়ি থাকলে তিনি আবাস যোজনায় বাড়ি পান না । তাই বারবার আবেদন করলেও মনোরঞ্জনবাবুর নাম বাতিল হয়ে যাচ্ছে । পেশায় দিনমজুর মনোরঞ্জন রায় পড়েছেন সরকারি নিয়মের গেরোয় । স্ত্রী ভাগ্যবতী রায় ও সন্তানদের নিয়ে প্লাস্টিকের ত্রিপল দিয়ে ছাউনি করা ঘরে দিন গুজরান করছেন ।
স্থানীয় মানুষজন থেকে শুরু ক'রে পঞ্চায়েত প্রধান সবাই জানে তাদের দুর্দশার কথা । কিন্তু সরকারি আইনের গেরোয় সব আটকে গিয়েছে ।
অন্যদিকে, পরিবারের দুর্দশার কথা জেনে তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বারাবনির বিধায়ক তথা আসানসোলের মেয়র বিধান উপাধ্যায় । তাঁর কথায়, "আমি ঘটনার কথা জানতে পেরেই স্থানীয় তৃণমূল নেতা ভোলা সিংকে পরিদর্শন করতে পাঠিয়েছিলাম । খুব দ্রুত ওই পরিবারটির জন্য একটি বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার আমরা চেষ্টা করছি । অন্তত অ্যাসবেস্টসের ছাদ দিয়েও যদি একটা বাড়ি করে দেওয়া যায় তাহলেও পরিবারটি আশ্রয় পাবে ।"