কলকাতা, 4 জুলাই: নিট ও নেট-এর প্রশ্নফাঁস, অনিয়ম এবং রাজ্যের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির প্রতিবাদে আজ ছাত্র ধর্মঘট পালন করছে বাম ছাত্র সংগঠনগুলি । দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মতো এরাজ্যেও সকাল থেকেই তার আংশিক প্রভাব পড়েছে । কোথাও চলেছে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ, কোথাও চলছে স্লোগান ৷ এদিকে, কোচবিহারে ধর্মঘটী এসএফআই সমর্থকরা তৃণমূল আশ্রিয় গুন্ডাবাহিনীর হাতে আক্রান্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে ৷
আজ সকাল সাড়ে দশটায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখায় এসএফআই ৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের 4 নম্বর গেটের সামনে চলে স্লোগান । প্রেসিডেন্সি ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনেও বিক্ষোভে সামিল এসএফআই সমর্থিত ছাত্ররা ।
অন্যদিকে, কোচবিহার জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ধর্মঘটের সমর্থনে পিকেটিং চলে । কোচবিহার শহরের জেনকিংস স্কুলে পিকেটিং চলাকালীন তৃণমূলের গুণ্ডাবাহিনীর হাতে এসএফআই কর্মী-সমর্থকরা আক্রান্ত হন বলে অভিযোগ । কোচবিহার জেলা কমিটির সদস্য অঙ্কন করঞ্জাই ও জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জিত কুমার পাল, মেহেবুব দেওয়ানহাট হাইস্কুলের সামনে আক্রান্ত হন ।
ছাত্র ধর্মঘটে কোথায় কী বিক্ষোভ কর্মসূচি ?
★ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে - বেলা 2টো
★ যাদবপুর 8বি মোড় - বিকেল 3:30টে
★ সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজের সামনে - বেলা 1:30টা
★ শ্রীরামপুর বটতলা মোড় - বিকেল 3টে
★ সোনারপুর বোসপুকুর কলেজ মোড় - বিকেল 3টে
★ উলুবেড়িয়া - সকাল 10:30টা
★ কল্যাণী আইটিআই মোড় - বিকেল 4:30টে
★ বর্ধমান সদরে দুপুরে একাধিক জায়গায় বিক্ষোভ
★ মেদিনীপুর টাউনে একাধিক জায়গায় বিক্ষোভ দুপুর থেকে
★ বিশ্বভারতী অ্যাডমিন ব্লক - সকাল থেকে বিক্ষোভ
★ শিলিগুড়িতে বয়েজ স্কুলের সামনে - সকাল 10:30টায়
★ ময়নাগুড়ি, জলপাইগুড়ি সদর - সকাল 10টায়
★ কোচবিহার হরীশপাল চৌপথি - বিকেল 4টে
এছাড়াও সমস্ত জেলায় ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে পিকেটিং চলছে সকাল থেকে । এনটিএ বাতিল ও শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি-সহ মোট 7 দফা দাবি রয়েছে ধর্মঘটীদের । এই ধর্মঘটকে সমর্থন করতে আগেই আহ্বান জানিয়েছিল এসএফআই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি । একইসঙ্গে, রাজ্যের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘটের বিষয়ে চিঠি পাঠানো হয় ।
এসএফআই রাজ্য সম্পাদক দেবাঞ্জন দে বলেন, "দেশের ছাত্র সমাজের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে চৌঠা জুন জাতীয় স্তরে বামপন্থী প্রগতিশীল এবং ধর্মনিরপেক্ষ ছাত্র সংগঠনগুলি ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে । এসএফআই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির উদ্যোগে রাজ্যের সমস্ত স্কুল, কলেজ মাদ্রাসাতে চিঠি পাঠানো হয়েছে । যাতে আজ পঠন পাঠন বন্ধ রাখা হয় । এছাড়াও সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষকে আমরা এই ধর্মঘটে সামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছি । তাঁরাও সামিল হয়েছেন ।"
এই ধর্মঘটকে সমর্থন করেছে রাজ্যের কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনগুলির পক্ষে সিটু, এআইটিইউসি, টিইউসিই,ইউটিইউসি । সিটু পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির তরফে অনাদি সাহু বলেন, "ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যতের সুরক্ষা ও দুর্নীতিমুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা করার দাবিতেই এই ধর্মঘট । গত কয়েক বছর ধরে নিয়ম করেই আমাদের রাজ্যে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস হচ্ছে । এবছর দেশজুড়ে ডাক্তারি পড়ার এন্ট্রান্স পরীক্ষা নেট-এর প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে । একটি বেসরকারি সংস্থা এনটিএ-র দায়িত্ব ছিল এই পরীক্ষা গ্রহণের । এনটিএ-র পুরো ব্যবস্থাটার মধ্যেই ব্যাপক অস্বচ্ছতা আছে ।"
এসএফআই সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাস বলেন,"প্রথমত, নিট-ইউজি ফলাফলে স্বচ্ছতার সমস্যা এবং পেপার ফাঁসের অভিযোগে বিপর্যস্ত হয়েছে । এর পরে, ইউজিসি নেট, যেটিতে লক্ষাধিক শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিলেন, অসঙ্গতি এবং পেপার ফাঁসের রিপোর্টের কারণে সেই পরীক্ষা বাতিল করা হয় । এছাড়াও সিএসআইআর নেট স্থগিত করেছে। এই বিলম্ব এনটিএ-র নিজস্ব কার্যকারিতা এবং অস্তিত্বের প্রতি বিশ্বাসের ক্রমবর্ধমান অভাবকে তুলে ধরে ।"
তিনি আরও বলেন, "ন্যাশনাল বোর্ড অফ এক্সামিনেশন ফর মেডিক্যাল সায়েন্সেস, যা সরাসরি স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অধীন, তারা পেপার ফাঁস এবং অনিয়মের অভিযোগে শেষ মুহূর্তে নিট-পিজি প্রবেশিকা পরীক্ষা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৷ বছরের পর বছর ধরে, সারা দেশে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে কীভাবে সিইউইটি, নিট-এর মতো কেন্দ্রীভূত পরীক্ষাগুলি শিক্ষার ক্রমবর্ধমান বেসরকারিকরণকে উৎসাহিত করেছে । কোচিং সেন্টারের সংস্কৃতির প্রজনন করেছে । যা প্রান্তিক ছাত্রদের জন্য শিক্ষাকে দুর্গম এবং অসহনীয় করে তুলেছে । 'ওয়ান নেশন, ওয়ান এক্সাম'-এর আড়ালে পুরো পরীক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে এবং শিক্ষার্থীদের অ্যাকাডেমিক ভবিষ্যৎ অনির্দিষ্টকালের জন্য ঝুঁকির মুখে ফেলেছে । শিক্ষা মন্ত্রককে এজন্য জবাবদিহি করতে হবে ।"