জলপাইগুড়ি, 25 ডিসেম্বর: পেশায় একজন গাড়িচালক ছিলেন সাগরচন্দ্র সরকার ৷ বর্তমানে তিস্তা নদীর চরে কয়েক বিঘা জমিতে তাঁর গাঁদাফুলের বাগান ৷ সেই গাঁদাফুল চাষকে কেন্দ্র করে স্বনির্ভর হয়ে উঠছেন স্থানীয় মহিলারা ৷ যাঁরা কয়েকবছর আগেও বাড়ির কাজ শেষে দুপুরের পর আড্ডা দিয়ে সময় কাটাতেন ৷ তাঁরাই বর্তমানে সাগরের বাগানের ফুল বিক্রি করে স্বনির্ভর হচ্ছেন ৷
এতদিন দক্ষিণবঙ্গ থেকে উত্তরবঙ্গে আসত গাঁদাফুল ৷ নদিয়ার রানাঘাট ও বেলডাঙা থেকে জোগান দেওয়া হতো উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় ৷ কিন্তু, গত কয়েকবছরে উত্তরবঙ্গে গাঁদাফুলের চাহিদা মেটাচ্ছেন সাগরচন্দ্র সরকার ৷ জলপাইগুড়ি তিস্তা নদীর চরে ফুলচাষ করছেন তিনি ৷ তাঁর জমিতে ফোটা গাঁদাফুল জলপাইগুড়ি তো বটেই, আশেপাশের বেশ কয়েকটি জেলায় রফতানি হয় ৷ আর তা তিনি করেন নিজের পাইকারি দোকান থেকে ৷
জলপাইগুড়ি সেন পাড়ার বাসিন্দা সাগরচন্দ্র সরকার কয়েক বছর ধরে তিস্তার চরে কয়েক বিঘা জমিতে গাঁদাফুলের চাষ করছেন ৷ আগে নিজে দোকানে-দোকানে ফুলের সাপ্লাই দিতেন ৷ কিন্তু, এখন নিজে গাঁদাফুল চাষ করেন এবং নিজেই ফুল সাপ্লাই দেন ৷ আর এই ফুলচাষের অনুপ্রেরণা তিনি অবশ্য পেয়েছিলেন, দক্ষিণবঙ্গ থেকে ফুল নিয়ে আসার জন্য গিয়ে ৷
সাগরচন্দ্র সরকার বলেন, "আমি দক্ষিণবঙ্গে ভাড়া নিয়ে যাবার পর, সেখানে ফুল চাষ দেখে আগ্রহ প্রকাশ করি ৷ নিজেদের জমিতেই 3-4 বছর থেকে ফুলচাষ শুরু করি ৷ এখন ভালোই ফুল হচ্ছে ৷ শুধু একটু সময় বেশি দিতে হয় ৷ পরিচর্যা একটু বেশি করতে হয় ৷ বাকি শাক-সবজি চাষের মতোই ৷ আর এই কাজে আমাকে সাহায্য করেন স্থানীয় মা-বোনরা ৷ তাঁদের প্রশিক্ষণ দিয়ে নিতে হয়েছে ৷"
তিনি বলেন, "স্থানীয় সুকান্তনগর, সেনপাড়ার মহিলারা আমার বাগানের ফুল তুলে বাজারে বিক্রি করছেন ৷ আর আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হচ্ছেন ৷ আগে এখানকার মহিলারা দুপুরে টিভি দেখে আড্ডা দিয়ে সময় কাটাতেন ৷ এখন তাঁরা বাগানে ফুল তুলছেন, মালা গাঁথছেন ৷ মাস গেলে 4-5 হাজার টাকা রোজগার করছেন ৷ আরও ফুলচাষি গাঁদাফুলের চাষ করলে, স্থানীয় অনেকে মহিলা স্বনির্ভর হয়ে উঠতে পারবেন ৷"
- চিনতে পারবেন মুখ, পড়তে পারবেন রাস্তার সাইনবোর্ড ; দৃষ্টিহীনদের এআই স্মার্ট গ্লাস দিল কিমস ফাউন্ডেশন
সুকান্তনগরের বাসিন্দা সবিতা মজুমদার বলেন, "আমি প্রথম ফুল তোলার কাজ শুরু করি ৷ আমাকে দেখে অন্যান্য মহিলারাও আসেন ফুল তোলার কাজ করতে ৷ আমরা ফুল তুলে মাসে 4 হাজার থেকে 5 হাজার টাকা রোজগার করছি ৷ দুপুর বেলায় বাড়িতে বসে টিভি দেখে আড্ডা মারার থেকে ফুল তুলে রোজগার করছি ৷ এতে আমার পরিবারে সাহায্য করতে পারছি ৷ ছেলেমেয়েদের জন্য কিছু কেনাকাটাও করতে পারছি ৷ আমরা চাই এমন আরও বড় বড় ফুলের বাগান হোক ৷ আমাদের মতো মহিলারা আসুক, তাঁরাও রোজগার করুক ৷"
যোগমায়া শিকদার বলেন, "আগে আমি ফুল তুলতাম না ৷ অন্য মহিলাদের দেখে কাজে আসি ৷ একই পাড়ার আমরা সবাই ৷ ওঁদের কাছ থেকে শুনেই আমি আসি ৷ যিনি ফুল চাষ করছেন, তিনিও আমাদের ডাকেন ৷ আমরা তো আড্ডা দিয়ে দুপুরে সময় কাটাতাম, এখন কাজ করছি ৷ দু-পয়সা আসছেও ৷"
স্থানীয় বাসিন্দা জয়ন্তী পাইন বলেন, "আগে কোনও কাজই করতাম না ৷ এখন ফুল তুলে রোজগার করছি ৷ হাতে কিছু পয়সা আসছে ৷ ফলে পরিবারেরও সাহায্য হচ্ছে ৷ হাত খরচও উঠে আসছে ৷ বাচ্চাদের চাহিদা মেটাতে পারছি ৷"