পশ্চিম মেদিনীপুর, 29 ডিসেম্বর: মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের বিপরীতে সরকারি ডরমেটরিতে ঝাঁ-চকচকে নার্সিংহোম ! আর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে মেদিনীপুর সদর তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ! সোশাল মিডিয়ায় পুরসভার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন তৃণমূল কাউন্সিলর তথা দলের সদর সভাপতি ৷
মেদিনীপুর সদরের তৃণমূল সভাপতি বিশ্বনাথ পাণ্ডব সোশাল মিডিয়ায় একাধিক পোস্ট করেছেন ৷ সেখানে তিনি লিখেছেন, "মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন ৷ সেখানে কত মানুষ সেবা পাচ্ছেন ৷ তার বিপরীতে পুরসভার জায়গায় নার্সিংহোম ৷ কী বলবেন ?" তিনি অভিযোগ করেছেন, পুরসভার এই সিদ্ধান্ত আসলে সরকারি হাসপাতালের পরিষেবা ও তার উপর সাধারণ মানুষের আস্থায় প্রশ্নচিহ্ন লাগিয়ে দেওয়া ৷
ক্যামেরার সামনে না-এলেও তিনি বলেন, "আমাদের পুরসভায় সিদ্ধান্ত এক হয়, আর রেজোলিউশনে লেখা হয় আরেক ৷ ওসব আলোচনার কথা বলে লাভ নেই ৷ শহরে একাধিক নার্সিংহোম থাকতেই পারে ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্ন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, যেখানে মানুষ সমস্ত রকমের পরিষেবা বিনা পয়সায় পান ৷ তার বিপরীতে পুরসভার ভবনে নার্সিংহোম ৷ এটা কি সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর অনাস্থা প্রকাশ নয় ! আমার মনে হয়েছে এটা ঠিক হয়নি, তাই আমি পোস্ট করেছি ৷"
উল্লেখ্য, মেদিনীপুরের বিধায়ক তথা মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুজয় হাজরার ঘনিষ্ঠ নেতা হিসেবে পরিচিত বিশ্বনাথ পাণ্ডব ৷ তাঁর এই পোস্ট ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছে ৷ তৃণমূল পরিচালিত মেদিনীপুর পুরসভার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তাঁর পোস্ট ৷ যার চেয়ারম্যান সৌমেন খান ৷ তৃণমূলের একাংশের দাবি, এই বিরোধিতা আদতে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধেই ৷
যদিও এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি সুজয় হাজরা ৷ তিনি বলেন, "পুরসভার বিষয়ে আমি কোনও দিন ঢুকিনি ৷ কী সিদ্ধান্ত হয়েছে তা-ও জানি না ৷ কেউ কারও অনুগত হয় না ৷ শহর সভাপতি সোশাল মিডিয়ায় কী, কেন পোস্ট করেছেন, তা-ও জানি না ৷ পুরো বিষয়টি খোঁজ নিয়ে তবেই বলতে পারব ৷"
আর অভিযোগের নিশানায় থাকা মেদিনীপুর পুরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন খান বলেন, "এই পোস্ট কেন উনি করছেন, সে বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না ৷ তবে পুরসভার ডরমেটরি প্রয়াত প্রাক্তন চেয়ারম্যান প্রণব বসুর আমল থেকে ভাড়া দেওয়া হচ্ছে ৷ এর আগে দু’টি সংস্থা চালাচ্ছিল ওই ডরমেটরি ৷ আগের অনেক টাকা বকেয়া ছিল ৷ আগের সংস্থা সেই টাকা মিটিয়ে দেওয়ার পর, নতুন একটি সংস্থাকে নার্সিংহোমের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়েছে ৷ এখন মাসে 60 হাজার টাকা চুক্তিতে দেওয়া হয়েছে ৷ নতুন চুক্তিতে তা দ্বিগুণ হবে ৷"
আর এ নিয়ে বিরোধী বিজেপির মেদিনীপুরের মুখপাত্র অরুপ দাস বলেন, "পুরসভা নাগরিক পরিষেবা দেওয়া অনেক দূর, রাস্তাঘাট, নিকাশি ব্যবস্থা, যানজটের বিষয় না-দেখে, পুরসভার সম্পত্তি বিক্রি করছে ৷ ভাড়া দিয়ে রোজগারই মূল লক্ষ্য ৷ না-হলে একটা সরকারি ডরমেটরি কীভাবে বেসরকারি সংস্থার নার্সিংহোমের জন্য ভাড়া দেয় শাসকদল ৷ খোদ তৃণমূলের কাউন্সিলর প্রশ্ন তুলেছেন ৷ এটা বড় লজ্জার ব্যাপার ৷"