কলকাতা, 25 ডিসেম্বর: বড়দিনের ছুটিতে আলিপুর জেল মিউজিয়ামে চোখে পড়ার মতো ভিড় ৷ বাবা-মায়ের হাতে ধরে হাজির খুদেরা ৷ তাদের চোখে একরাশ কৌতূহল ও নতুন কিছু জানার আগ্রহ ৷ ঘুরে দেখল ইটিভি ভারত ৷
আলিপুর জেলের বয়স প্রায় 160 বছরের বেশি । 2022 সালে হিডকো এই জেল সংরক্ষণ করে তার ইতিহাস সাধারণের কাছে তুলে ধরতে মিউজিয়াম তৈরি করে । কলকাতার বুকে চিড়িয়াখানা, বিড়লা তারামণ্ডল, জাদুঘরের মতো সাধারণ মানুষের ছুটি কাটানোর অন্যতম গন্তব্য হয়ে ওঠে এই জেল মিউজিয়াম ।
9 থেকে 90 সব বয়সের মানুষের আনাগোনা আলিপুর জেল মিউজিয়াম । এই মিউজিয়াম হওয়ার পর মানুষের খানিক স্বাদ বদলেছে । বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জেল জীবনের নানা অজানা কথা জানার কৌতূহল নিয়ে হাজির হচ্ছেন অনেকেই । কিভাবে স্বাধীনতা সংগ্রামীরা কুঠুরিতে দিন কাটাতেন । তাঁদের খাবার, পোশাক, জেলবন্দি সময় কাজকর্ম, জেলে ইংরেজ পুলিশের অত্যাচার, ফাঁসির কাঠ দেখতে আগ্রহী দর্শনার্থীরা ৷
শুধু বইয়ের পাতায় এতদিন তারা এসব পড়ছিল ৷ তবে আলিপুর জেল মিউজিয়ামে এসে মানুষজন সরেজমিনে চাক্ষুষ করতে পারেন সেসবগুলি । সেই টানেই বহু মানুষ এ দিন হাজির হন মিউজিয়ামে । পাশাপশি অনেকেই তাদের আগামী প্রজন্মকে স্বাধীনতা সংগ্রামী ও তাঁদের জেল জীবনের নানা ঘটনা জানাতে ও চাক্ষুষ করাতে এই মিউজিয়াম নিয়ে আসেন । এই সংখ্যা বেশ ভালোই ।
হিডকোর এক আধিকারিক বলেন, "এই জায়গায় সারা বছর মানুষের ভিড় লেগে থাকে । বেড়ানোর সঙ্গে জানার রসদ এখানে ভরপুর । ছুটির দিন বা শীতের মরশুমে এখানে কয়েকগুণ বেশি লোকের ভিড় হচ্ছে । সকাল থেকেই কাতারে কাতারে লোক আসেন আজ । দুপুরের পরে ভিড় আরও বাড়ে ।"
মিউজিয়াম আসা দর্শনার্থীদের কথায়, এতদিন বইয়ের পাতায় স্বাধীনতা সংগ্রামী ও ফাঁসি সম্পর্কে পড়েছেন তাঁরা । এখন নিজের চোখে দেখছেন । আলাদা অনুভূতি হচ্ছে তাঁদের । অনেকের কথায়, যা পড়েছেন তার বাইরে এখানে অনেক অজানা ইতিহাস খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে । আগামী প্রজন্মকে সেই সমস্ত ঘটনা স্মৃতিকথা শুধু শোনানো নয়, চাক্ষুষ দেখিয়ে মনে গেঁথে ফেলার একটি সুন্দর জায়গা আলিপুর জেল মিউজিয়াম ।
হরিদেবপুরের বাসিন্দা শিপ্রা মজুমদার বলেন, "অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল আলিপুর জেল মিউজিয়াম আসার । আমি, আমার স্বামী ও ছেলে এসেছি । একটু ইমোশনাল হয়ে পড়েছি ৷ খুব ভালো লাগছে ।" কসবার বাসিন্দা ঋতুর কথায়, "প্রতি বছর ঘুরতে আসি বড়দিনে । এবার আলিপুর জেল মিউজিয়ামে আসিনি ৷ জেল কখনও দেখা হয়নি । আজ বড়দিনে ছুটি আছে, তাই আলিপুর জেল মিউজিয়ামে এসেছি ।"
আরও এক দর্শনার্থী বলেন, "স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ইতিহাস আমার মেয়ের জানা উচিত । তাই মেয়েকে এখানে নিয়ে এসেছি ৷ আজকালকার বাচ্চারা তো খুবই যান্ত্রিক । আমি চাই ও আমাদের মতো সব জেনে বড় হোক ৷ পুঁথিগত নয়, সব চাক্ষুষ দেখে শিখুক মেয়ে ৷" আলিপুর জেল মিউজিয়ামে এসে উচ্ছ্বসিত খুদে নয়নিকা ৷ সে বলে, "আমার এখানে এসে ভালো লাগছে ৷ আমি ফাঁসির দড়ি দেখলাম ৷ ফাঁসি কীভাবে হয় জেনেছি ৷ জেলও দেখেছি ৷"