কলকাতা, 16 ফেব্রুয়ারি: খাস কলকাতায় বেঙ্গল এসটিএফ-এর বিশেষ সাফল্য! বিবাদীবাগ দোকানের শাটার খুলিয়ে সেখান থেকে বিপুল পরিমাণে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করলেন রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দারা। উদ্ধার হয়েছে 190 রাউন্ড গুলি। তদন্তকারীদের অনুমান, এই কার্তুজগুলি অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরিতে তৈরি।
বিবাদী বাগের যেই অস্ত্রের দোকান থেকে এই অস্ত্রগুলি উদ্ধার হয়েছে, সেই দোকানটির বৈধ কাগজপত্র রয়েছে ৷ এটি কলকাতার একটি নামী অস্ত্র ও কার্তুজ বিপণনকারী দোকান। কিন্তু, বৈধ কাগজপত্র থাকা এই দোকানে কীভাবে একাধিক বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র এসে পৌঁছালো সেই বিষয়টি এখনো স্পষ্ট হয়নি।
ইতিমধ্যেই ওই দোকানের কর্মচারী-সহ মোট চারজনকে গ্রেফতার করেছেন রাজ্য পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স-এর গোয়েন্দারা। ভবানী ভবন সূত্রের খবর, উদ্ধার হওয়া এই বেআইনি কার্তুজ ও আগ্নেয়াস্ত্রগুলি সাম্প্রতিককালে রাজ্যে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন শুট আউটের ঘটনায় ব্যবহার হয়েছে।
এই বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজ্য পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স-এর এক উচ্চ পদস্থ আধিকারিক বলেন, "আমরা গোপন সূত্রে বিবাদীবাগ এলাকার একটি দোকানের সন্ধান পাই এবং সেখানে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে এই বিপুল আগ্নেয়াস্ত্র এবং 190 রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।"
গত বৃহস্পতিবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার বজবজে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে গুলির লড়াই হয়। এই ঘটনায় রীতিমতো প্রশ্নের মুখে পড়েছে রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা দফতর। অনেকেরই প্রশ্ন, রাজ্যে এই বিপুল পরিমাণে আগ্নেয়াস্ত্র আসছে কোথা থেকে? সেই ঘটনার পরেই কলকাতার বিবাদীবাগ-এর একটি একটি নামী আগ্নেয়াস্ত্র ও কার্তুজ বিপণনকারী দোকান থেকে উদ্ধার হল বিপুল পরিমাণ অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র এবং 190 রাউন্ড কার্তুজ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দক্ষিণ 24 পরগনার জীবনতলা থানার ইশ্বরীপুর এলাকায় অভিযান চালায় রাজ্য পুলিশের এসটিএফের বিশেষ টিম। তদন্তকারীরা শুক্রবার রাতে হাজি রশিদ মোল্লার বাড়িতে হানা দেন। বাড়ির ভিতর অভিযান চালাতেই বেরিয়ে পড়ে ওই বিপুল পরিমাণ কার্তুজ। বাড়ির মালিক-সহ আরও তিন ব্যক্তিকে ঘটনাস্থল থেকেই গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার হওয়া বাকিরা হলেন, হাসনাবাদের বাসিন্দা বছর চল্লিশের আশিক ইকবাল গাজি, পঁয়তাল্লিশ বছরের আবদুল সেলিম গাজি ও শান্তিপুরের জয়ন্ত দত্ত। ধৃত জয়ন্ত দত্ত আবার বিবাদী বাগের লাইসেন্সপ্রাপ্ত অস্ত্র বিপণিতে কর্মরত।
তদন্তকারীদের সন্দেহ, অর্থের বিনিময়ে ওই দোকান থেকে অস্ত্র পাচার করত জয়ন্ত দত্ত। শনিবার ওই বিপণিতে হানা দেয় পুলিশ। অভিযান চালিয়ে দোকানের রেজিস্টার বাজেয়াপ্ত করা হয়। সূত্রের দাবি, বিবাদী বাগের এই দোকান থেকেই দুষ্কৃতীদের হাতে পৌঁছে যেত কার্তুজ। দোকানের কর্মচারী জয়ন্ত মারফত আশিক ইকবাল গাজি, হাজি রশিদ মোল্লা, আবদুল সেলিম গাজির মতো মিডলম্যানদের কাছে কার্তুজ বিক্রি হয়েছে। জেরায় জানা গিয়েছে, এই বিপণির কার্তুজ 'ডেমো' হিসেবে ব্যবহার করে বেআইনি অস্ত্র তৈরি হয়। আবার মুঙ্গের ও ভাগলপুর থেকে আনা বেআইনি অস্ত্রেও এই কার্তুজ ব্যবহার হতো।
তবে লাইন্সেসধারী অস্ত্র বিপণি বা উৎপাদক সংস্থা থেকে আগ্নেয়াস্ত্র পাচার নতুন নয়। এর আগে ইছাপুরের রাইফেল ফ্যাক্টরি থেকে আগ্নেয়াস্ত্রের প্রচুর যন্ত্রাংশ পাচারের খবর সামনে আসে। সামান্য খুঁত থাকায় যে যন্ত্রাংশগুলি সেনার রাইফেল তৈরিতে ব্যবহার করা যেত না, সেগুলি হাতবদল হয়ে চলে যেত অস্ত্র কারবারিদের কাছে। পরে ওই অংশগুলিকে ঘষে-মেজে বেআইনি ভাবে অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহার করা হতো। এক্ষেত্রেও বিবাদী বাগের লাইসেন্সড বিপণি থেকে কার্তুজ পাচার হয়েছে বলেই সন্দেহ তদন্তকারীদের।