কলকাতা, 26 অগস্ট: আগামিকাল, মঙ্গলবার নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছে পড়ুয়ারা ৷ সেই অভিযানের নেপথ্যে রাজনৈতিক ইন্ধন রয়েছে বলে মনে করছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ ৷ সেই কারণেই রাজ্য পুলিশের শীর্ষকর্তারা মনে করছেন যে মঙ্গলবার নবান্ন অভিযানের নামে শহর জুড়ে তাণ্ডব চলতে পারে ।
সোমবার এই নিয়ে রাজ্যের প্রধান প্রশাসনিক ভবন নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করেন পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার ও এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) মনোজ ভার্মা ৷ সেখানেই তাঁরা এই আশঙ্কা প্রকাশ করেন ৷ পাশাপাশি এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার জানান, সংগঠকদের মধ্যে একজন নাকি শহরের একটি পাঁচতারা হোটেলে এক রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন ৷
অন্যদিকে সংগঠকদের মধ্যে একজন একটি রাজনৈতিক দলের এক নেতার সঙ্গে শহরের একটি পাঁচতারা হোটেলে যে গোপন বৈঠক করেছে, সেই সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করছে রাজ্য পুলিশ ।
এ দিন সুপ্রতিম সরকার বলেন, ‘‘পুলিশের অনুমতি ছাড়া নবান্নের সামনে জমায়েত করা একেবারেই বেআইনি এবং নিষিদ্ধ । এক্ষেত্রে কলকাতা হাইকোর্টের তরফ থেকেও স্পষ্টভাবে নির্দেশ দেওয়া রয়েছে । কিন্তু তাও সংগঠনের তরফ থেকে কথা বলা হয়নি ।’’
তিনি আরও জানান, এছাড়াও সর্বভারতীয় পরীক্ষা রয়েছে মঙ্গলবার । বেশ কিছু ছাত্র-ছাত্রী তারা বছরের পর বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে পরীক্ষা দিতে যাবে, আর সেই ক্ষেত্রে কীভাবে একটি ছাত্র সংগঠন নবান্ন অভিযানের মতো অভিযানের ডাক দিতে পারল সেটাও চিন্তার বিষয় ।
অন্যদিকে ওই সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্য় পুলিশের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) মনোজ ভার্মা বলেন, ‘‘জায়গায় জায়গায় উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা রয়েছে ৷ পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে পুলিশকর্মীরা বিভিন্ন জায়গায় মোতায়েন থাকবে ।’’
যদিও আগে থেকেই পুলিশের তরফে নবান্ন অভিযানের দিন পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে ৷ সেই নিরাপত্তা কলকাতায় যেমন করা হচ্ছে, তেমনই জেলাগুলিতেও করা হচ্ছে ৷ তাছাড়া ওই দিন ইউজিসি-নেট পরীক্ষা রয়েছে, সেই নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ ৷ কোনও পরীক্ষার্থী অসুবিধায় পড়লে, যাতে দ্রুত সাহায্য করা যায়, সেটাও নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে পুলিশের তরফে ৷
পরে বিকেলে এই নিয়ে আবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার ও এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) মনোজ ভার্মা ৷ তাঁদের সঙ্গে হাওড়া সিটি পুলিশের কমিশনার প্রবীণ ত্রিপাঠি । সেখানে সুপ্রতিম সরকার বলেন, ‘‘সকালেই জানিয়েছিলাম যে সংগঠনের তরফ থেকে নবান্ন অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছে, সেই সংগঠনের একজন ছাত্র তিনি শহরের একটি বিলাসবহুল হোটেলে একজন রাজনৈতিক ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠক করেছেন । তাঁকে বেলা 12 টা 25 মিনিটে ওই হোটেলে ঢুকতে দেখা যায় ।’’
এই বিষয়ে সুপ্রতিম সরকার আরও বলেন, ‘‘ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী ভারতের যেকোনও নাগরিক যেকোন প্রান্তে যখন খুশি যেতে পারেন । কিন্তু আচমকা এই নবান্ন অভিযানের আগের দিন কেন ছাত্রটি রাজনৈতিক দলের নেতার সঙ্গে শহরের বিলাসবহুল হোটেলে দেখা করলেন । এই বিষয়টি আমার সমাপতন হল না । এই বিষয়ে আমরা আরও অনেক অতিরিক্ত তথ্য পেয়েছি ।’’
এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) আরও বলেন, ‘‘খানিকক্ষণ আগে ওই সংগঠনের তরফ থেকে একটি মেইল আমরা পেয়েছি । তবে সংশ্লিষ্ট মেলে কোনও অনুমতি চাওয়া হয়নি । যেটা কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ আছে । সংশ্লিষ্ট মেলে শুধুমাত্র তারা তাদের অনুষ্ঠান তারা করছেন বলে জানিয়েছেন । যেহেতু কোনোরকমের নিয়ম-কানুন না মেনেই বিষয়টি করেছেন, ফলে আমরা আগামিকাল সময়সূচি বাতিল করলাম ।’’
তিনি আরও জানান, অন্য একটি সংগঠনের তরফ থেকে আমাদের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছিল, তবে যেহেতু আগামিকাল সর্বভারতীয় পরীক্ষা রয়েছে । ফলে অনুমতি দেওয়া হলে রাস্তায় ট্রাফিকের সমস্যা হবে এবং পরীক্ষার্থীরা সমস্যায় পড়বেন ৷